top of page
Search

অক্ষয় সংখ্যা ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সুদীপ ঘোষাল

অজয়পাড়ের উপকথা


সুদীপ ঘোষাল


অষ্টম পর্ব



ছোট থেকে কাকুকে আমরা তুমি সম্বাধনে অভ্যস্ত ছিলাম। কাকু বলতেন, আপনি আপনি বলবি না। কেমন পর পর মনে হয় রে। তোরা আমাকে তুমি বলেই সম্বোধন করবি।



আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইতিহাস নিয়েও কি তোমাদের কাজ হয় কাকু?

কাকু বলেন, ঐতিহাসিক পটের উপজীব্য যা এর নাম থেকেই প্রকাশিত তা হল ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। যেমন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, আণবিক বোমাবর্ষণ,ক্ষুদিরামের বিদায়। বাঘাযতীনের জাহাজ প্রভৃতি।

কাকু আরও বলেন, জমিন তৈরির পর অঙ্কনকাজ শুরু হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশজ রঙের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য; যেমন: ইটের গুঁড়া, কাজল, লাল সিঁদুর, সাদা খড়ি, আলতা, কাঠ-কয়লা ইত্যাদি। পটটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে কাজ করা হয় এবং রংয়ের প্রকারের মধ্যে লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী, বাদামী, সাদা এবং কালো ব্যবহৃত হয়।

কাকুকে আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তোমাদের শুরুর ইতিহাস তুমি জানো কি?

কাকু বলেন, আমাদের কোন চাষের জমি নাই। আড়াই হাজার বছর আগে থেকে বংশ পরম্পরায় আমরা এই শিল্পে যুক্ত।পটুয়ারা কেবল চিত্রশিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার ও সুরকার। সাধারণত পারলৌকিক ও ধর্মীয়ভাব মিশ্রিত বিষয় নিয়ে পট নির্মিত হলেও পটুয়ারা বিষয় নির্বাচনে রক্ষণশীল ছিলেন না। কর্মে ও চেতনায় তারা ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, বলা যেতে পারে ধর্মনিরপেক্ষ। সমাজের নানা অন্যায় অবিচার পটুয়াদের পটে চিত্রিত হয়েছে দ্রোহের হাতিয়ার হিসেবে। গ্রাম-বাংলার হাট-বাজার, পথে-ঘাটে বিভিন্ন লোকালয়ে পট দেখিয়ে গান গেয়ে, গল্প বলে তারা মানুষকে জ্ঞান ও আনন্দ বিলাতেন, বিনিময়ে জীবনধারনের মতো অর্থ উপার্জন করতেন। সে-কারণে তাঁদের বলা হত ভবঘুরে চিত্রকর। তাঁদের নীতিজ্ঞান ছিল উঁচু পর্যায়ের। সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায়ে রাখতে পটশিল্পীরা ছিলেন সদা সচেষ্ট, যার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁদের ছবি ও গানে। পটুয়ারা কেবল লোকরঞ্জকই ছিলেন না, ছিলেন লোকশিক্ষকও।



পটুয়াপাড়ার আকাশে বাতাসে এক ধর্মীয় চেতনা সদা জাগ্রত। তারা এখনও বিশ্বাস করেন, ভগবান আছেন। তিনি অন্যায় মার্জনা করেন না, জাতিভেদ বা বর্ণভেদ করলে মানুষকে শাস্তি দেন। মৃত্যুর পর মানুষের অন্যায়ের বিচার করা হয় কিভাবে তার চিত্র পটশিল্পীরা এওনও আঁকেন। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরেও আর একটি জীবন আছে। তাই বেঁচে থাকতে জীবনে দান, ধ্যান,দয়া,ধর্ম করা উচিত।

জীবনটা ঠিক ছবির মত। মনখেয়ালের তুলিতে রাঙানো যায় জীবনের ক্যানভাস। ইংরাজী ১৯২০ সাল।বৃটিশদের বিরুদ্ধেলড়াই চলছে জোর কদমে।তখনকার সময়ে রায় পরিবারের সুমনের জীবনের ঘটনা।সুমন যাত্রাদলে বাঁশি বাজায়।আর গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করে নানারকমভাবে। ঠিক একশো বছর আগে রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো ভারতেও কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল।গত শতাব্দীতে ভারতের বামপন্থী রাজনীতিও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গেছে, আর তাতে অক্টোবর বিপ্লব তথা সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল আগাগোড়াই।রুশ বিপ্লবের নায়ক ভ্লাদিমির লেনিন বা তার উত্তরসূরী স্তালিন একটা পর্বে ভারতের কমিউনিস্টদের প্রবলভাবে আলোড়িত করেছেন, কিন্তু পরে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব বা মাও জে দংয়ের আবেদনই যে ভারতের বামপন্থীদের কাছে বড় হয়ে ওঠে তাতেও বোধহয় কোনও ভুল নেই।কিন্তু ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে একশো বছর আগেকার সেই অক্টোবর বিপ্লব ঠিক কীভাবে ছায়া ফেলেছে?বিশ্ব জুড়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনের একটা মূল কথাই হল আন্তর্জাতিক সংহতি বা সলিডারিটি। সুদূর রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়েই যে এদেশে কমিউনিজমের বীজ রোপিত হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোনও দ্বিমত নেই। পাঁচ ছেলের পরে আবার পুত্রসন্তান হয়েছে রায় পরিবারে।খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে।কোনো লোকের যাতে নজর না লাগে তাই নাম রাখা হলো কালো। সুমনবাবু খুব খুশি।সুমনবাবুর বোন সুমিতাও খুব খুশি।সুমনবাবু খুব ভালো বাঁশি বাজান।যাত্রাদলে রাতের পর রাত তাকে বাঁশি বাজাতে হয়।আড় বাঁশি।তাই বেশির ভাগ রাতে তিনি বাড়ি ছেড়ে থাকেন।যাত্রাদলের মেয়ে রূপসী সুমনকে ভালোবাসে।সুমন সুদর্শন।ভালো চিত্রশিল্পী।সুমনরা দুই ভাই।বিমল তার ছোটো ভাই।সুমনের বৌ খেনী আর বিমলর বৌ কুড়ো।একদিন খেনী,কুড়ো আর বিমল গঙ্গায় স্নান করতে গেলো।বিমল সাঁতার জানে না।তাই কুড়ো বললো,বেশিদূর যাবে না। ভয় লাগে।



----ঠিক আছে যাব না।

কিন্তু জোয়ারের টানে ভেসে গেলো কুড়োর সিঁদুর।বিমলকে খুঁজে পেলো না কেউ।তারপর কুড়োর সুন্দর চুলের বেণী কেটে ঝুলিয়ে রাখা হলো বাড়ির মাচায়।কুড়ো বাল্যবিধবা হলো।চিরজীবন বয়ে বেড়াবে কয়েক দিনের বিয়ের জীবনের স্মৃতি।খেনীর ছেলে কালো।খেনী নিজেওযেমন সুন্দরী আবার ছেলেটিও তাই।মহিলামহলে খেনীর রূপের খুব সমাদ। সুমন বাড়ি এলে বলে,তো মাকে আর বাঁশি বাজা তে হবে না।জমি জায়গা দেখাশোনা করার পর আমাদের আর কোন অভাব থাকবে না ।

সুমন বললো,দেখো আমি শিল্পী মানুষ।জমি জায়গা নিয়ে আমি থাকতে পারবো না।

----পারবো না বললে হবে না। ছেলে মানুষ করতে হবে।জমি বেদখল হয়ে যাবে।


----আমাকে বোঝার চেষ্টা করো দয়া করে।আমি শিল্পী মানুষ।আমি বাঁশি ছাড়া মৃত।আমাকে রেহাই দাও।

( ক্রমশ ... )



আগের পর্বঃ-



 
 
 

Comentários


Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page