অণুগল্প
অন্ধকার
চুনীলাল দেবনাথ
সুনন্দ বাবু জানালার ধারে বসে মেঘে ঢাকা আকাশটাকে দেখছে।আজ সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে।চারিদিকে যেন আঁধার নেমে এসেছে। চাকরি থেকে করোনা কালে অবসর নেওয়ার ফলে তিনি আজকাল তেমন বাইরে যান না । আজকের এই আঁধার পরিবেশ যেন তার জীবন আঁধারের কথা তাকে বারে বারে মনে করিয়ে দিচ্ছে। আজকের এই দম বন্ধ পরিস্থিতিতে তার জীবনের শেষ দিনগুলো যেন সন্ধ্যা তারার মতো তার মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে। তারা যেন তাকে হাজারো প্রশ্ন করছে । তার মৃত্যু ও পরবর্তী জীবন কেমন হবে এনিয়ে যেন তার একটি চিন্তা । সুনন্দ বাবু যতো বয়স বাড়ছে, সে যেন আরো অবাস্তববাদী হয়ে পড়ছে । মৃত্যুর পরের জীবন কী হবে এই নিয়ে যেন তার এক মাথা ব্যাথা । মাঝে মাঝে তার ভয় হয় মৃত্যুর পরে যদি সে ভূত হয় কিংবা তার স্থান যদি নরকে হয়। ইদানিংকালে সুনন্দ বাবুর তার ঠাকুমার কথা খুব মনে পরে।ছোটো বেলায় তার ঠাকুমা তাকে বলেছিলো, ' তুই যদি পাপ কাজ করস, তাইলে তোরে মরনের পরে ভুগদো হইবো।, অবাক হয়ে ছোটো সুনন্দ ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, 'সেটা কেমন, ঠাকুমা।'
' হুন, বেশি পাপ করলে নরকের ভূত হইবি।আর নাইলে নরকে গিয়া তেলের ঘানি টানবি। '
সুনন্দ বাবুর এখন চিন্তা কর্মরত অবস্থায় অনেক অন্যায়,পাপ কাজ করেছেন । আফিসের বড়ো বাবু হওয়ার সুবাদে দুহাত ভরে ঘুষ নিয়ে আনেক অন্যায় কাজ করেছেন । সেই টাকা নিয়ে তিনি বাড়ি করেছেন,গাড়ি করেছেন আর অনেক ফুর্তি করেছেন। তার একমাত্র ছেলে অভিজিৎ সেও আজ অমানুষ।এই সেদিন বাবার কাছে এসে বললো, ' শোনো, আমার ছয় হাজার টাকা লাগবে ।'
সুনন্দ বাবু জিজ্ঞাসা করলো , ' টাকা দিয়ে কি করবি?'
' বন্ধুদের নিয়ে দীঘায় ঘুরতে যাবো ।' চোখ গরম করে ছেলে তাকে বললো।
'কিন্ত ' সুনন্দ বাবা আমতা আমতা করে বললেন।
' কিন্ত টিন্তু বুঝি না ।কাল সকালে আমার টাকাটা লাগবে, ব্যস ।' এই কথা বলে ছেলে মোটর সাইকেল নিয়ে বাইরে চলে গেল।
সুনন্দ বাবুর ছেলেকে কিছু বলার উপায় নেই । মা মরা ছেলেকে বেশি আদর দিয়ে বাঁদর তৈরী করেছেন ।এখন আউট অফ কন্ট্রোল। আজ তার এই ঘুষের কথা অফিসের কেউ হয়তো জানে না , কিন্ত পাপ কর্ম তার অন্তর আত্মাকে কুরে কুরে খাচ্ছে । তিনি এখন মনে মনে ভাবছেন , ' এটাই হয়তো নরক যেখানে আমি আমর পাপের শাস্তি পাচ্ছি ।' আজ আর মনের শান্তি খুঁজে পায় না ।শান্তি যেন তার কাছে এক স্বপ্ন । আজ তার চারিদিকে যেন ভূতের আঁধার ।
Comments