অনুবাদ সাহিত্যে তাপস গুপ্ত - ৩
- agantukpotrika
- Jul 16, 2021
- 4 min read

ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি কবিতার অনুবাদ এবং অনুবাদ সংক্রান্ত দু চার কথা:--
পর্ব: ৩
এই হালের,২০১৫ য় নির্মিত একটি ওয়েব সিরিজ " ট্রু ডিটেকটিভ" এর সেকেন্ড সিরিজের সাত নম্বর এপিসোডের শেষের দিকে কলিন ফ্যারেল(চরিত্রে ডিটেকটিভ velcor) ও তার সহযোগী রাচেল ম্যাকঅ্যাডামস ( ডিটেকটিভ অ্যানি) এক আবেগঘন আবহে কথোপকথন চালাতে থাকে এইভাবে:
Velcor-- ডু ইউ মিস ইট?
Ani-- হোয়াট?
Velcor--- এনিথিং
যাঁরা এপিসোড টি দেখেছেন তাঁরা জানেন " ইট"
এবং "এনিথিং" শব্দের আড়ালে প্রচ্ছন্ন সেক্সনগ্ন প্রকাশ সৌন্দর্যে র আধারে নিজেকে উন্মীলিত করতে চাইছে।
আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রাবন্ধিকও বলেন:
".... মনে রাখতে হবে যে sex এবং heard instinct যতদিন instinct ছিল ততদিন তারা সাহিত্যের উপাদান হয়ে উঠতে পারে নি, ততদিন সত্যিকার সাহিত্য বা যে কোনো প্রকার শিল্পকলা জন্মাতেই পারে নি।"
শিলীন্দ্র পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে মনীন্দ্র গুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন:
একজন দোয়েল কবে গান গাইতে শুরু করেছিল? একজন উদবেরাল কবে সাঁতার কাটতে শুরু করল? একজন মৌমাছি কবে কেমন করে চাক বাঁধতে শিখল?এসব প্রশ্নের উত্তর কি তারা দিতে পারবে? মনে পড়ে চেতনা জাগার পর থেকেই নির্সগ আমাকে দারুন মুগ্ধ করত। নির্সগের সৌন্দর্য আমি অনুভব করতে পারতাম- মন কেমন করত- মন আঁকুবাঁকু করত। সেই পলায়মান সৌন্দর্যকে আমি মন দিয়ে ধরে রাখতে চাইতাম। অপরিচিত অর্ধপরিচিত যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মুখ ও আকৃতি আমি বিস্ময়ের সঙ্গে নিরীক্ষন করতাম। তাদের ঐ বাইরের খোলস, নড়াচড়ার ভঙ্গি দেখে দেখে ক্রমশ আভাস পেতাম তাদের জীবনের, রহস্যের। ক্রমশ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম, মৃত্যু, সময়, মহাকাশ নিয়ে নানা দার্শনিক চিন্তা মাথায় ঢুকল। এই সময় আমার মনে হত , আমি হয়ত চিত্রকর এবং ভাবুক। একসময় আর পাঁচটা ছেলের মতো লিবিডো আমার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠল। হতে পারে, তারই তাড়নায় আমার কবিতায় মনোনিবেশ। অন্তত আমার প্রথম বই ‘ আমরা তিনজন’ সেই কথাই বলে। তারপর একদিন লিবিডো আমাকে দংশন করল। বিষ টেনে নেবার জন্য এই সময় কবিতাই বিষপাথরের কাজ করেছিল। ক্রমে কবিতাই আমার পরম আশ্রয় হল।“.....
অর্থাৎ লিবিডোর দংশন আর তার থেকে বিষ টেনে কবিতাই হয়ে ওঠে আশ্রয়। স্টর্নি র ক্ষেত্রেও তাই। শুধু স্টর্নি কেন, পরে আমরা উরুগুয়ান কবি ডেলমিরা আগুইস্টিনি র কবিতাতেও দেখব লিবিডোর দংশন বিষই কবিতার আশ্রয় আধারে পঙ্কজ হয়ে ফুটেছে। কবির এই কবিতা পাঠের পর পুনরায় আলোচনায় ফিরে আসা যাবে ,ভাষান্তরিত কবিতাটির নাম দিয়েছি " হে কামদেবতা"
To Eros (To Eros)
I caught you by the neck
on the shore of the sea, while you shot
arrows from your quiver to wound me
and on the ground I saw your flowered crown.
I disemboweled your stomach like a doll's
and examined your deceitful wheels,
and deeply hidden in your golden pulleys
I found a trapdoor that said: sex.
On the beach I held you, now a sad heap,
up to the sun, accomplice of your deeds,
before a chorus of frightened sirens.
Your deceitful godmother, the moon
was climbing through the crest of the dawn,
and I threw you into the mouth of the waves
হে, কামদেতা (To Eros)
যখন তোমার ক্ষেপণ তীক্ষ্ম তূণীর বাণে
আঘাতে শরীর বিবশ প্রায়,
তখনই টুঁটি ধরে ছুঁড়ে দেব সৈকত বালুকায়।
হে প্রেমের দেবতা, মাটিতে লুটাবে তোমার
কামনা ভগ্ন শিরস্ত্রাণে।
আমি দেখবো তোমার নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে,
অতল মনের গভীর অভিপ্রায় ,কপিকলে টেনে তুলে পাব খুঁজে প্রবঞ্চক তোমার যৌনতা খোদিত তলস্থ দরজায় ।
সমুদ্র কিনারে আধৃত তুমি, দলা পাকানো বালুকাভূমি,
নত মস্তকে
শঠতায় সূর্যমুখী, বুড়ি চাঁদ হামা টেনে নিজেকে লুকায়
কলঙ্কে দোসর তোমার, রক্তিম ঊষায় নিজেকে পোড়াতে চায়, সংকেত বাঁশি আজ বাজে শুধু হতাশায়, চূর্ণ হবে তুমি দানবীয় তরঙ্গের তীব্রতায়।
এখানে কামদেবতা যেন পুরুষ শাসিত সমাজের প্রতীক হয়ে উঠেছে। লিবিডো ঐতিহ্যের ট্যাবু ফুৎকারে উড়িয়ে কবিতায় তার আর্গল মুক্ত সুচারু শৈলীর প্রকাশ স্টর্নির কবিতায় যেমন লক্ষনীয়, তেমনি যৌনতার রক্ষণশীলতার অচলায়তন কে ভেঙে গুঁড়িয়ে পুরুষ শাসিত ল্যাটিন সাহিত্যে Avan garde আন্দোলনের পুরোধা হয়ে ওঠা তার অন্তঃস্থ আগ্নেয়গিরি স্রোতকে কিছুটা হলেও স্তিমিত শীতল করে।
স্টর্নির কবিতার সৃষ্টি মুলে লিবিডো ফ্যাক্টর হলেও সংশয়হীন ভাবে বলা যায় তা এক্স ফ্যাক্টর নয়।
১৯১৬ তে তাঁর প্রথম কবিতার বই " The Restless Rose Garden" আর দুবছর পর প্রকাশিত "The Sweet Injuri" তাঁকে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়, তিনি বেশ কিছু সরকারি পুরস্কারেও ভূষিত হন। কিন্তু প্রেমজনিত যৌনতায় তিনি ছিলেন অতৃপ্ত,বঞ্চিত। তাঁর জীবনে আসা পুরুষেরা ছিলেন জটিল এবং অসম্পূর্ণ। এই অসম্পূর্ণ সম্পর্কের রসায়ন, তার পরাজয় তার প্রদাহ আগুনঅক্ষরে ফুটে ওঠে তাঁর কবিতায়।এরকমই একটি কবিতা "What Would They Say? - " ভাষান্তর করেছি " কি বলবে তারা"----
What would the people say, reduced and empty,
If one fortuitous day, by some extreme fantasy,
I were to dye my hair silvery and violet, were to wear an old greek gown, exchanging the comb
for a circlet of flowers: forget-me-nots or jasmines,
were to sing through the streets to the rhythm of the violins,
or were to read my verses aloud, traveling the p
lazas
my gusto freed of common gags?
Would they go to watch me, covering the sidewalks?
Would they burn me like they burned enchantresses?
Would they ring the bells, calling to mass?
In truth, when I think of it, I laugh a little
<এবার কি বলবে তারা(what would they say)
কি বলবে তারা
কি বলবে তারা ভরশূন্য সূক্ষ্ম ইঙ্গিতে
যেদিন নিজেকে সাজাবো যতনে
চূড়ান্ত কিছু স্বপ্ন দেখার আপতিক দিনে
শরীর মুড়ে নেব গ্রীকদেশীয় গাউনে
নতুন চিরুনি ছোঁয়াবো রঙিন চুলে
খোঁপা থাকবে জড়ানো স্নিগ্ধ জুঁইফুলে।
অভিজাত চলনে মুগ্ধ আমি উষ্ণ যৌনতায়
নিশ্চিত বিদ্ধ হব তোমার ঈপ্সিত আকাঙ্ক্ষায়।
বেহালার লয়কারি গৎ, ভেসে আসে কোন দুরে
কবিতা রূপ পায় আমারই শব্দ সুরে ।
রূপের আগুনে স্বপ্ন কি পুড়ে যাবে ঠাট্টায়,
তুমি কি করবে অনুসরণ যৌন মুগ্ধতায়,
নাকি জাদুকরী রূপের মোহে ঢেকে যাবে
আমার ছায়ায় ভুলে ছলনায় জ্বালিয়ে দেবে
অথবা ঘন্টা বাজিয়ে জনতার উৎসবে এ শরীর লালসায় ভস্মীভূত হবে?
সত্য কেবল স্বপ্ন দ্যাখে দেয়ালায়
নিশ্চিত , প্রেম হেরে যায় ।
নিজেকে সাজিয়ে রাস্তায় বেরোনো আকর্ষণীয় হলেও তার পরিণতি যে ট্র্যাজিক হলেও হতে পারে , তারই এক শিল্পিত মিশেল এই কবিতা।
এই প্রেমহীন জীবন তাঁর কাছে শুধু অসহনীয় হয়ে উঠেছিল তাই নয় তাঁর স্বতন্ত্র স্বাধীন সত্তায় তা ছিল অপমানজনক, নিজের অস্তিত্বের কাছে হেরে যাওয়া। তাই
তাঁর কবিতার শব্দভাষ্যে ছিল প্রেমহীন যৌনতার মর্মন্তুদ হাহাকার ,এই হাহাকার কখনও কখনও ধারালো আক্রমণ অথচ তার প্রকাশ অদ্ভুত ভাবে মাত্রা বোধে সংবেদনশীল। ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়া র একটি ট্যাবলয়েড তাঁর সম্পর্কে যা লেখা হয় সেটি এখানে উল্লেখযোগ্য: "....Storni felt a strong need for heterosexual love, and she was able to express the tension and passion of these ambivalent feelings
in poetry both simple and deeply sensual, expressing an original note in erotic poetry in a sensitive manner."
আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে বুয়েনস আয়ার্সের ছোট্ট শহর মার দেল প্লাতায় তিনি নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর বন্ধু প্রেমিক উরুগুয়ে ন কবি হোরাসিও কুইরোগোর ১৯৩৭ সালে আকস্মিক আত্মহত্যা তাঁকে মানসিক ভাবে ধ্বংস করে দেয়।তার পরের বছর অক্টোবরের শেষের দিকে ভোরের সূর্য মেখে তিনি আটলান্টিকের তরঙ্গফেনায় নিজেকে মিশিয়ে দিলেন। মৃত্যু নয়, মুক্তো দানার মত সাদা সাদা ফেনায় তাঁর কবিতা পেল মুক্তি, তিনি যেন বললেন, " I am going to the sleep"... এবার ঘুমোতে চলি।
( ক্রমশ...)
Comments