চিরকুটের শব্দছক
অনিরুদ্ধ হোড়
ওরা নামেই প্রতিবেশী; সর্বক্ষণ ঝগড়া, ধর্মের নামে খোটা দেওয়া লেগেই থাকে তাদের। কেউ কাউকে এক চুলও ছাড়তে রাজি নয়, একবার আদিলদের পরিবার গর্জে উঠলে পরের মুহূর্তেই আবার আবিরের পরিবারের হম্বি-তম্বি সবার কানে যেন তালা লাগিয়ে দেয়... এতে অবশ্য মজার স্বাদ পেয়েছে অন্য প্রতিবেশীরা, ঝগড়াকালীন সময় বেশ একটা গমগম করে পাড়াটা কিন্তু, সবচাইতে ঝামেলায় এখন এই দুই প্রতিবেশীর কচিকাচারা। ওরা সবাই অন্তরঙ্গ বন্ধু তবে এই ধর্মের টানাপোড়েনে তাদের মেলামেশা বন্ধ। তবে, ওই শিশুদের মনে ধর্ম দাগ কাটতে পারেনি তাই তো সেই মুহূর্তে দুই পরিবারের কচিকাচারা মগ্ন কিভাবে ধর্মের দেয়াল ভেঙে শান্তি ফেরানো যায় এই ভাবনায়। তারই মাঝে এলো এক সুবর্ন-সুযোগ, সামনেই ঈদ সেদিন আবার অক্ষয় তৃতীয়া, তাই দুই পরিবারের বড়োরা সকলেই ব্যাস্ত উৎসবের আয়োজন, সেই ফাঁকে পুচকেদের কাজের অনেকটা সুবিধে হলো বৈকি।
যথারীতি উৎসবের আগের দিন লাগলো তুমুল ঝগড়া... এই মারপিট লাগলো বলে, সবাই ত্রাহি ত্রাহি রবে ছুটে এগিয়ে গেলো দুই শিক্ষিত মানুষের একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে হাতাহাতি করার থেকে বিরত রাখতে। সবার অলক্ষণেই দুই বাড়ির ছোটোরা চুপিসারে একে অন্যের বাড়িতে চিরকুট রেখে এলো... উৎসবের দিন খুব আশ্চর্জনকভাবে কেমন যেন এক হয়ে উঠলো এই দুই পরিবার. .
এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর, অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছে তারা, স্মৃতি রোমন্থনে বসে আদিলের ছেলে বলে,
- ভাই, ভাগ্গিশ তোদেরকে সেদিন ঈদের নেমতন্ন করে এসেছিলাম ওই চিরকুটের মাধ্যমে নাহলে আজ সবাই যে কোথায় থাকতাম কে জানে!
আবিরের ছেলে একগাল হেসে বলে,
- সত্যিই তাই আর আমি অক্ষয় তৃতীয়ার নেমন্তন্ন করে এসেছিলাম বলে তো বিরিয়ানির সাথে জমিয়ে খাওয়া গেছিল মিষ্টিগুলো...
উফফফ দারুন ভাই,
স্বর্গে তখন বুঝি আদিল আর আবির আলিঙ্গনবদ্ধ কোনো এক চিরকুটের কল্যাণে।।
Comments