top of page
Search

অল্প কথার গল্পে হেমন্ত সরখেল


আস্তানা


হেমন্ত সরখেল




পড়ন্ত বিকেলের গলানো সোনা প্লাটিনামের নেকলেসটায় এসে পড়ছে। অনুপ ডিজায়ারের কালো কাচটা নামালো। আজ সতেরোই জুলাই। জানতো, রু আসবে এখানে।না,কিছুতেই জোটাতে পারেনি সাহসটুকু যেটায় চোখে চোখ রেখে ফেরার খবর দেওয়া যায়। রু তো জানতো ও পিএইচডি করতে গেছে কানাডা। কিন্তু এমিলি আর জন যে ওকে কোথায় রেখেছে তা যে কখনোই বলে ওঠা হয়নি। বলা হয়নি ওর সফটওয়্যার ডিজাইনিং-এর শর্ট কোর্সের কথা। ইনফ্যাক্ট, রু'কে ও শুধু ওর সাফল্যের খবরটাই পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। এখন আর চাপা শ্বাস ছাড়া এদেশে নিজের বন্ধু খুঁজে পায় না অনুপ।



দামু'দাকে প্রণাম করে চকিতে পেছনে তাকালো রু। সিটে বসেই মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো অনুপ। ডাবল লেনের রাস্তা টপকে তৃতীয় ছোট রাস্তার গাছের ছায়ায় দাঁড় করিয়েছে গাড়িটা যদিও, তবু, একঝলকেই দেখলো রু'র চোখে চশমা নেই। নিজেকে লুকানোর সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় নিজেরই হাসি পেল। চশমা ছাড়া এতদূরে,গাড়ির মধ্যে বসা অনুপকে চিনতে পারা সম্ভব না ওর পক্ষে কিছুতেই। আর, ও তো জানেই না অনুপের প্রত্যাবর্তনের কথা। রু ঘরে ঢুকছে, পেছনে হলুদ পাঞ্জাবিতে দামু'দা।



রুজা। তবে ও কোনোদিন রু ছাড়া ডাকেনি। আপাতগম্ভীর মেয়েটা প্রাণচাঞ্চল্য জমিয়ে রেখেছিল মনের অন্তস্থলী ভরে। কাছে না এলে এ সমুদ্রের গভীরের চোরা স্রোত টের পাওয়া যায় না, এটা বুঝতে বুঝতে বুঝেছে অনুপ। কেউ ই তো কোনোদিন ভালোবাসার কথাটা তেমনভাবে জানায়নি অপরকে। শুধু বুঝতো, ওকে ছাড়া কাজ চলে না। এমনই একটা দিনের ক্ষ্যাপামোয় ওরা গড়ে তুলেছিল স্বপ্নের স্বপ্ন 'হলুদপাখি'। আশ্রয়হীন কতগুলো অসহায় প্রাণের আস্তানা। এনজিও'র বন্ধুরা হেল্প করছিল,খাওয়া-দাওয়া,ওষুধ, জামা-কাপড়ের অভাব রাখেনি তারা। করবেও। সে আশ্বাস পেয়েই ওর পিএইচডি করতে কানাডা'র উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া। আসলে, পুরুষের ভাগ্যে সুযোগের শিঁকে যে অল্পই ছেঁড়ে,সেটা বুঝেই আর এটা ছাড়ার কথা ভাবেনি অনুপ। রু থাকতে ওর ফিরে আসা অব্দি যে বিচরণ অবাধ থাকবে পাখিদের সেটা জানাই ছিল। আজ সেটা দেখতেই ওর এখানে আসা, দেখতে আসা রু-এর বর্তমান রূপও। কিভাবে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ও!



আজ হলুদপাখি'তে সকলের জন্মদিন। এদিনটায় শুরু হয়েছিল বলে, সবার জন্মদিন একসাথে। রু'এর হাতের প্যাকেটগুলো গিফ্টের ইশারা দিল। ও কি কিছু করে! পেল কি কোনো চাকরি! বিয়ে যে করেনি সেটা তো স্পষ্ট, নইলে একা আসতো না। অনুপের ভেতরটা ছটফট করছে। নামবে একবার?যাবে হলুদপাখির নীড়ে?বলবে রু-এর হাতদুটো ধরে,দ্যাখ,ফিরে এসেছি তোর কাছে! কিন্তু কী কৈফিয়ত দেবে ওর সংবাদহীনতার! কিভাবে বলবে এমিলি আর জন-এর সাথে নতুন সফটওয়্যার বানাতে গিয়ে ওরা হ্যাক করে ফেলেছিল ব্যাঙ্কের সার্বার! এমিলি হাত ঝেড়ে বেরিয়ে এসেছিল ওর বাবার প্রতিপত্তিতে। কিন্তু ওকে আর জন'কে ঘানি টানতে হলো পাঁচ বছর। যদিও, এমিলিই ওদের নিরাপরাধ প্রুভ করালো উকিল ধরে। তবুও,এই পাঁচ পাঁচটা বছরের কালো দিনের পিগমেন্ট এত সহজে তো মুছে যাওয়ার নয়!জিদও তো ছিল! বেরিয়েই লেগে পড়েছিল অসমাপ্ত কাজে। ততদিনে আরও উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি। এবার ক্রমাগত জমা হতে থাকলো একটার পর একটা সাফল্য। কোথাও রাখেনি ও নিজেকে। পেটেন্টও সব এমিলি আর জনের নামে।শুধু ওরা তিনজন পার্টনার। এটুকুই ওর।আজ,যখন অনুপের পক্ষে ডিজায়ার অ্যাভেইল করা জলভাত,যখন হোটেলের ডিলাক্স স্যুইট অপেক্ষমান কোম্পানির তরফ থেকে, তখনও, রু'এর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোটা এভারেস্ট জয়ের থেকেও কঠিন। কেন! জানে না ও।



গাড়ি স্টার্ট করে গিয়ার চেঞ্জ করলো অনুপ। একবার তাকালো হলুদপাখির দিকে। সন্ধে নেমে আসছে। কয়েকজন মিলে লাইটের ঝালর সাজাচ্ছে। আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলছে রু। এক্সিলেটরে পায়ের চাপ বাড়ালো অনুপ। নেট ব্যাঙ্কিং করে ডোনেশন পাঠিয়ে দেওয়া যাবে হলুদপাখির জন্য। ওরা ভালো আছে। ওদের ভালো রেখেছে রু। নিজেও ভালো আছে রু। না ই বা থাকলো ওর কাছে।

 
 
 

Comments


Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page