কুসুমহার
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
৯)
গৌরের মাথার ভেতরটাতে অনুরণন হয় তীব্র আবেশে। তখন যেন কালাকালের কর্তা সেই নন্দদুলাল নিজেই এসে ওর শরীরমনে বেশীক্ষণ ধরে বাস করতে শুরু করেন। আর তখন সবটাই যেন আন্দোলিত হয়ে ওঠে বলে শুধু একজনকেই মনে হয় গিয়ে ভাবাবেশে একবার জড়িয়ে ধরি! তিনি যে আর কেউ নন, পুরুষোত্তম সেই শ্রীকৃষ্ণের কাছে ইহবাহ্যসবটাই সমর্পণ করতে মাঝেমধ্যে মন চায়।
- " হা কৃষ্ণ! মরিলে ঝুলায়ে রেখ, কদম্বেরই ডালে"
বৃষভানুনন্দিনী আর সে তখন অভিন্ন হয়ে যায় যে।
আবার সেই ঘোরটি কেটে গেলে নবদ্বীপের শ্যামলিমা আর শচীদেব্যার অঞ্চলটির সাথে লক্ষ্মীপ্রিয়ার মধুর কটাক্ষকে তার বড় আপনার মনে হয় বলে স্বস্তিবোধ হয়। তবে এইটুকু শুধু বুঝতে পারে যে তার জীবনটা খুব শীঘ্রই এবারে বদলে যাবে।
সেই লগনটি কি তবে ক্রমাসন্ন?
.................
গৌরাঙ্গ সন্ধ্যাকালে প্রদীপের ক্ষীণ আলোতে তখন ঘরে বসে নিভৃতে আবৃত্তি করছিল,
" মাধব তুয়া অভিসারক লাগি’।
দূরতর পন্থা গমন ধনী সাধয়ে,
মন্দিরে যামিনী জাগি;
কর-যুগে নয়ন মুদি’ চলু ভামিনী,
তিমির পয়ানক আশে।
মণি কঙ্কণ পণ ফণি-মুখ-বন্ধন,
শিখই ভুজগুরুপাশ।
গুরুজন-বচন বধির সম মানই,
আন শুনই কহ আন..." !
আর ঠিক এই সময় লক্ষ্মীপ্রিয়া হাতে দৈ এর ভান্ড আর চিপিটক নিয়ে স্বামী সন্দর্শনে এসে দাঁড়াল।
আজ দ্বিপ্রহরে তার এই জীবনদেবতাটি বড়ই অল্প খাদ্যাংশ গ্রহণ করেছে। সেইজন্য তার নিজের মনটিও বেশ খারাপ ! গৌর যেন এই কটিদিনে একটু বেশীরকম স্বাস্থ্যহানির জন্য যেন কৃশকায় হয়ে গেছে বলে সবাই তাকেই হয়ত দোষারোপ করছেন।
গৌর তাকে দেখে শান্ত কন্ঠে বলে,
" জানো তো! দাদামশাই খবর পাঠিয়েছেন। আমি তাই শীঘ্রই শ্রীহট্টদেশে যাত্রা করব। যদিও পিতৃধনের এই ব্যবহারিক পর্যায়টি আমার কাছে আদতে অর্থহীন তাও মাতামহের আহ্বানটি আমি উপেক্ষা করতে অক্ষম। জানো! এমনকি মাতা নাকি আগেই এই সংবাদটি পেয়েছেন যদিও তাও আমাকে প্রত্যক্ষে এ নিয়ে এখনো কিছুই বলেন নি ! "
লক্ষ্মীপ্রিয়া প্রমাদ গোণে। অন্তত সে তো গৌরকেই খবরটি দিতেই পারত। সে নিরুত্তর হয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
( ক্রমশ ...)
Comments