কোপা ইউরো ও বাঙালি
সাত্যকি বসু
ছবিঃ- ইন্টারনেট
কিছুদিন আগেই ফুটবল বিশ্বের সেরা দুই টুর্নামেন্ট ইউরো কাপ ও কোপা আমেরিকা শেষ হল।
ইউরো কাপ বিজয়ী হলো ইতালি ও কোপা আমেরিকার আর্জেন্টিনা জিতলো।
এখন; এই দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে, কোন টুর্নামেন্ট এগিয়ে, কে পিছিয়ে, কোপায় কার পারফরম্যান্স ভালো, কার খারাপ , ইউরোতেই বা কার ভুল সিদ্ধান্তে টিম ডুবলো এইসব নিয়ে আলোচনা, এই লেখনীতে করতে যাচ্ছি না। সে'সব করার জন্য অনেক অনেক সংবাদপত্র, ব্লগসাইট আছে, তারা করেছেও!
বহু ফুটবল বিশেষজ্ঞ বহু গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে, আবার তা শেষও হয়ে গিয়েছে। এখন এই লেখনীতে বলতে যাচ্ছি, বাঙালি আর কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপের সমন্ধটা ঠিক কেমন !
এই প্রসঙ্গে আগেই তাহলে বাঙালি সম্পর্কে, একটু আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে।
আমরা বাঙালি, আমরা নিজেদের জানি। কি মশাই হাসালেন, ওপরের ওই লাইনটাই ভুল, বাঙালি আসলে নিজেকেও চেনে না, সে কি জিনিস, তার মধ্যে কোথায় কি প্রতিভা লুকিয়ে আছে। সেই বাঙালির সঙ্গে আবার ফুটবলের একটা অদ্ভুত যোগসূত্র, বাঙালি ফুটবল দেখে না এ আবার হয় নাকি ?
হ্যাঁ হয়! তবে সংখ্যায় তা একটু কমই। বাংলার পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল ক্লাব আছে, কাদায় মাখামাখি করে ফুটবল খেলতে একমাত্র বাঙালিই পারে,বাঙালিই আবার পারে ইস্ট-মোহনের ঝামেলায় জড়িয়ে, আবার খানিকবাদে গলায় গলায় মিলে গিয়ে বসে বসে তাস পিটাতে।
এহেন কিছু বাঙালিই আবার পারে নিজের দেশের ফুটবল সংস্থাকে বাপবাপান্ত করতে, আবার সেই ইন্ডিয়া টিম বিদেশের সামনে খেলতে নামলে বুক চিতিয়ে সাপোর্ট করতে।
এখন কোপা ইউরোয় বাঙালি তিনভাগে বিভক্ত দেখা যাক সেটা কি কি, একনম্বর যে কেবল কোপা আমেরিকা দেখে,দুই যে কেবল ইউরো কাপ দেখে আর তিন যে কোপা ইউরোপ দুই দেখে।
এই টুর্নামেন্টেগুলোর জন্য পাড়ায় পাড়ায় রাত জাগে, জোড়া জোড়া চোখ আর দিনেরবেলা নিজের প্রিয় টিমের রঙ ও চিহ্ন দিয়ে গলি পাড়া ও ক্লাব সাজিয়ে নেয়। কোপা-ইউরো কাপের সময় বাঙালির ক্লাব ঘরগুলোতে ঝগড়া ঝঞ্ঝাট বাঁধে, আবার এও দেখা যায় পরেরদিন একই গাড়িতে চেপে দুজনে মিলে চললো করোনার টিকা নিতে, আসলে বাঙালির জাতিসত্ত্বাটাই এমন।
অনেকে হয়তো দুঃখ করে বলেন, " বাঙালি জাতটার মধ্যে কোনো ঐক্যই নেই।" কিন্তু বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধতা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে তৈরি সে স্বয়ং বাঙালিও ধরতে পারবে না, জাস্ট ধরতে পারবে না।
এবারই যেমন কোপার ফাইনালে ভোরে দেখা গেল আর্জেন্টিনার সাপোর্টার সেভেন-আপের বোতল এনেছেন, ব্রাজিলের সাপোর্টার মহাশয়কে খাওয়াবেন বলে, অনেক অপমান সহ্য করে ব্রাজিলের সাপোর্টার অধীর আগ্রহে বসে রইলেন জবাব দেবেন বলে কিন্তু শেষমেষ আর তা হলো না, দীর্ঘ ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনার সাপোর্টার মহাশয়ের মুখে হাসি ফুটলো, আর ব্রাজিলের সাপোর্টার মহাশয় আরো অপমান সহ্য করে, কাঁদো কাঁদো হয়ে... বাড়ি ফিরলেন!
কিন্তু ঠিক তার পরেরদিন ক্লাবের মাঠে দেখা গেল দুজন পাশাপাশি বসে মাস্কটা থুতনিতে নামিয়ে ফুঁক ফুঁক করে বিড়িতে টান মারছেন।
হুঁ হুঁ বাবা বাঙালি জাতটাই এমন।
ওপার বাংলায় আবার উত্তেজনা চরমে জায়গায় জায়গায়, পুলিশি সতর্কতা,শোনা যাচ্ছে কেউ কেউ নিজের প্রিয় টিমের পরাজয়ের জন্য আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন !
তবে এবারে ইউরোর ফাইনালে অবশ্য এমন কোনো উত্তেজক ঘটনা ঘটেনি, কারণ ফাইনালটা ইংল্যান্ডে। ইউরোপের মধ্যে, অনেক বাঙালি হয়তো নিজেকে ফুটবল বিশেষজ্ঞ প্রমাণ করতে ফেসবুকে লিখেছিলেন ,"টেকনিকের দিক থেকে ইংল্যান্ডই এগিয়ে !" কিন্তু ইংল্যান্ডকে সাপোর্ট তো কেউই করবে না একথা বলাইবাহুল্য, তবে ঘটনাটা জার্মানি-ইতালির মধ্যে হলে বিষয়টা আলাদা ছিল বা যদি পর্তুগাল...।
না থাক! আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই লোকাল ট্রেনের কোম্পার্টমেন্টে আবার এই লেখাটা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা বসতে পারে।
ও লোকাল ট্রেন তো আবার এখন বন্ধ রয়েছে, তাহলে আর একটু কথা বাড়াই,
বাঙালি আসে সেরাটা ভালোবাসে,বাঙালি এই গান শুনে অভ্যস্থ,
-" সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল !" আর সেই ফুটবলের সেরা দুই টুর্নামেন্ট বাঙালির মনে-যাপনে জায়গা করে নেবে না তা হয় নাকি ?
বাঙালির তো এটাই গুণ, সে কলকাতা লীগ দিয়েও যেমন ঝগড়াঝাঁটি করতে পারে, আবার বিশ্বকাপেও রাতের পর রাত জাগতে পারে, আবার সমস্ত ঝামেলার শেষে দুজনে মিলে একটাই সাইকেলে করে নিজের পাড়ার মুচির দোকানে ফুটবলের ব্লাডার সারাতে যেতে পারে, বিকেলে খেলবে বলে।
তবে একটা আক্ষেপ থেকেই যায় এহেন বাঙালির বিশ্ব ফুটবলে প্রতিনিধি কোথায় ?
আবার বাঙালিকে বিচার করতে যাওয়া, হায় রে !
ওহো আমি তো বাঙালিই ।
Comments