top of page
Search

কিশোরবেলার রূপকথায় গোবিন্দ মোদক

agantukpotrika

জয় রাজা জয়বর্ধনের জয়


গোবিন্দ মোদক


   (সাত)




          এদিকে আত্মীয়-স্বজনকে একে একে মরে পড়ে যেতে দেখে রাক্ষসী-রাণী সুগন্ধা প্রথমে ভয় পেয়ে গেল। তারপর ভীষণ রূপ ধারণ করে এসে আক্রমণ করল রাজা জয়বর্ধনকে। রূপকুমার তার দীর্ঘ দু'ধার তরবারির এক এক কোপে রাক্ষসীর হাত-পা, নাক-কান কেটে কেটে ফেলতে লাগলো --- কিন্তু মুহূর্ত পরেই আবার সেগুলো নতুন করে গজাতে লাগলো রাক্ষসীর দেহে।


           ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষী বললো --- সর্বনাশ মহারাজ ! ও মায়াবী রাক্ষসী ! তলোয়ারের আঘাতে ওর মৃত্যু নেই ! ওর মৃত্যুর কারণ অন্যত্র নিহিত আছে। শীঘ্র চলুন আমার সঙ্গে। 


          ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষীকে অনুসরণ করে রাজা জয়বর্ধন এসে উপস্থিত হলেন যন্তর-মন্তর ঘরে। বিচিত্র সব জিনিসে ঠাসা সেই ঘর ! ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষী একলাফে গিয়ে উঠল একটা আলমারির উপর, তারপর বিচিত্র সুরে ডাকতে লাগলো। জয়বর্ধন তখন তার সেই সংকেত বুঝে নিয়ে সেই আলমারির থেকে বের করলেন একটি তালপাতার খড়্গ।




         খড়্গটি হাতে নিতেই যেন ভুমিকম্প শুরু হলো। রাক্ষসী তার আসন্ন বিপদ টের পেয়ে এমন দাপাদাপি শুরু করলো যেন ভুমিকম্প হচ্ছে ! রাজা খড়্গটি তুলে দিলেন রূপকুমারের হাতে। রাক্ষসী তখন মায়াজাল বিস্তার করে মানবী রূপ ধারণ করে রূপকুমারের কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে বললো, "আমি তোমার মায়ের মতো, আমাকে হত্যা কোরো না। তাছাড়া, তুমি তো জানো কুমার যে, নারী হত্যা মহাপাপ !" 


          জয়বর্ধন চেঁচিয়ে বলে উঠলেন --- "কুমার ! মায়াবী রাক্ষসীর কথায় ভুলো না, এখনই ওকে শেষ করো ! ও আমাদের জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়েছে ! আমাদের রাজ্যটাকে ছারখার করে দিয়েছে ! ওর কোনও ক্ষমা নেই ! চালাও খড়্গ !"


          অমনি ঝলসে উঠল রূপকুমারের হাতের খড়্গ ! মুহূর্তে  রাক্ষসী তার স্বমূর্তি ধারণ করে গিলতে এলো রূপকুমারকে ! কিন্তু তার আগেই খড়্গাঘাতে তার মুন্ডু বিচ্ছিন্ন হলো ধড় থেকে !


          রাক্ষসী-রাণীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মগড় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠলো --- পাখি গাইলো .... নদী বইলো .... থমকে থাকা জীবনযাত্রা সচল হলো ! সবাই এসে রাজপুত্র এবং রাজাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগলো।


                           


                                                  (আট) 



          একদিন রাজা জয়বর্ধন সুগন্ধা-রূপী রাক্ষসী-রাণীকে ঘরে এনে যে অভিশাপ বয়ে এনেছিলেন, তার পরিসমাপ্তি ঘটলো আজ রাক্ষসী রাণীর মৃত্যুতে। কিন্তু তাঁর মন ভারাক্রান্ত ! মহারানী চন্দ্রাবতী কোথায় আছে আজ ! তাঁর কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাঁর যে নিস্তার নেই ! কিন্তু তাঁকে যে রাজা বনবাসে দিয়েছেন ! তিনি কি বেঁচে আছেন আজও !


          ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষী বিচিত্র স্বরে বলে উঠলো, --- আছেন মহারাজ ! মহারাণী বেঁচেই আছেন। কিন্তু তাঁকে রাক্ষসী-রাণী জাদু করে লুকিয়ে রেখেছে কোনও একটা কাঁচের মধ্যে ! আপনি তাঁকে মন থেকে ডাকলেই সেই জাদু-জাল ছিঁড়ে যাবে। ডাকুন তাঁকে ! মন থেকে ডাকুন !


           রাজা তখন তাঁর মনের পূর্ণ আকুতি দিয়ে ডাকলেন --- "মহারাণী চন্দ্রাবতী ! কোথায় তুমি ! আমাকে ক্ষমা করো !" অমনি ঘরের বিরাট আয়নার কাঁচটা ভেঙে চুরমার হয়ে ছড়িয়ে পড়লো, আর আয়নার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন মহারাণী চন্দ্রাবতী ! তখন তিনজনের মিলনে তাঁরা যে কি সুখী হলেন তা আর বলবার নয় ! 



         সব কথা শোনার পর চন্দ্রাবতী খুবই আনন্দিত হলেন বটে, কিন্তু ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষীর এই পরিণতি দেখে খুবই দুঃখিত হলেন। তিনি বারবার সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলেন। তখন ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষী তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, "মহারাণী ! আমি গণনা করে জেনেছি, সীতাকুণ্ডের জলে স্নান করলে আমি আবার অভিশাপ মুক্ত হতে পারবো।"


          মহারাণী তখন খুশি হয়ে মহারাজকে অনুরোধ করে বললেন, "আগে সীতাকুন্ড যাওয়ার আয়োজন করুন, মহারাজ !"


          মহারাজা বললেন, "সে তো করতেই হবে। একদিন এই জ্যোতিষীর কথা না শোনার কারণে আমাদের জীবনে দুঃখ নেমে এসেছিল ! আমি তাঁর প্রতি সুবিচার করিনি। অথচ আজ তাঁরই সাহায্যে রাক্ষসী-রাণীকে বধ করে আমরা তিনজন আবার নিজেদেরকে ফিরে পেলাম ! তাঁকে তো স্বরূপে না ফেরানো পর্যন্ত আমারও স্বস্তি নেই ! চলো, আগে সীতাকুন্ড যাওয়া যাক !" 



         

মহারাজার কথা শুনে ব্যাঙ-রূপী জ্যোতিষী বিচিত্র স্বরে ডেকে উঠে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলো। বাইরে তখন জনগণের তুমুল জয়ধ্বনি কাঁপিয়ে তুলছে আকাশ-বাতাস --- 


"জয় রাজা জয়বর্ধনের জয় !"


"জয় রাণী চন্দ্রাবতীর জয় !!"


"জয় রাজকুমার রূপকুমারের জয় !!!"



                                                 (সমাপ্ত)


7 views0 comments

Comentarios


bottom of page