top of page
Search
agantukpotrika

ছায়াছবি আলোচনায় আকাশ সাহা



আলোচনায়ঃ- আকাশ সাহা


"তুমি আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গিয়েছিলে শ্রীকান্ত দা?"


জীবন কি জিয়নকাঠি দিয়ে পরিমাপ করা এক আশ্চর্য রহস্যের সমাহার, নাকি আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ছোট ছোট ঘটনা আসলে অতীত কাল থেকে বয়ে আনা আমাদেরই ভিতরের অপুর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য তা বোঝা বড়ো দায়, সেই কোন ছোটবেলায় প্রথমবার শরৎচন্দ্র পড়েছিলাম আজ আর তেমনভাবে আমার কিছু মনে নেই, সেই কোন ছোটবেলায় 'শ্রীকান্ত' উপন্যাস পড়ে বড়ো দাদুর কোলে শুয়ে এক অজানা ভয়াবহ রাত জেগে ছিলাম একা সত্যি আজ সেইসব কিছু আর মনে নেই আমাদের, শুধু মনে আছে সেই সাহসী জেদি বীর ইন্দ্র দাকে, ইন্দ্র দা আমাদের সমস্ত ছোটবেলা জুড়ে ছিলো কিন্তু এই বড়ো বেলায় এসেও তাকে সেভাবে কখনো ভুলতে পারিনি বরং আমাদের বিপদের দিনগুলোতে ইন্দ্র দা মনের ভিতরে এক অদ্ভুত সাহস জুগিয়েছে, একা করে গেছে যে সমস্ত মানুষ তাদের দূরে ঠেলে ইন্দ্র দা আমাকে আগলে নিয়েছে বারবার আসলে ইন্দ্র দার মতো মানুষ শুধু 'শরৎচন্দ্র' নয় গল্প উপন্যাস বা সিনেমার বাইরে এসে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পাশেও এক অদ্ভুত যতিচিহ্নের মতো দাঁড়িয়ে থাকে, যাকে দেখা যায়, অনুভব করা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না কখনো।


প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য এই নামটির সাথে আমরা সিনেমাপ্রেমী বেশ কিছু মানুষ বিশেষভাবে পরিচিত, তার দুটি মাত্র সিনেমা রিলিজ হয়েছে(You may not believe সিনেমা ঠিক ধরা যায় না) এখনো পর্যন্ত, এর মধ্যে "বাকিটা ব্যক্তিগত" সিনেমা ইতিমধ্যেই National Award জিতেছে এবং বাংলা সিনেমায় একটি সুন্দর নতুন ভাব তৈরি করেছে, প্রদীপ্ত বাবুরই এই দ্বিতীয় সিনেমা হলো "রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত", সিনেমাটি বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর "শ্রীকান্ত" উপন্যাসের "প্রথম পর্ব" থেকে সংগৃহীত, যদিও আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই সিনেমার নাম দিতে চাই "শ্রীকান্তের পরবর্তী জীবন"।


শ্রীকান্তের বাল্যজীবন, ইন্দ্র দার সাথে পরিচয় ও তার দস্যিপনা এবং পরবর্তীকালে অন্নদা দিদির সাথে তাদের জীবনের অপুর্ব মিশ্রণ সব তুলে এনেছেন পরিচালক এই সিনেমায় তবে আগেই বলেছি এই সিনেমা কিন্তু শুধুমাত্র "শ্রীকান্ত" উপন্যাস নিয়ে করা একটি পূর্ণ ছায়াছবি নয় বরং কেমন হতো যদি আধুনিক জীবনের ধাঁচে পুরনো উপন্যাসের কথাকে মিশিয়ে দেওয়া যেতো এক অদ্ভুত পরিশীলিত জীবনের মধ্যে তারই গবেষণাধর্মী ব্যখ্যা এই "রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত" সিনেমা, এই সিনেমা কখনো পরিপূর্ণতার কথা বলেনা বরং সমস্ত রকম সম্ভাবনা খুলে যায় নতুনভাবে শ্রীকান্তের পাঠকের কাছে, যা অবিস্মরণীয়ভাবে এক বিস্ময়কর দরজার খোঁজ দেয় আমাদের।


গোটা সিনেমায় পরিচালক নানাভাবে উপন্যাসের শেষ পরিণতিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গেছেন কিন্তু ফলাফল কিছুই সেইভাবে জানাননি হয়তো দর্শক নিজের মতো তা ভেবে নেবে, এই সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ে ঋত্তিক চক্রবর্তী আবার আমাদের মন কেড়ে নেন, কোথাও যেনো শ্রীকান্তের সেই ছাপ থেকে যায় তার চরিত্রেই, ছোটবেলায় যে শ্রীকান্ত রোলটি করেছিলো সেও খুব ভালো করেছে, অন্নদা দিদির চরিত্রে অপরাজিতা ঘোষ রায় বেশ ভালো অভিনয় করেছেন, রাজলক্ষ্মীর চরিত্রে জ্যোতিকা জ্যোতির অভিনয় ও ইন্দ্র দার চরিত্রে সায়ন ঘোষ যাকে আমরা Rj সায়ন বলে চিনি তাকেও খুব ভালো মানিয়েছে, ছোট চরিত্রে রাহুলও বেশ ভালো সাথে সিনেমাটোগ্রাফি, দৃশ্য, লোকেশন আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আমাদের ছোটবেলাকেই যেনো আরও একবার ফিরিয়ে দেয়।


কিছু কবিতার লাইন দিয়ে এই সিনেমার লেখা হয়তো শেষ করতে পারি কিন্তু ভাষাদৃশ্য অন্তত আমার মধ্যে থেকে যাবে আজীবন।


"যে জীবন জুড়ে কিছু মানুষ মিশে থাকে প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে,


সে জীবন আমাকে ত্যাগ করে কোথায় যেনো বহু বহুদূর পালিয়ে যায় একা।"


Movie rating - 7.5/10

6 views0 comments

Comments


bottom of page