ভয়-পুকুরে স্নান
গোবিন্দ মোদক
একদা এক চাষী ছিল তার খুব ভূতের ভয়,
সর্বদাই তার মনের শঙ্কা — কি হয়! কি হয়!
বিকেল হতেই মাঠ থেকে ফেরে সে কাজ সেরে,
সন্ধ্যা হলেই যদি কোনও ভূত আসে তেড়ে!
রাতের বেলা গাছের পাতার শব্দ হলে পরে,
চাষীর বুক ধুকুশ-পুকুশ ভীষণ ভয়েই মরে!
গাছের ছায়া দেখলেই সে এমনই ভয় পায়,
ভিরমি খেয়ে চোখ উল্টে অজ্ঞান হয়ে যায়!
এসব দেখে চাষীর বউ উপায় না আর পায়,
চাষীকে নিয়ে সোজা সে ওঝার কাছে যায়!
সব শুনে ওঝা বলে- এ রোগ সারতে পারে,
যদি চাষী ‘ভয়-পুকুরে’ শনিবার স্নান করে!
এইনা শুনে চাষীর আসে কম্প দিয়ে জ্বর,
চাষীর দেহে শাকচুন্নি ভূত করে ভীষণ ভর!
চাষী তখন ভীষণ রকম লম্ফ-ঝম্প ক’রে,
বলে- ব্যাঁটা ওঁঝা তোঁকে খাঁবো আঁজ ধঁরে!
তোঁর ওঁঝাগিরি আঁজ কঁরবো আঁমি শেঁষ,
ওঝা বলে- ছুঁতেও তুই পারবি নাকো কেশ!
ওঝা আর শাকচুন্নিতে লড়াই লেগে যায়,
তাইনা দেখে চাষীর বউ করে- হায়! হায়!
অনেক লড়াই শেষে চাষী যক্ষুণি হার মানে,
ওঝা তাকে নিয়ে আসে বাড়ির পিছনপানে!
পিছনেতেই ছিল পুকুর,‘ভয়-পুকুর’ তার নাম,
চারিধারে তার লেখা ছিল- রাম! রাম! রাম!
পুকুর দেখেই শাকচুন্নি ভয়ে কান্না করে,
‘ছেঁড়ে দাঁও’ বলে ওঝার দুই পায়েতে পড়ে!
ওঝা বলে- ছেড়ে তোকে দিতে পারি বটে,
এই চাষীর ধারেকাছেও আসবি নাকো মোটে!
ডুবটা দিতেই শাকচুন্নি চাষীর শরীর ছাড়ে,
ওঝা তখন চাষীর দেহ তোলে পুকুর পাড়ে!
জ্ঞান ফিরলে চাষী বলে নেই আর ভূতের ভয়,
জয় জয় জয় ‘ভূতনাথ!’, জয় ওঝার জয়!!
Commentaires