প্রেমিকা এবং যুদ্ধ
সুবর্ণা ঘোষ
ভেবেছিলাম একটা লাগাম ছাড়া গল্প লিখব তোমায় নিয়ে। সেখানে গাছ থাকবে ফুল থাকবে আর থাকবে থরেথরে মানুষ। গল্পের চরিত্রদের থেকে অনুমতি নিয়ে দু-চারটে অলিগলি ঘুরে পাঁচ দশটা সমুদ্রের জলে সাঁতার কেটে যখন পাড়ে উঠলাম গল্প শুরু করবো বলে তখন কেউ বা কারা বলল, "যুদ্ধ শুরু হচ্ছে।"
সে যাই হোক ফিরে আসি তোমার কথায়।
তোমায় নিয়ে গল্পতে আর একবার ফিরি অন্তত নিজের জন্য। নিজের জন্য আর একবার ফিরে আসি মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে। আঙুলের ভাঁজে পৃথিবী ছোঁয়ার শখ আমার জন্ম-জন্মান্তরের। সে পৃথিবীতে রক্ত আছে প্রেম আছে আর আছে 'ভালোবাসি' বলতে না পারা কয়েকটা আপশোস।
সেদিন গল্পটা শেষ করে তোমায় দেবো বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। মেট্রো স্টেশনে কারা যেন বলাবলি করছিল, "এটা নাকি তৃতীয়বার।" অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে এরপর ওদের কথা শুনতে গেলে মেট্রোটাই মিস হয়ে যাবে। সময় মতো আমার লেখা গল্পটা পৌঁছবেনা তোমার কাছে। যতবার আমি গল্প লিখি সেখানে শুধু জন্ম থাকে, তার সাত সীমানার মধ্যে কোথাও মৃত্যু লিখিনি কখনো।
সময় মতো স্টেশনে নেমে একটা দোকান থেকে চকলেট কিনতে যাবো এমন সময় সজোরে একটা শব্দ। তারপর আর কিছুই মনে নেই সেভাবে। একবার শুধু চোখ খুলে দেখেছিলাম কানের পাশ দিয়ে রক্তের স্রোত আর পরপর শুয়ে আছে অনেক গুলো অযৌক্তিক ধর্ম । অতো ধর্মের ভিড়ে হারিয়ে গেছে আমার প্রেমিক ঈশ্বরের জন্য নিজের হাতে লেখা সেই গল্পটা।
পরের দিন খবরের কাগজে সেই খবর পড়েছিল সবাই। অনেক আর্টিকেল বেরোলো। আমার মতো আরও কিছু মৃত মানুষের জন্য মোমবাতি মিছিল নীরবতা পালন শহরের সিকিওরিটি ইনক্রিজ আরও কত কী হলো।
জীবন এখন শীতের দিনের বেলা তিনটের মতো হয়ে আসছে। এই বুঝি সুর্য ডুবলো, এই বুঝি আমায় হারিয়ে ফেললে।
যুদ্ধ শেষ
রক্তবীজ
প্রমাণ লোপাট
আমি তখনও পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে সেই গল্পটা আবার লেখার চেষ্টা করছি যা মুছতে পারবেনা কোনো মানুষ কোনো যুদ্ধ।
Comments