কেশবতী
পৌষালী চক্রবর্তী
টিভির পর্দায় বিভিন্ন শ্যাম্পু র বিজ্ঞাপনে লম্বা ঘন চুলের মডেলদের দেখতে দেখতে নবনী নিজের চুলে হাত দেয়,কত সখ ছিল ওর কোমর ছাপানো ঘন কালো চুলের কিন্তু হলো কোথায়!
চেষ্টা কম করেনি ও নিজের ড্রেসিং টেবিল এর দিকে তাকাতেই বিভিন্ন নামী দামী শ্যাম্পু তেল আর কন্ডিশনের ভীড় দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নবনী ভাবতে থাকে কত টাকা খরচা করেছে শুধু একটু সুন্দর চুলের জন্য কত ট্রিটমেন্ট করিয়েছে,কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি, মিথ্যা কথা বলে সবাই,সুন্দর চুল সবার ভাগ্যে থাকে না যেমন আমার ভাগ্যে নেই।
অথচ ছোটবেলায়, ছোটবেলার কথা মনে পড়তেই নবনীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে, ঠামি ওর মাথায় তেল লাগিয়ে বেনুনী বেঁধে দিত,কি যেনো নাম ! হ্যাঁ কলাবেনুনী,তখন ওর বেশ কোমর অব্দি চুল ছিল কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে চুল ঝরতে ঝরতে আজ মাত্র কয়েক গাছি চুল পড়ে আছে। ঠামি যদি এখন থাকতো ফোকলা দাঁতে বলতো – “ছেমরি র সুল দেহো যেন শুকনা লতা”।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চারটে বেজে গেছে,বুঝতেই পারেনি আজ একটু গড়িয়াহাট যাবার আছে,সামনে অর্কর জন্মদিন কিছু কিনতে হবে,অর্কর কথা ভাবতেই নবনীর পরশুদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
খাবারে চুল পড়েছিল বলে কি কথাটাই না শুনিয়েছিল সেদিন অর্ক,বলেছিল ওর মধ্যে নাকি সেই চার্ম টাই নেই আর,আছে টো মাথায় কটা চুল তাও খাবারের মধ্যে থাকে,চোখে জল এসে গেছিলো নবনীর,যে মানুষটার জন্য ও নিজের বাবা মা কে ছেড়ে এসেছিল তার ছোটবেলার প্রেম তার মুখে এই কথা সে সহ্য করতে পারেনি।
চোখের কোনে আসা জলটাকে মুছে টিভি অফ করতে যেতেই একটা অ্যাড শুনে ও থমকে গেলো –
“রূপবতী রাজকন্যার কুচবরণ কেশ,সৌন্দর্যের আরেক পরিভাষা নারী দের কেশ,কেশ যত বড়,ঘন ও কালো রূপের বাহার ততই বেশি,কিন্তু এখনকার সময় ঘরে বাইরে সামলাতে গিয়ে নারী জাতির কেশ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,তাই নারীজাতির এই মূল্যবান সম্পদ কে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আমরা নিয়ে এসেছি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শ্যাম্পু “কেশবতী”। আপনাদের জন্য রয়েছে ফ্রী স্যাম্পল।
আরো অধিক জানতে ফোন করুন এই নম্বর এ।“
কি মনে হতে নবনী নম্বর টা ফোনে সেভ করে নেয়। তাড়াতাড়ি তৈরি হয অর্ক কে ফোন করতেই অর্ক ফোনটা তুলে বলে – “নবনী তুমি আজকে একাই চলে যাও বুঝলে, আমার সময় হবে না, একটা অফিস মিটিংয়ে ফেঁসে গেছি।“ অথচ ওর পিছনে ওর কলিগদের হাসা হাসির আওয়াজ নবনী অগ্রাহ্য করতে পারে না ,ও জানে অর্ক ইচ্ছা করেই ওকে অ্যাভয়েড করছে।
ফোনটা রেখে নবনী সোফার ওপর বিষণ্ন হয়ে বসে পড়ে, হঠাৎ কি মনে হতে অ্যাডে দেখা ফোন নাম্বারে ফোন করতেই ওপার থেকে একটা ফ্যাঁসফ্যাঁসে আওয়াজ শোনা যায়- “ কেশবতীর কল সেন্টারে আপনাকে স্বাগতম, আপনি যদি আমাদের ফ্রি স্যাম্পল টেস্ট করতে চান, তাহলে এই ঠিকানায় চলে আসুন সময় রাত আটটা থেকে নটা।“
নবনী কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে যায়, আর ওর ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে তাতে একটা ঠিকানা লেখা নিয়ার সলানা কবরীস্তান, একবালপুর ,খিদিরপুর , কলকাতা- ২৩।
মেসেজটা পড়তেই নবনীর গাটা কেমন ছমছম করে ওঠে, প্রথম একটু অদ্ভুত মনে হলেও, নবনী ঠিক করে ,না, একটা সুযোগ নিজেকে দেওয়াই উচিত আর এটাতো ফ্রি স্যাম্পল সেরকম হলে আর কিনবে না, কোনো রকমের তাড়াতাড়ি স্কুটি টা বার করে নবনী বেরিয়ে পড়ে ইকবালপুর এর উদ্দেশ্যে ওর বাড়ি থেকে ওখানকার দূরত্ব তিনঘণ্টা তো হবেই, আটটার আগে পৌঁছতে হবে।
ঠিক সাড়ে সাতটা নাগাদ ইকবালপুর পৌঁছলো নবনী, সেখানে গিয়ে একটা দোকানে জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার কিরম একটা অদ্ভুত নজরে ওর দিকে তাকাল, অদ্ভুত গলায় জিজ্ঞেস করলো- “ কি চাই তোমার? ঐ কবরীস্থান এর আশেপাশে কেউ থাকে না,কাকে খুজছো তুমি?”
নবনী পড়ল মহা ফ্যাসাদে ,একেতো একটা এসএমএস এর ওপর ভিত্তি করে এতদূর চলে এসেছে আবার এ বলছে সেখানে নাকি কিছুই নেই হঠাৎ ওর ফোনে একটা কল আসে নবনী ফোনটা বের করে দেখে ওই কল সেন্টারের নাম্বারটা থেকে ফোন আসছে তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে কানে নেয় ফোনের ও প্রান্ত থেকে ফিসফিসে গলাটা আবার বলে ওঠে- “আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে কবরীস্থানের গেটের সামনে চলে আসুন , তার উল্টো দিকে যে ভাঙ্গা বাড়িটা দেখতে পাবেন সেখানে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি, চিন্তা করবেন না, কেশবতী আপনার সমস্ত চাহিদা পূরণ করবে।“
এবারও আগেরবারের মতই নবনীর কোন কথা শোনবার আগেই ফোন টা কেটে গেলো, নবনী হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে স্কুটিটা নিয়ে এগিয়ে গেল, সেই সময় যদি একবার ও পিছন ফিরে দেখতো তাহলে দেখতে পেত দোকানদার চোখ বড় বড় করে ওর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে,আর কিছু একটা বিরবির করছে।
কবরস্থানের গেটের সামনে পৌছতেই নবনীর বড্ড অস্বস্তি হতে লাগলো, চারিদিকটা যেন বেশি ফাঁকা শুধু গেটের সামনে রাস্তার ঠিক উল্টোদিকে একটা ভাঙাচোরা বাড়ি যার গেট টা অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
ও বোকার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারিদিক দেখছে তখনই “আসুন” বলে একটা আওয়াজে নবনী চমকে তাকিয়ে দেখে, গেট টা খুলে গেছে,আর একজন কালো কাপড় পরিহিত মহিলা দাড়িয়ে আছে,অথচ নবনী হলফ করে বলতে পারে, দরজা খোলার আওয়াজ সে পায়নি,আর যা পুরনো দরজা এযে নিঃস্তব্ধ ভাবে খুলবে না ,এত ছোট বাচ্চাও বলে দেবে।
ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর আবার বলে উঠলো – “কি হলো আসুন ,আটটা বাজতে চলল, তাড়াতাড়ি আসুন না হলে আপনি আর সুযোগ পাবেন না।“
এই কথাটুকু বলে পিছন ফিরতেই মহিলার মাথার ওড়নাটা খসে পড়তেই নবনী বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কি চমৎকার সুন্দর মহিলার চুল, মনে হচ্ছে মাথা থেকে এক রাশ কাল নাগিনী ফণা বিস্তার করে নীচে নেমে এসেছে ।
এরপর যে কখন নবনী স্কুটি থেকে নেমেছে আর পায়ে পায়ে মহিলার পিছন পিছন একটা মস্ত বড় ঘরে এসে ঢুকেছে তার নবনীও জানেনা।
নবনী র হুঁশ ফিরতেই ও তাকিয়ে দেখে ও একটি চেয়ারে বসে আছে। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে একটা বেশ পুরোনো বাড়ি, যার দেওয়ালে দেওয়ালে অনেক নারীমূর্তির মুখ গাঁথা রয়েছে,তবে অদ্ভুত যে তাদের কারোর না মুখে হাসি আছে না আছে মাথায় চুল,তাছাড়া চারিদিকে অনেক বড় বড় পাত্রে তরল ফুটছে।
নবনীর বুকটা ধড়াস করে ওঠে, ও চেয়ার থেকে উঠতেই যাবে, তখনই একটা কণ্ঠস্বরে ও চমকে উঠে তাকাতেই দেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক অপূর্ব সুন্দরী মহিলা ,যার কোমর ছাপানো চুল পায়ের গোড়ালি অব্দি পৌঁছেছে, নবনীকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাতে দেখে উনি হেসে বলেন অবাক হচ্ছেন! হবেন না ,আপনি কেশবতী ব্যবহার করে দেখুন মাত্র সাত দিনএ আপনার চুল ও আমার মতই হবে।
নবনী সম্মোহিতের মত বলে উঠলো –“ সত্যি “ ,মহিলাটি খুব সুন্দর ভাবে হেসে উঠে বলল – “ একদম ,তবে সাতদিন আপনি কেশবতী ফ্রী স্যাম্পল ইউজ করবেন যদি আপনার চুল তাতে ভালো হয়ে ওঠে তবে আপনাকে সপ্তাহের শেষ দিন এখানে এসে কেশবতীর মূল্য দিতে হবে,কিন্তু খবরদার যতদিন আপনি কেশবতী ব্যবহার করবেন চুল কাটতে পারবেন না তবে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।“
নবনী মাথা নাড়িয়ে বলল – “ না না, চুল কাটা আমার একদম পছন্দ না আর আমি এখনই দাম দিতে রাজি আছি, শুধু আপনি বলুন সত্যিই কি আমার আপনার মতো এত ঘন লম্বা চুল হয়ে যাবে!”
মহিলাটি হাসতে হাসতে বলে ওঠে-“ হ্যাঁ হবে আমার মতই ঘন লম্বা চুল হবে কিন্তু দাম এখন আপনি দিতে পারবেন না কারণ এটা ফ্রি স্যাম্পল এই চুলের যদি আপনাকে পছন্দ হয় তবেই না সে আপনার হবে!”
নবনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল “চুলের পছন্দ হবে মানে ? ঠিক বুঝতে পারলাম না, আচ্ছা আপনি কি এখন আমাকে টেস্ট করিয়ে দেখাবেন যে কিরকম ভাবে আমি ব্যবহার করবো শ্যাম্পু টা।“
মহিলা একটু গলা নামিয়ে বলল –“আপনার কি মনে হয়, আপনার চুলের বুঝি প্রাণ নেই, তারও তো প্রাণ আছে, তাই আপনি যখন কষ্ট পান সেও নিষ্প্রাণ হয়ে যায় আর আপনি যখন খুশি থাকেন সেও খুশিতে ঝলমল করে ওঠে আর আমার শ্যাম্পু আপনার চুলকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলবে, আপনিও ওকে যত খাওয়াবেন ও তত আপনার প্রাণপ্রিয় সখা হয়ে উঠবে,তবে সাবধান এই স্যাম্পল এক সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করা যাবে না ।“
নবনী হেসে বললো – “ নিশ্চয় মূল্য দেবো,কিন্ত কত দাম এটার সেটা তো বলুন।“
মহিলা হিসহিসিয়ে বলল – এর মূল্য আপনাকে না হয় এক সপ্তাহ পরেই বলবো,আপাতত আসুন আমি আপনাকে দেখাই কিভাবে এটা ব্যবহার করবেন।
এই বলে সে নবনীর চুলটা ভিজিয়ে, একটি পাত্র থেকে তরল তুলে একটি শিশিতে ঢেলে সেখান থেকে দুফোঁটা ওর মাথায় ঢেলে আলতো আলতো করে ওর মাথা ঘষে দিতে লাগলো,আরামে চোখ বুজে এলো নবনীর,ঘুম ভাঙতেই ও তাকিয়ে দেখে ও চেয়ারে বসে আছে,কিন্তু সেই মহিলা কোথাও নেই,হঠাৎ পাশে চোখ পড়তে দেখে সেখানে শিশিটা রাখা, যার গায়ে লেখা আছে কেশবতী।
নবণী চেয়ার থেকে উঠতেই সামনে একটা আয়নায় ওর নজর পড়ে,এটা কি দেখছে ও,ওর মাথার পাতলা চুলে মনে হচ্ছে একটা চুলের পরত পড়েছে,বেশ ঘন মনে হচ্ছে সামনেটা, ও অবাক হয়ে নিজের মাথায় সস্নেহে হাত বোলাতেই মনে হলো যেনো ওর চুল টাও নড়ে ওঠে,ঠিক তখনই পিছনে একটা কান্নার আওয়াজে ও চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে দেওয়ালে একটা নারিমুখের চোখের নিচে জলের রেখা শুকিয়ে আছে, ও এক পা দু পা করে নারীমুখের প্রায় সামনে এসে দাড়াতেই ওর মনে হলো এই মুখ ওর চেনা, এ তো সেই বিখ্যাত মডেল যাকে চারদিন ধরে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
হঠাৎ একটা গলা খাকারির শব্দে ও চমকে তাকিয়ে দেখে সেই মহিলা শিশি টা হাতে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,বড্ড গা শিরশিরকরা দৃষ্টি ওনার,যাইহোক নবনী ওনার হাত থেকে শিশিটা নিয়েই রীতিমত লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পিছনে পড়ে থাকে ভাঙ্গা বাড়িটা যার জানলায় এসে বসেছে সেই মহিলা যার চোখে জ্বলছে খিদের আগুন,সে নিজের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলে ওঠে-“ ব্যাস আর মাত্র সাতটা দিন তারপর,
'বড়োলোকের বিটি লো / লম্বা লম্বা চুল ,
এমন চুলে লাগিয়ে দেবো / লাল রক্তের ফুল', হি হি হি হি,”
তার পৈচাশিক হাসিতে কেঁপে ওঠে বাড়িটা।
এদিকে নবনী বাড়ি পৌঁছতেই অর্ক রেগেমেগে ওর ওপর চিৎকার করে বলে ওঠে –“রাত দশটা বাজে,ফোন টাও বন্ধ ,কি ব্যাপারটা কি? আমি অফিসে আটকে গেছি বলে কি তুমি যা ইচ্ছা করে যাবে।“
নবনী কিছুতেই অর্ক কে বোঝাতে পারলো না যে ও একটা কাজে গেছিলো,অর্ক খেয়ে অন্য ঘরে শুতে চলে গেলে ও নিজের ঘরে চলে এলো, ও জানে এখন অর্ক কোনো কথাই শুনবে না,কিন্তু এখন ও জানে যে অর্কর জন্মদিনে ওকে ও চমকে দেবে নিজের মেকওভার করে।
কেটে গেছে চার দিন,নবনী বেশ বুঝতে পারছে ওর চুলের ঘনত্ব বেড়েছে,আর বেশ লম্বাও হয়েছে চুলটা,কিন্তু একটা অস্বস্থি ওর দুদিন ধরে হচ্ছে,ওর প্রচন্ড ক্লান্ত লাগে আজকাল,খুব ঘুম আর খিদে পায় সারাটাদিন,অর্ক ও নেই বাড়িতে,ঝামেলার পরের দিনই ও অফিস ট্রিপে গেছে,ফিরবে কাল,একদিকে ভালই হয়েছে,অর্ক কে কাল চমকে দেবে ও।
এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফিশ ট্যাংকের দিকে নজর পড়ে ওর ,তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে দেখে ওর সাধের গোল্ডফিশ দুটো অদ্ভুত ভাবে মরে ভাসছে ,এই নিয়ে ওর আটখানা মাছ মরে গেলো আর প্রত্যেক বারই ওদের ছিবড়ে হয়ে যাওয়া শরীরটা জলের ওপর ভাসতে থাকে,এটা নিশ্চই টমি র কাজ আজ আসুক খুব মারবো ওকে।
টমি নবনীর বিড়াল,সাধারণত টমি ওকে ছাড়া থাকতে চায় না কিন্তু এই কেশবতী ব্যবহার করার পর থেকেই টমি যেনো ওর থেকে একটু বেশীই দূরে দূরে থাকে,তখনই কলিং বেলের আওয়াজে নবনী চমকে ওঠে,তাড়াতাড়ি করে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে মধু দাড়িয়ে ওর হাতে একটা ব্যাগ,মুখ দেখে মনে হচ্ছে আবিরের সাথে ঝগড়া করে এসেছে।
“কি রে ,আবার কি হলো?এত রাতে তুই এখানে!” নবনী দরজা লাগাতে লাগাতে মধুকে জিজ্ঞেস করতেই ও থমথমে গলায় বলে – “কেনো রে? একটা রাত কি আমায় থাকতে দেওয়া যায় না!”
নবনী ওকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলে ওঠে – “ পাগলি একটা,যতদিন খুশি থাক,কিন্তু আবিরবাবু কি রাজি হবে?”
আবিরের কথা বলতেই মধুর মুখটা কালো হয়ে যায় হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়ে বলে –“নবনী আমি আর নিতে পারছিনা, আমার আর আবিরের সাথে সংসার করা হলো না বুঝলি এখানে দুইদিন থেকে আমি মায়ের সাথে কথা বলবো আর আমি কারোর কথা শুনবো না এবার ডিভোর্স পাক্কা।“
মধুর কথা শুনে নবনী প্রায় হেসে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে বলে-“ শোন এই নিয়ে আমি দশ বার শুনেছি তুই আর পারছিস না এবার ডিভোর্স, কাল আবার সব ঠিক হয়ে যাবে, ছাড় এখন শুয়ে পর, কাল সকালে আবার অফিস যাওয়ার আছে।“
দুই বন্ধু খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়ল কিছুক্ষণের মধ্যেই নবনী গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় কিন্তু মধুর ঘুম আসছিল না, ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে খুলে দেখে আবির তখনও অনলাইন অথচ ওকে একটা ম্যাসেজ করেনি রাগের চোটে ফোনটাকে পাশে রেখে দেয় ও।
সবে চোখটা লেগেছে মধুর তখনই বিড়ালের আর্তচিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় ওর ,ধরফরিয়ে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে নবনী ঘুমিয়ে কাদা কিন্তু ওপাশ থেকে কেমন যেন একটা সরসর শব্দ আসছে, আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে নবনীর দিকে যেতেই ওর বুকটা ধড়াস করে ওঠে।
নবনীর চুলগুলো যেন আরও লম্বা হয়ে উঠেছে অনেকটা সাপের মত সেগুলো পেচিয়ে ধরেছে টমী কে নবনীর আদরের বিড়ালকে, টমি যতই ছটফট করছে ততই ওই চুল কালসাপের মতো ওকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে নিচ্ছে, মধুর চোখের সামনে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই টমির শরীরটা একদম ছিবড়ে হয়ে যায়।
আতঙ্কে মধু স্তব্ধ হয়ে যায়, কোনরকমে নিজের জায়গায় এসে শুয়ে পড়ে ও, সারাটা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনা মধু ,এটা কি করে সম্ভব? মানুষের চুল কিভাবে একটা প্রাণীকে এভাবে ছিবড়ে করে দিতে পারে! ওর প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল, যে কিভাবে হঠাৎ নবনীর চুলের এভাবে ঘনত্ব বাড়ছে , কিন্তু ও বলেছিল একটা সিক্রেট শ্যাম্পু ব্যবহার করছে ও,কিন্তু কাল ওকে দেখতেই হবে সেটা কি ! কারণ আজ নবনী কে দেখেই ও বুঝতে পেরেছে যে এসব কিছুর ব্যাপারে নবনী কিছুই জানেনা, কিছু একটা ভয়ঙ্কর এর মধ্যে ফেঁসে গেছে নবনী।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নবনী দেখে মধু পাশে নেই,উঠে নিচে পা রাখতেই চমকে ওঠে ও, এ কি! টমির নিথর শরীর টা পড়ে আছে ওর বিছানার পাশে,”টমি” বলে চিৎকার করে ওঠে নবনী, কাঁদতে কাঁদতে টমি র পাশে বসে পড়ে ও,হঠাৎ ই একটা পায়ের আওয়াজে সামনে তাকিয়ে দেখে মধু দাড়িয়ে আর ওর হাতে কেশবতীর শিশি টা।
গম্ভীর ভাবে মধু বলে ওঠে,- “তোর টমির মৃত্যুর জন্য দায়ী এটা তোর এই সিক্রেট শ্যাম্পু, আমি কাল নিজে চোখে দেখেছি তোর চুল কিভাবে টমিকে মেরেছে নবনী,এই শ্যাম্পু তোকে আমি আর ব্যবহার করতে দেবো না,এই বলে সে শিশি টা খুলে মেঝেতে ঢালতে যেতেই নবনীর একগোছা চুল শিশিটা ঝাপটে নেয়,কিন্তু ততক্ষণে একফোঁটা শ্যাম্পু মাটিতে পড়ে যায়,প্রায় সাথে সাথেই নবনীর সারা মাথা জ্বলতে থাকে,ব্যাথার চোটে অজ্ঞান হবার আগে ও দেখতে পায়, ওর কালো চুল কালনাগিনী র মত ধেয়ে যাচ্ছে মধুর দিকে –
বেশ কিছুক্ষন পর নবনীর জ্ঞান ফিরতেই ও ধরফরিয়ে উঠে দেখে ও বিছানাতে শুয়ে আছে,সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই, “ওফ্ মনে হয় স্বপ্ন দেখছিলাম, কি ভয়ানক !” নিজের মনেই বলে ওঠে ও তখনই হঠাৎ করে ওর মধুর কথা মনে পড়তেই ও “ মধু মধু “ বলে ডাকতে থাকে,কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়,তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দেখে মধুর ব্যাগ টাও নেই,আর দরজাটা ভেজানো, ও মধু কে ফোন করে কিন্তু ফোন টা সুইচ অফ বলে,ঠিক তখনি ওর ফোনে একটা এসএমএস আসে,নবনী তারাতারি সেটা খুলে দেখে,একটা অচেনা নম্বর থেকে মধু লিখেছে যে ও কিছুদিনের জন্য আউট অফ টাউন যাচ্ছে, ও একটু একা থাকতে চায়।
এতক্ষন পর নবীনা একটু নিশ্চিন্ত হলো,যাক তারমানে স্বপ্নই ছিল,আর তাছাড়া এসব আবার হয় নাকি ধুর যতসব,আজ আবার রাতে অর্ক কে সারপ্রাইজ দিতে হবে,তাড়াতাড়ি করে ও ফ্রেশ হতে গেলো।কিন্তু নবীনা এটা দেখতেই পেলো না যে ও ফোন টা হাত থেকে রাখতেই এসএমএস টা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেলো।
স্নান করে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই নবীনা র নিজেকে আজ একদম অন্যরকম লাগলো,ওর মুখের সেই ক্লান্ত ভাব টা সরে গিয়ে একটা অদ্ভুত চাকচিক্য এসেছে,আর কোমর অব্দি নেমে এসেছে একঢাল কালো কুচকুচে চুল এ যেনো সেই রূপবতী রাজকন্যার কুচবরণ চুল,আজ অর্ক একদম অবাক হয়ে যাবে।
অফিস থেকে আজকে একটু তাড়াতাড়ি বেরোলো নবনী,পার্লারে গিয়ে একটা হালকা গেট আপ সেরে বাড়ির দরজায় এসে পৌঁছল,এবার ক্লাইম্যাক্স,অর্ক বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরেছে,আর নবনী ওকে বলেছে ওর দেরি হবে আজ ফিরতে,এবার চুপি চুপি ও ঘরে ঢুকে সারপ্রাইজ দেবে ও অর্ক কে।
দরজায় চাবিটা লাগিয়ে দরজা টা খুলতেই একটা হাল্কা রোমান্টিক মিউজিক এর আওয়াজ পেল ও,আস্তে আস্তে গিয়ে বেডরুম দরজাটা ঠেলতেই ও স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে পড়লো,ওদের বিছানায় অর্ক অন্য একটা মেয়েকে আদর করছে।
“অর্ক” নবনী র চিৎকারে চমকে গিয়ে অর্ক তাকিয়ে দেখে দরজায় নবনী দাড়িয়ে,ওর চোখ লাল হয়ে আছে,অর্ক অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে মেয়েটা বলে ওঠে,- “ এ কে জানেমন,তুমি তো বলেছিলে তোমার বউ নাকি বুড়ি,মাথায় চুল নেই কিন্তু এ তো একদম ঝাক্কাস।“
মেয়েটার কথা শেষ হবার আগেই নবনীর চুল ফাঁস হয়ে মেয়েটার গলায় আটকে যায়,মেয়েটা যখন নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ছটফট করছে,তখন আস্তে আস্তে নবনী অর্কর দিকে এগোতে থাকে,ওর চোখে ঘৃনা,দুঃখ,অপমান মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
“কেনো করলে এরকম অর্ক কেনো?” নবনী র কথায় আমতা আমতা করে অর্ক বলে ওঠে – “আমায় ক্ষমা করে দাও,প্লিজ একটা সুযোগ দাও,একটা,দেখো তোমাকে তো এখন কত সুন্দরী লাগছে,আমি তোমাকে আবার আগের মত ভালোবাসবো।“
নবনী হাহাকার করে হেসে ওঠে,হাসতে হাসতে বলে –“দেখবে আরো সুন্দর হবো আমি “এই বলেই মেয়েটার দিকে তাকাতেই অর্ক দেখে নবনীর চুল মেয়েটাকে পুরোপুরি আকড়ে ধরেছে,মেয়েটা চিৎকার কি নড়তে পর্যন্ত পারছে না ,কয়েক মুহূর্ত তারপরই মেয়েটার পোশাক ছাড়া আর কিছুই বেচেঁ রইলো না ,নবনী কেশরাশি ওর কোমর বেয়ে আরেকটু নিচে নেমে কালনাগিনীর মত দুলতে লাগলো,আর নবনীর মুখশ্রী আরো সুন্দর হয়ে উঠলো।
এ সব দেখে অর্ক হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পরলো ,অনুনয় করতে লাগলো ওকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু নবীনা চিন্তাশক্তি সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে প্রতিশোধের আগুনে এতটাই মত্ত হয়ে উঠেছে যে ও বুঝতেই পারছেনা এই আগুনে ওর ও হাত পুড়বে।
নবীনার হাতের একটা ইশারায় ওর সর্পিল কেশরাশ আঁকড়ে ধরলো অর্ক কে,কয়েক মুহূর্ত মাত্র মেঝেতে অর্কর জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুই বেচেঁ রইলো না।এরপর নবনী টলতে টলতে বাথরুমে যেতেই ও হাহাকার করে কেঁদে উঠলো।
কি লাভ এই চুলের,কি লাভ এই বলে সে রাগের চটে শ্যাম্পুটা ফেলতে যাবে ঠিক সেই সময় ও বুঝতে পারলো কেউ একজন ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঢুকেছে, কি মনে করে ও শিশিটা নামিয়ে একদম চুপচাপ দাড়িয়ে রইল ,শুনতে পেল বাইরে থেকে একটা পুরুষকণ্ঠ তার নাম ধরে ডাকছে।
এটা তো আবির এর গলা তার মানে মধু ও এসেছে সাথে। ও তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই দেখলো আবির ওর দিকে পিস্তল তাক করে দাড়িয়ে আছে,ওর চোখে জল।
নবনী প্রথমে অবাক হলেও এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে মধু কোথাও নেই তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে মধু কোথায় আর তোমার হাতে পিস্তল কেন?
আবির চাপা গলায় বলে ওঠে- “ মধু কোথায় তুমি জানো না ,মধু কোথায়? মধু তো তোমার কাছে এসেছিল, আর তুমি ওকে মেরে ফেললে, ও তো তোমাকে বেস্টফ্রেন্ড মনে করত , কি করে করলে এটা তুমি নবনী, মধুকে আমি ভালোবাসি, তুমি আমার ভালবাসাকে কেড়ে নিলে ।
নবনী হতবাক হয়ে গেল, মাথাটা দুপাশে নাড়িয়ে চিৎকার করে বলল- “তুমি মিথ্যা কথা বলছো, মধুকে আমি মারবো ,প্রাণের চেয়ে প্রিয় বন্ধু আমার ও, আজকে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি ওকে দেখতেই পাইনি, আমি মধু কে মারতে পারি না, কিন্তু হ্যাঁ খুন করেছি আমি, অর্ক কে মেরেছি আর ওর সঙ্গিনীকে মেরেছি তবে মধুকে আমি মারিনি”।
আবির এবার একটু চমকে যায়,কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে –
“ আমি সেসব কিছু জানিনা আমি শুধু জানি,মধু আমাকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে,আর সেটাতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তুমি তোমার চুল দিয়ে ওকে মেরে ফেলেছো,আর ও গায়েব হয়ে গেলো,তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না দেখো তাহলে” বলে আবির নিজের ফোন বার করে ভিডিও অন করলো।
কিছুটা দেখেই নবনী আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো -”এটা হতে পারেনা,আমি তো এটা স্বপ্নে দেখছিলাম,এটা বাস্তব হতে পারে না” এই বলে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আর ঠিক সেই সময় নবনীর খোলা চুল সাপের মত ফুঁসে ওঠে,ওর মাথার চারিদিকে উড়তে থাকে,এটা দেখে আতঙ্কে আবির পিস্তল টা তাক করে গুলি করতে যাবে ঠিক সেই সময় নবনীর একগোছা চুল ক্ষিপ্ত সর্পিনী র মত ধেয়ে গিয়ে আবীর এর পিস্তল টা ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ওকে অজগরের মতো পেঁচিয়ে ধরে,আবিরের গলা থেকে একটা অস্ফুট আর্তনাদ বেরিয়ে আসে ।
আবিরের আর্তনাদ এ নবনী চমকে উঠে সামনে তাকাতেই সেই বীভৎস দৃশ্য দেখতে পায়, ও” না না” করে উঠলেও কোনো লাভ হয় না, এক মুহূর্তের মধ্যে নবনীর কেশ রাশি সরে যেতেই আবিরের জামা কাপড় ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
নবনী চিৎকার করে কাঁদতে থাকে,কিন্তু কলকাতা শহরের বহুতলের বাসিন্দারা কেউই নিজেদের সাউন্ড প্রুফ ঘরের ভিতর থেকে কিছুই শুনতে পান না,ঠিক তখনই খুট করে একটা আওয়াজে নবনী চমকে তাকিয়ে দেখে তার চুলের গোছা ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে।
নবনী আতঙ্কে লাফিয়ে ওঠে,রীতিমত দৌড়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর দেরাজে খুঁজতে থাকে কাঁচি,আজ এই অভিশপ্ত চুল থেকে ওকে রেহাই পেতেই হবে, ও বুঝতে পারে যে বার বার ওর কেশরাশি ওকে আটকানোর চেষ্টা করছে, এ কোন রকমে দেরাজ থেকে কাঁচি টা কে টেনে বার করে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে ওঠে ও, এ কাকে দেখছে ও, এ যেনো পুরো স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা, কুচবরন চুল গোড়ালি অব্দি লুটিয়ে পড়েছে,আর ওর মুখশ্রী তে ফুটে উঠেছে অদ্ভুত লাবণ্য,নিজের রূপে নিজেই মোহিত হয়ে যায় ও কিন্তু বেশিক্ষণ নয় তার মনে পড়তে থাকে কিভাবে এই চুল ওর টমি কে মেরেছে,মধু কে মেরেছে,আর আবির কেও.....মুঠো শক্ত হয়ে ওঠে ওর।
এক হাতে চুলের গোছাটা ধরে কাঁচি টা চালাতে যেতেই ওর আরেক গোছা চুল ওর হাত টা আটকে ওকে ছিটকে ফেলে দেয় এরপর নবনীর চোখের সামনে ঘটতে থাকে এক নারকীয় ঘটনা,ওর মাথার সমস্ত চুল ওকে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়,যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারায়।
বেশ কিছুক্ষন পর যখন নবনীর জ্ঞান ফিরল,তখন ও দেখলো ও সেই পুরোনো বাড়িটায় আছে যেখানে ও কেশবতী নিতে এসেছিল,কিন্তু একি ! ও হাত পা নাড়াতে পারছে না কেনো? এমনকি ও নিজের মুখটাও ঘোরাতে পারছে না।
হঠাৎ ওর কানে একটা সুর ভেসে ওঠে –
“ বড়োলোকের বিটি লো / লম্বা লম্বা চুল,
এমন চুলে লাগিয়ে দেবো / লাল রক্ত ফুল....”
ও দেখে,সেই মহিলা একটা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে ,হঠাৎ সে পিছন ফিরে নবনীর দিকে এগিয়ে আসে ,আরো অপরূপা হয়ে উঠেছে সেই মহিলা,হাসতে হাসতে বলে ওঠে – “কি হলো নবনী,তোমাকে না বলেছিলাম চুল কাটবার চেষ্টা করবে না,দেখো কি হলো? এবার তুমিও এই বাকিদের সাথে এখানেই থাকবে, সারা জীবনের জন্য।“
নবনী বলতে চাইলেও কিছুই বলতে পারলোনা শুধু দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা জল,তার ও স্থান হয়েছে ওই ভাঙ্গা ঘরের ধরহীন মূর্তি দের পাশে।
ওদিকে সেই দোকানদারের সামনে আবার এসে দাঁড়ায় একটা গাড়ি,গাড়ি থেকে নেমে এক মহিলা খোঁজ করেন কেশবতী র দোকানের,তখনই বেজে ওঠে মহিলার ফোন।
মহিলা গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যেতেই দোকানদার বিড়বিড় করে বলে ওঠে–
“রূপবতী রাজকন্যার কূচবরণ কেশ। ক্রমিক নং ১০২৩।“
Comments