The Deadly Prank
মন্দিরা পাল
--তুই বুঝতে পারছিস, এরপর বাবা জানতে পারলে কি হবে? আমার তো পড়াশুনোই বন্ধ হয়ে যাবে |
--তুই চাপ নিসনা তিথি | ঐ মৈনাকের একটা ব্যবস্থা আমি করবোই |
--কি? কি করবি তুই সায়ন? দেখ আর কিছু করিস না | এমনিতেই হেডস্যার আমাদের ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন আজকের মতো | এরপর গার্জিয়ান কল হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না | আর এবছর আমাদের এইচ. এস., কিছু উল্টোপাল্টা করবি তো দেবে রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করে |
--তুই বড্ডো ভয় পাস তিথি | তুই আর আমি ক্লাস বাংক করে প্রেম করছিলাম এই তো? তো ক্লাস টুয়েলভে পরা দুটো প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের ব্যাপারে লোকজনকে এত নাক গলাতে কে বলেছে টা কে?
--তোকে আমি তখনই বলেছিলাম, কেউ আসছে | দেখলো তো দেখলো মৈনাকই আমাদের দেখলো? অন্য কেউ দেখলে তবু ম্যানেজ করা যেত | প্রিয়াঙ্কাও তো জানে আমাদের কথা, শুভমও জানে, কেউ বলতে গেছে কোনোদিন? এই ছেলেটার যে কি সমস্যা, দিলো হেড স্যারকে বলে | এরপর যদি বাড়িতে বলে দেয়? কি হবে তখন?
--তুই কিছু ভাবিসনা তিথি | কাল একটু তাড়াতাড়ি স্কুলে আসিস | আমি দেখছি কি করা যায় | এখন বাড়ি যা | কাল কথা হবে | লাভ ইউ | বাই |
নির্জন গলিটার শেষে এসে দুটো সাইকেল দুই দিকে চলে গেলো | এই রাস্তাটায় অনেকটা ঘুরপথ হয় | তবুও তিথি আর সায়ন রোজ এই পথেই ফেরে | কৈশোরের প্রেমের যে বড় ভয় | আর এখন এই প্রেমিক যুগলের সবচাইতে বেশি ভয় মৈনাককে |
মৈনাক ওদের সহপাঠী, ক্লাসের ফার্স্ট বয় | পড়াশুনোয় ভালো ছেলেটি নিপাট সহজ সরল, যতটা বুদ্ধি তার ক্যালকুলাসে খোলে ততটা ঠিক বাস্তবে খোলে না | বাথরুমে যাওয়ার পথে সহপাঠী দুজনকে ক্লাস বাদ দিয়ে প্রেমালাপ করতে দেখে সে কিন্তু নিতান্তই শিশুসুলভ বুদ্ধিতে কথাটা হেডস্যারকে বলে দিয়েছে | সে ভেবেছে ক্লাস বাদ দেওয়াটা ওদের মোটেও উচিৎ হয়নি | তাই হেডস্যারকে জানিয়েছে যাতে আখেরে ওদেরই ভালো হয় | যাক সে কথা, এবার আসল গল্পে আসি | মৈনাকের ওপর বেজায় চটে যাওয়া প্রেমিক যুগল ঠিক করলো মৈনাককে একটা শিক্ষা দেবে | ভয়ঙ্কর কিছু ভাবার মতো ক্ষমতা তিথির ছিলো না, কিন্তু সায়ন বরাবর বখাটে ছেলে, মাস্টার প্ল্যানটা তার মাথার থেকেই এলো |
পরদিন প্রার্থনা সংগীতের আগে তিথি আর সায়ন একটা ফাঁকা জায়গা দেখে দেখা করলো |
--তোর প্ল্যানটা কি?
--মৈনাক এসেছে আজ?
--হুম |
--ওর ভাই সৌনক এসেছে? ওর ভাইকে চিনিস তো? ক্লাস সেভেন বি সেকশন |
--হ্যাঁ চিনি, কেনো বলতো?
--এসেছে কিনা বল না?
--হুম দেখলাম তো |
--শোন যা করতে হবে তা টিফিন আওয়ারের শুরুতেই শুরু করতে হবে, টিফিনে মৈনাক ওর ভাইয়ের কাছে যাওয়ার আগেই | আমার প্ল্যানটা তিনতলার বন্ধ বায়োলজি ল্যাব নিয়ে |
--তুই কি পাগল হলি সায়ন? তুই জানিস ঐ ল্যাব প্রায় সত্তর বছর ধরে বন্ধ হয়ে পরে আছে? ইনফ্যাক্ট এটা তো জানিস যে তিনতলার আর কোনো রুমই ইউস হয়না | পুরোটার কনস্ট্রাকশনই হয়ে ওঠেনি | কি কি ভয়ঙ্কর গল্প আছে ঐ ঘরটাকে নিয়ে জানিস?
--ওহো তাই নাকি? কি গল্প রে তিথি? বলনা |
--তবে শোন, তখন আমাদের স্কুল বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে | পুরোটা তৈরী হয়নি | তিন তলায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজির ল্যাব ছিল | বাকি রুমগুলো তৈরী হচ্ছিলো | এখনকার মতো তখন প্লাস্টিকের কঙ্কাল দিয়ে ক্লাস হতো না, সত্যিকারের কঙ্কাল ব্যবহার হতো | তো নতুন ল্যাবে প্রায় সব জিনিসই কেনা হয়ে গেছে, সমস্যার শুরু হোলো যখন কঙ্কাল আনা হোলো | শুনেছি হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশ গুলোর কঙ্কাল নাকি ল্যাব ওয়ার্ক এর জন্য বিক্রি হোত | তো ঐ কঙ্কাল আনার পর থেকেই ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা | ল্যাবের সাপ, ব্যাঙ বিভিন্ন প্রাণীর ফর্মালিনে রাখা স্পেসিমেনগুলো রাতারাতি উধাও হয়ে যায় | কেউ একা ঐ ঘরে গেলেই নাকি পেছন থেকে কেউ ধাক্কা দেয় | ক্লাস চলাকালীন একবার একটি ছেলের ওপর চালু ফ্যান খুলে পরে, ঐ ছেলেটি ওখানেই মারা যায় সাথে আরো দুজন স্টুডেন্ট ইনজিউরড হয় | একদিন টিফিন এ ফাঁকা সময়ে একটি মেয়ে ঐ ল্যাবরুমে বিষ খেয়ে আত্ম হত্যাও করে | তারপর যা হয় আর কি, স্টুডেন্টদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ে আর বাধ্য হয়ে ল্যাব শিফট করতে হয় | বাকি দুটো ল্যাবের জিনিসপত্র শিফট করা গেলেও বায়োলজি ল্যাব থেকে কিছুই সরানো হয়নি | রাতে অদ্ভুত সব আওয়াজ হয় ঐ ঘরে, গার্ড কাকু বলেছে | শুনেছি ঐ কঙ্কালের দিকে নাকি বেশিক্ষন একভাবে তাকিয়ে থাকা যায়না, ইনফ্যাক্ট ঐ সময়কার যারা স্টুডেন্ট ছিলো তারা নাকি ঐ রুমে যেদিন প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতো সেই রাতে কিছু না কিছু ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখতোই, টিচারদের রিঅ্যাকশন কি ছিলো কেউ জানেনা কিন্তু টিচার হয়ে তো আর কেউ ভৌতিক ব্যাপারকে সরাসরি সাপোর্ট করবে না তাইনা | আর তাছাড়া স্কুলের রেপুটেশন বলেও তো একটা কথা আছে | শুনেছি চল্লিশ বছর আগে একবার ক্লাস ইলেভেন এর একদল ছাত্র কৌতূহলবশে লুকিয়ে ঐ ঘরে ঢোকে, সেসময় স্কুলের যে গার্ড ছিলো তার কাছ থেকে কিভাবে যেন চাবি ম্যানেজ করেছিল | তারা কেউই আর ফেরেনি | তাদের কোনো খবর কেউ জানেনা | পরদিন ল্যাবরুম বাইরে থেকে তালা বন্ধ অবস্থাতেই ছিলো | কারোর সাহস হয়নি রুম খোলার | সেই সময় নাকি এই ঘটনার জন্য আমাদের স্কুল প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল | তারপর স্কুল অথরিটি রাজনৈতিক দলের লোকজন ধরে শেষ রক্ষা করে আর কি | তাই বলছি সায়ন...
তিথিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সায়ন অট্টহাস্যে হেসে উঠলো |
--তুই এইসব বিশ্বাস করিস? তুই একজন শিক্ষিত মেয়ে, ইনফ্যাক্ট সাইন্স স্টুডেন্ট হয়ে এইসব বিশ্বাস করিস? আমি এই গল্প বহুবার শুনেছি, স্কুলে এই গল্প জানেনা এমন কেউ নেই | আমি যতদূর জানি ফান্ড এর জন্য তিন তলার রুমগুলো কমপ্লিট হয়নি আর যেই রুমগুলোকে তোরা ল্যাব বলিস, ওগুলোও জাস্ট এমনি রুম | ইউস হয়না তাই তালা দিয়ে রেখেছে আর এত রুমের করবেটা কি? যাতে বাচ্চা কাচ্চা ওপরে গিয়ে দুস্টুমি না করে, পরে টরে না যায় তাই এইসব গল্প | গল্পের আর দোষ কি, তার সঙ্গে তো ডাল পালা জুড়তেই থাকে | সো মাই লাভ, প্লিজ ডোন্ট লিসেন টু দ্যা রিউমরস | সবাইকে বিশ্বাস করতে দে এইসব গাঁজাখুরি | আমি টিফিনে গিয়ে ঐ বায়ো ল্যাবে লুকিয়ে থাকবো | তুই গিয়ে মৈনাককে বলবি, ওর ভাই একা একা তিন তলায় ঐ বায়োলজি ল্যাবে চলে গেছে | মৈনাক যখন এখানে আসবে আমি লুকিয়ে থেকে ওকে ভয় দেখাবো | এমনিতেই ও যা ভীতু, তারপর তোর মতো ওও এসব গল্পে বিশ্বাস করে | যা হাবা গোবা তাতে এটুকুতেই কাজ হবে |
--তালা বন্ধ রুমটা খুলবি কিভাবে?
--পকেট মানি ম্যানেজ করতে বাবার আলমারির লক খুলতে পারি আর একটা জং ধরা তালা খুলতে পারবো না?
--পরে যখন জানাজানি হবে যে তালা খোলা তখন যদি তোর কথা জেনে যায় সবাই?
--ধুর.... আমি কি লোককে দেখিয়ে ওপরে যাবো? আমি মৈনাকের সামনেই আসব না | স্কুলে তো চোর ও আসতে পারে তাইনা, পরে এই নিয়ে কোনো কথা উঠলে ডিনাই করে যাবি, একদম অস্বীকার |
--কিন্তু ও যদি আমার কথা শুনে টিচারদের বলতে যায় আর যদি টিচারদের কাউকে নিয়ে ওপরে চলে যায়?
--দেখ তিথি এটা ম্যানেজ দেওয়া তোর ওপর | না পারলে আজই ব্রেক আপ যা |
--আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু শোন না, পাশের কোনো একটা রুমে যা করার কর না হয় | ঐ ল্যাবটায় না গেলেই নয়?
--না | বাকি রুম গুলোর জানালা ভাঙা, ভেতরে কিছুই নেই | লুকোবো কোথায়? আর ঐ ল্যাবকে নিয়ে এত গল্প, ওখানেই ভয় দেখানোটা সার্থক হবে | এই প্রেয়ারের বেল পরে গেছে, চল চল |
টিফিন এ সব কিছু প্ল্যান মাফিক করবে বলে তিথি গেল মৈনাকের কাছে | মৈনাকের বিশ্বাস ফিরে পেতে তিথি আগেই ওর কাছে কালকের ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে, সহজ সরল মৈনাকও তাতে বিশ্বাস করেছে | এবার আসল খেলা শুরুর সময় |
--ঐ মৈনাক, শোন না তোর ভাইকে তিন তলায় যেতে দেখলাম | তাড়াতাড়ি যা | ওখানেই তো ঐ ভয়ঙ্কর ল্যাব রুমটা | ও আবার ওখানে না চলে যায় | তুই প্লিজ তাড়াতাড়ি যা |
--কি বলছিস? দাড়া আমি টিচারস রুমে কাউকে জানাই, কাউকে সাথে করে নিয়ে যাই |
--ওতো সময় নেই | তুই যা আমি টিচারস রুমে গিয়ে কাউকে নিয়ে আসছি |
এরপর তিথি চলে যায় সৌনকের কাছে, কোনো ভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওকে মৈনাকের চোখের সামনে আসা থেকে আটকাতে হবে |
মায়ের চুলের কাঁটা দিয়ে দক্ষ হাতেই তালা খুলেছে সায়ন | ভেতরে যেমন উৎকট গন্ধ তেমনি ঘুটঘুটে অন্ধকার | কিচ্ছু দেখা যায়না | চলতে ফিরতে পায়ের কাছে কিসে যেন বারবার হোঁচট খাচ্ছে ও | একটু পর সায়ন বুঝতে পারলো ওর পায়ের ওপর দিয়ে কিছু একটা চলে গেলো | গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ওর | মনকে সান্তনা দিতেই হোক আর সাহসের পরিচয় দিতেই হোক, সায়ন ভেবে নিলো ওটা ইঁদুর হবে হয়তো | আস্তে আস্তে পা ফেলে এগোতে লাগলো সায়ন | কিছু একটা উড়ে যাওয়ার আওয়াজ, বোধহয় বাদুড় হবে | হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন সায়নকে এক ধাক্কা দিলো | বুকটা ধড়ফড়িয়ে উঠলো ওর |
--কে? কে? মৈনাক এলি নাকি?
ধুর কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না | ওহো পকেট এ তো একটা ছোটো টর্চ এনেছি, এতক্ষন এসেছি অথচ একবারও মনে পড়েনি | ভুলেই গেছিলাম | কি ব্যাপার এটা জ্বলছে না কেনো |
পরপর কয়েকবার হাতের ওপর টর্চটা সজোরে মারতেই সেটা আবছা আলোর সাথে জ্বলে উঠলো | টর্চ এর আলোটা জ্বালিয়ে সায়ন পেছন ফিরে দেখলো যে কেউ কোথাও নেই | টর্চ এর আলোটা প্রায় সারাটা ঘর ঘুরিয়ে দেখলো সত্যিই কেউ নেই | সারা ঘরে ঝুলে আছে অজস্র মাকোড়সার ঝুল, একটু দূরে দেখা যাচ্ছে সেই কঙ্কালটাকে যার কুখ্যাত গল্প সারা স্কুলে প্রচলিত | আস্তে আস্তে ভেতরের দিকে যেতে লাগলো সায়ন | হঠাৎ বা দিকে ঘুরতেই মনে হোলো কাঁচের বাক্স এ রাখা কঙ্কালটা যেন অনেকটা এগিয়ে এসেছে | মনকে শক্ত করে সায়ন ভাবলো এ তার মনের ভুল, হাঁটতে হাঁটতে সেই আসলে অনেকটা এগিয়ে গেছে হয়তো | আচমকা আবার একটা ধাক্কা সাথে কারোর হেটে যাওয়ার আওয়াজ, সায়ন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তার পেছনদিকটায় |
--দেখ মৈনাক তুই কোথাও লুকিয়ে থাকলে কথা বল, তুই আমাকে ধাক্কা দিচ্ছিস কেনো? আমি কিন্তু হেড স্যারকে বলে দেবো যে তুই আমাকে জোর করে এখানে এনেছিস | কিন্তু..... কিন্তু মৈনাকের কি এত বুদ্ধি হবে আমাকে ভয় দেখানোর? তবে কি তিথি এলি নাকি রে? ও হ্যালো ম্যাডাম, আমি একটুও ভয় পাইনি ওকে? এবার সামনে আসুন | আনতে পারলি না মৈনাককে, তোর দ্বারা কিসসু হবে না | তিথি.....
এর পরের ধাক্কাটায় হাত থেকে টর্চটা পড়ে গেলো সায়নের |
মেঝের থেকে টর্চটা তুলতে গিয়ে হাড় হিম হয়ে গেলো ওর | এ কি দেখছে ? এতক্ষন তো মেঝের দিকে লক্ষই করেনি ও | সারা মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কত হাড়, মাথার খুলি, স্কুলের ব্যাজ | শরীর দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো | ফিরে যাওয়াই ঠিক মনে হোলো তার | কিন্তু সে হাঁটতে হাঁটতে ল্যাবের অনেকটা ভেতরে চলে এসেছে | দরজা কোন দিকে ছিলো তার মনে নেই | ঘরের মধ্যে এলোপাথারি হাঁটতে লাগলো সে | একি, এ কি দেখতে পাচ্ছে সায়ন? মেঝেতে পড়ে থাকা হাড় গুলো নড়ছে | না তাহলে তিথি ঠিকই বলে | এই জায়গাটা সত্যি ভুতুরে, পালতে হবে, পালাতেই হবে | কোনোরকমে দরজাটা খুঁজে পায় সায়ন | একি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ হোলো কি করে?
--হেল্প হেল্প..... কেউ আছো? দরজা খোলো |
মেঝেতে পড়ে থাকা হাড়গুলো আস্তে আস্তে একে অন্যের সাথে জুড়ে যাচ্ছে | তারা কঙ্কালের রূপ পাচ্ছে, খুলিগুলো গড়িয়ে উঠে যাচ্ছে সেই কঙ্কালের ঠিক মাথার জায়গাটায় | আস্তে আস্তে কঙ্কালগুলোএগিয়ে আসছে সায়নের দিকে | তারা এক এক করে সায়নকে ধাক্কা মারছে | যেন নিজেদের মধ্যে কোনো খেলায় মেতেছে তারা | সায়নকে নিয়ে লোফালুফি করছে একদল নরকঙ্কাল, তাদের ঠান্ডা স্পর্শ এ সায়নের হাত পা যেন অবশ হয়ে আসছে |
--না না....
হঠাৎ কাঁচ ফেঁটে যাওয়ার আওয়াজ | এবার কাঠের ফ্রেমওয়ালা জায়গাটা থেকে নেমে আসছে সেই কঙ্কাল, তার চোখ দুটো লাল আগুনের গোলার মতো জ্বলছে | রিনরিনে গলায় সে বলে উঠলো,
--আনন্দ কর | আজ কতদিন পর কেউ এসেছে | আমাদের দলে আজ নতুন কেউ এলো, ওর অভিষেক কর |
কথাটা শেষ হতেই বাকি কঙ্কালগুলো যেন জাপটে ধরলো সায়নকে | জীবন্ত সায়নের হাত পা থেকে খুবলে খেতে লাগলো মাংস | সায়ন নিজেই নিজের হাত পা গুলোকে কঙ্কাল হতে দেখছে | সারা ঘরময় বাদুড় উড়ে বেড়াচ্ছে এলোমেলো ভাবে | টর্চটা একা একাই বন্ধ হয়ে গেছে নাকি কোনো এক কঙ্কাল খুবলে নিয়েছে সায়নের চোখ সায়ন তা জানেনা |
পরদিন সায়নের নামে মিসিং কমপ্লেইন ফাইল হোলো | স্কুল কর্তৃপক্ষ চল্লিশ বছর পর আবার প্রশ্নচিহ্নের মুখে | সেদিন ওপরে গিয়ে তিন তলার বারান্দায় অনেক খুঁজে কাউকে না পেয়ে ফিরে আসে মৈনাক | ঘরগুলো সব তালা বন্ধ ছিলো বলে সে নিচে চলে আসে | এসে দেখে তার ভাই মাঠে খেলছে | টিচারস রুমে তিথির নামে অভিযোগ করতে সে যায় ঠিকই কিন্তু টিফিন আওয়ার চলায় কেউই মৈনাককে বিশেষ পাত্তা দেয় না, "পরে দেখছি, এখন যাও তো |" বলে কাটিয়ে দেন হেড মাস্টার মশাই |
ঐ দিনের পর থেকে তিথির আচরণ অস্বাভাবিক | মৈনাককে দেখলেই এড়িয়ে চলে আর তিনতলার দিকে কেমন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে | ঐ ঘটনার পর প্রায় তিনদিনের মাথায় তিথি দেখা পায় সায়নের, সেদিন খুব বৃষ্টি, স্কুলে তেমন কেউ আসেনি |
--কিরে? কোথায় ছিলিস তুই? জানিস সেদিনের পর থেকে কত ভয়ে ভয়ে আছি |
--আরে রিলাক্স | সেদিন ঐ রুমে গিয়ে কি দেখলাম জানিস নাতো | পুরো হরর স্টোরি লেখা হয়ে যাবে |
--থাক, সেই থেকে তুমি উধাও, সেটা কি কম হরর স্টোরি |
কোথায় ছিলি বল? আঙ্কেল শুনলাম মিসিং কমপ্লেইন করেছেন |
--আরে সেদিন আমি টিফিনের পর স্কুল থেকে পালিয়ে যাই, পরদিন বাড়ি ফিরেছি | স্কুলে যদি মৈনাক কিছু বলে দেয় তাই দুদিন আসিনি | আই শোন না তিথি, চল না তিন তলায়, প্রেম করার হেব্বি জায়গা রে, মাইরি বলছি কেউ আসবেও না, জানবেও না |
--থাক | এক্ষুনি প্রেয়ারের বেল পড়বে | সেদিন তোর প্ল্যান শুনতে গিয়ে প্রেয়ারে লেট্ হোলো, কত বকা খেতে হোলো | সেদিন রাতেও বাড়ি ফিরিসনি তো কোথায় ছিলিস? আমার ফোনও তো ধরিস না | অদ্ভুত ছেলে রে তুই | আর শোন আমার কোনো ভুতুরে জায়গায় যাওয়ার শখ নেই | আর আমি কিন্তু তোর ওপর ভীষণ রেগে রয়েছি, ভীষণ |
--আরে , সেদিন বললি না, চল্লিশ বছর আগে একদল স্টুডেন্ট নাকি উধাও হয়ে গেছিলো ঐ রুমে, আমি সেই রহস্য সমাধান করে ফেলেছি |
--কি বলিস? সত্যি?
--একদম ষোলো আনা সত্যি |
--ছাড় আমার জানার ইচ্ছে নেই বেল পড়লো বলে |
--আরে বেল পড়লে চলে আসবো | শুধু যাবো আর আসবো |
--টিফিনে চল | তখন অনেকটা সময়ও পাওয়া যাবে |
--ভয় পাচ্ছিস? তুই না সায়ন হালদারের বউ হবি?
--দেখ সেদিন প্রেয়ারে লেট্ হোলো কিনা? আর ঐসব জায়গায় প্রেম করতে না গেলেই নয় |
--ও তাহলে স্বীকার করলি যে ভয় পাচ্ছিস | মজা করছিলাম রে | ওখানে কিছুই নেই | প্রেম করবার জমপেশ জায়গা | চল না একবার | না গেলে ব্রেক আপ যা |
--ইশ, বাবু মশাইএর কথায় কথায় ব্রেক আপ | এত কেজি দরে ব্রেক আপ কোথায় কিনিস রে? রাগ করার কথা আমার আর রোয়াব দেখাচ্ছেন উনি | চল যাচ্ছি কিন্তু বেশিক্ষণ না কিন্তু ওকে?
সায়নের পিছু পিছু তিনতলায় উঠে গেলো তিথি | একটু পর তিথির প্রাণহীন দেহটা পাওয়া গেলো স্কুল বিল্ডিং এর পেছন দিকে, তিন তলার বারান্দাটার ঠিক নিচে | পুলিশের অনুমান তিথি ওখান থেকেই ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তবে ময়না তদন্ত এর রিপোর্ট আসতে এখনো দেরী আছে |
তিথির সহপাঠিদের জিজ্ঞেস করে জানা গেছে ঘটনার ঠিক আগে তারা তিথিকে একা একা কথা বলতে দেখেছে | শহীদ ভবানী সেন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় এখন সত্যিই অনেক বড়ো প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে |
Comments