top of page
Search

বিশেষ সংখ্যা ।। ভয় ভৌতিকে ।।রোনক ব্যানার্জী


চৌমাথার পিশাচ


রোনক ব্যানার্জী



আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগের কথা। তখন গ্ৰামে বসতি এত ঘন হয়ে ওঠেনি। বেশিরভাগ বাড়ি ছিল মাটি দিয়ে তৈরি, খড়ের ছাউনি। দালানবাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। ফলে অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল। কোথাও আগাছার ঝোপ কোথাও ছোট ডোবা আবার কোন স্থান কাঁকর মাটির আচ্ছাদনে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গা হয়ে উঠত। ফলত আজকের গ্ৰামাঞ্চলের সঙ্গে ত্রিশ বছর আগের গ্ৰামাঞ্চলের বিস্তর পার্থক্য আছে।



আমার কাকুর তখন‌ও বিয়ে হয়নি। আমাদের গ্ৰামে কাকুর‌ই ছিল সবচেয়ে প্রথম জামাকাপড়ের দোকান। আর কোনো দোকান না থাকায় গ্ৰামের সকলেই কাকুর কাছেই শাড়ি, পাজামা, শার্ট প্রভৃতি কিনত। খুব ভীড় হত দোকানে, তাই মাল গুছিয়ে হিসেব নিকেশ করে ফিরতে রাত হত। ব্যাচেলর থাকায় বেশিরভাগ দিনই বন্ধুদের সঙ্গে ফিস্ট করে বাড়ি ফিরতে রাত বারোটা সাড়ে বারোটা বেজে যেত। তখনকার সময়ে গ্ৰামাঞ্চলে রাত নটা মানে গভীর রাত। বিদ্যুৎ এসে পৌঁছায়নি সকলের ঘরে, টেলিভিশন ও ছিল না তাই বেশিরভাগ মানুষই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা আটটায় রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। কাকু যখন ফিরত তখন পুরো গ্ৰাম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নিজের কাছেই বৈঠকখানার একটা চাবি থাকত, তাই দরজা খোলা বন্ধ করার বিষয়ে মাথাব্যথা ছিল না। বাবা, দাদু-ঠাম্মা তখন ঘুমিয়ে থাকতেন।



কাকুর দোকান থেকে বাড়ি ফেরার দুটো রাস্তা ছিল। একটা শর্টকাট অন্যটা একটু ঘোরানো। শর্টকাট রাস্তা ধরে কাকু বেশি যাতায়াত করত। এই শর্টকার্ট রাস্তা ছিল বাউরি পাড়া দিয়ে। সেখানে বাড়ি ছিল না, দুপাশে ঝোপের মাঝ বরাবর একটা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তায় পড়ত একটা চৌ মাথার মোড়। সকালে যখন কাকু দোকান যেত, তখন মাঝে মধ্যেই কাকুর চোখে পড়ত চৌমাথার মোড়ে মাটির হাতি ঘোড়া, সিঁদুর, ফুল, হলুদ, রক্ত এইসব পড়ে আছে। কাকুর মনে প্রশ্ন জাগত, দু একজনকে জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পায়নি।



একদিন একটি লোক দোকানে কাপড় কিনতে কিনতে গল্পচ্ছলে বলেছিল, ঠাকুর ওই রাস্তা দিয়ে রাতের বেলা যাতায়াত করবেন না বিশেষত অমাবস্যার রাতে। কাকু বলেছিল, ওইসব অমাবস্যা পূর্ণিমা কি আমার খেয়াল থাকে গো। তারপর খদ্দেরটি আর কিছু বলেনি।



একদিন কাকু ফিস্ট করে গভীর রাতে ওই রাস্তা হয়ে বাড়ি ফিরছিল। চৌমাথার মোড় থেকে ১০০ মিটার দূরে একটা আগুন শিখা দেখতে পায়। কাকু ভাবে এত রাতে এই নির্জন স্থানে কে থাকতে পারে, আগে তো এত রাতে এখানে কাউকে দেখেনি। উৎসুক হয়ে সামনের দিকে পা বাড়িয়ে টর্চের আলো ফেলে দেখে দুজন উলঙ্গ নারী মাথায় হাঁড়িতে আগুন নিয়ে গোল হয়ে ঘুরছিল। টর্চের আলো দেখতেই পাশের তালগাছের আড়ালে ছুটে চলে গেল। কাকু সেই তালগাছটার কাছে গিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে 'কে কে' বলে চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না। 'খড় খড়' আওয়াজ আসতে লাগল তাল গাছের পিছনের দিক থেকে। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে কাউকে দেখতে না পাওয়ায় কাকু রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।



এই ঘটনা কাকুর মনে গভীর প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দেখা দেয়। বাউরি পাড়ার পাশাপাশি থাকা একজন লোককে জিজ্ঞেস করে কাকু এই ঘটনার ব্যাপারে। সে স্তম্ভিত হয়ে বলে, 'তুমি জানো না ঠাকুর, ওখানে তো পিশাচ সাধনা হয় অমাবস্যার রাতে।' কাকু ক্যালেন্ডার দেখে জানতে পারে সেই দিনটা অমাবস্যা ছিল।

 
 
 

Comentarios


Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page