top of page
Search

বিশেষ সংখ্যা ।। ভয় ভৌতিকে ।। শতরূপা ভট্টাচার্য্য

agantukpotrika

পালিয়ে বিয়ে


শতরূপা ভট্টাচার্য্য



-“চল না বাবু, আমরা পালিয়ে বিয়ে করি।” বলল পিয়া।

-“পাগল নাকি? তোর বিয়ে নিয়ে সবার কত স্বপ্ন বলতো, আমি কাউকে কষ্ট দিতে পারব না।” সিগারেটের ধোঁয়াটা ছেড়ে বলল অভিজিৎ।

-“কিন্তু, কিন্তু… বাপি তো আমার জন্য পাত্র দেখছে।” উদ্বিগ্নমুখে বলল পিয়া।

-“উফ্। সোনাই। চিন্তা করিস না। ম্যায় হু না। চাকরিটা হলেই তোদের বাড়ি যাব তো আমি। বাবা-মাকে নিয়ে এক্কেবারে বিয়ের কথা বলতে। এখন এসব ভাবিস না। চল চল.. বিরিয়ানী খাই। এতদিন এই গরীব-গুবোকে সহ্য করেছিস, চাকরিটা পাই… তারপর বিয়েটা হোক… তারপর দেখবি গিফট কাকে বলে। তোর ওই বন্ধু চৈতালীর বরের থেকেও বেশী গিফট দেবো তোকে। হা, হা, হা…”


কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পিয়া বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে। সেদিন দূর্গাপুজোর সপ্তমী ছিল। সেটাই লাস্ট দেখা ওদের। অভি বলেছিল পুজোর পর চাকরিটা হবেই কিন্তু তা আর হল কই। দু-মাস হল ফোনও করেনি অভি। ছেলেটা কি ওকে সত্যিই ভুলে গেল? ছেলেটা কি করছে এখন? এইসব ভেবেই কত রাত ঘুম হয় না তার।

পিয়া আজ ভীষণ ক্লান্ত। সকাল থেকে বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠানে তার দেহটাই উপস্থিত থেকেছে। মন তো তার অভিজিৎ-এর কাছেই পড়ে আছে। মেকাপ আটির্স্ট পিয়াকে সাজিয়ে সবে বেড়িয়ে গেছে। মা-বৌদি মনে হয় নিজেরা সাজতে গেছে। তার চোখ বুজে আসছে ঘুমে।


ঘুম ভাঙল অভিজিৎ-এর ডাকে। “এই সোনাই ওঠ, কিরে?” পিয়া অবাক চোখে তাকায়। অভিজিৎ এখানে এলো কি করে, আর কখনই বা এলো? সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এসে পৌঁছালো পিয়ার ঘরে। তার বাড়ির সবাই-ই মোটামুটি অভিজিৎকে চেনে। পছন্দও করত, নেহাত ফিউচারলেস বেকার বলে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়া গেল না।

অভিজিৎকে না পাবার দুঃখে যখন পিয়া ভেঙে পড়েছিল, তখন পিয়াকে ওর বৌদি বলেছিল, “মেয়েদের মন সমুদ্রের মতো গভীর পিয়া। সেই মনের গভীরে দেখার মতো ক্ষমতা কারোর নেই। তোমার মনে অভিজিৎকে নিয়েই সজলবাবুকে বিয়ে করে নিও। তারপর দেখবে কবে অভিজিৎকেও ভুলে গেছো। আমাকেই দেখো না, আমার বয়ফেন্ড্র আমার স্কুলের বন্ধু। সেম-এজ রিলেশানসিপ মানল না ওর মা। ব্যাস… আমার ভালোবাসার ইতি হল।”

-“কিরে সোনাই? আমায় বিয়ে করবি না?” অভিজিৎ-এর কথায় ঘোর কাটল পিয়ার।

-“অভি, তুই… করব তো..” আবেগে জড়িয়ে ধরে পিয়া অভিকে। বাবার পছন্দ করা ছেলের সাথে আর বিয়ে করতে হবে না, এই আনন্দে খুশিতে বিভোর হয়ে কাঁদতে থাকে পিয়া।

অভিজিৎ বলল, “তোকে নিয়ে যেতে এসেছি রে।”

হঠাৎ ই পিয়ার চোখে পড়ে অভিজিৎ-এর গলায় কালসিটের মতো একটা কালো মোটা দাগ।

-“বাবু, তোর গলায় এটা কিসের দাগ রে?” বিস্মিত হয়ে বলল পিয়া।

সেই আগের মতো পিয়ার গাল টিপে হেসে অভি বলল, “চাকরি পেলাম না তাও মনটা শক্ত ছিল রে, চেষ্টায় ছিলাম। কিন্তু আজ যখন তোর বিয়ের খবর পেলাম, বিশ্বাস হল না। মনে হল তুই আমায় জানালিও না। আমার কষ্টের ব্যাপারে এত চিন্তা তোর। তাই তোর ওপর অভিমান করে তখন ঝুলেই পড়লাম গলায় দড়ি দিয়ে।”

কথাটা শুনে পিয়া চমকে দু-পা পিছিয়ে যায়। কি বলছে কি অভি?...

হা হা করে হেসে অভিজিৎ বলল, “দেখো পাগলীর কান্ড, নিজে ভূত হয়ে আবার আমার ভূতকে ভয় পাচ্ছিস। ওদিকে দেখ…”

অভিজিৎ-এর আঙুলের দিক লক্ষ্য করে পিয়া দেখে এলোমেলোভাবে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে সে নিজে!!

কবজি কাটা বাঁ-হাত থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া রক্তে বিছানাটা ভেসে যাচ্ছে।

অভিজিৎ বলে চলল, “আমি তো শরীর ছাড়ার পর তোকে দেখতেই এসছিলাম, বিয়ের সাজে তোকে কেমন লাগছে। তারপর দেখি তুইও… হা, হা, হা… ”


দরজার ওপার থেকে উত্তেজিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

অভির এই স্বচ্ছ হাসি-মাখা মুখটা দেখে ভেতর একটা পরম শান্তি আসে পিয়ার। দু-হাতে জড়িয়ে ধরে অভিজিৎকে।

হঠাৎই দরজা ভেঙে পিয়ার ঘরে ওর বাবা-মা-দাদা-বৌদি প্রবেশ করে, সাথে আরও অনেক চেনা-অচেনা লোক।

তবুও অবাক ভাবের ঘোরটা কাটে না পিয়ার। অভিজিৎ পিয়ার সদ্য কাটা হাতটা ধরে। ব্যাথা পায় না পিয়া। আনন্দ লাগে তার, তার পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছেটা পূর্ণ হল বলে।

110 views0 comments

Bình luận


Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page