পুকুরপাড়
শ্রাবণী ভৌমিক
আমরা আগে যেখানে থাকতাম সেটা বলতে গেলে একটা পাড়া গাঁ, হাতে গুনে কুড়ি পঁচিশটা পরিবার হবে, তারপরে রাস্তা পেরোলেই ওপাশে ঘন জঙ্গল আর খাল, বিল,দীঘিতে পরিবেষ্টিত। দিনের বেলাতেই গা ছমছম করত রাতের বেলা সেরকম এধারে কেউ আসতো না বললেই চলত। রাস্তা
যে খুব একটা সুবিধার ছিল তা নয়,মাটির রাস্তা দু'ধারে অল্পকিছু মাটির বাড়ি তারপরেই শুরু হতো বাঁশঝাড় ,বড় বড়, তাল গাছের সারি, তখনকার দিনে আজকালের মত বড় বড় ল্যাম্পপোস্ট ছিলনা, মানুষজন অনেক ভোরে উঠতো বেশিরভাগ চাষবাসের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন ছিল। রাত্রি ছটা না বাঁচতে বাঁচতে সকলে ঘুমিয়ে পড়তো,
আমার মনে আছে ঠিক একটি শীতকালে বাবা কাজ সেরে বাড়িতে এসেছেন মা বাবাকে খেতে দিয়ে এঁটো বাসন গুলো পুকুরে ধুতে নিয়ে গিয়েছিল, তখন অবশ্য সেরকম অন্ধকার ছিল না, এই চারটির সাড়ে চারটে বেজে ছিল, মা একা যাবে দেখে আমিও পিছন পিছন গিয়েছিলাম, পুকুরঘাটে অবশ্য কেউ ছিলনা, পুকুর ঘাট বেশ বাঁধানো চারিধারে সুপারি গাছ আর তালগাছে পরিবেষ্টিত ছিল। মা তাড়াতাড়ি বাসনগুলো ধুতে লাগল শীতের বেলা পাঁচটা বাজতে না বাজতেই তো অন্ধকার, আমিও মাকে তারা দিতে লাগলাম কি গো মা হয়েছে তোমার!মা বলেছিল হ্যাঁ এইতো হয়ে এসেছে! এরমধ্যে হঠাৎ একটা আচমকা হাওয়া গায়ে এসে লাগাতে মনের মধ্যে যেন কূঁ গাইতে শুরু করেছিল, মাকে আবার হাঁক পারলাম কি গো! মা হয়েছে তোমার? এবার চলো বিকেল হয়ে সন্ধে হতে গেল তাড়াতাড়ি ফিরে চলো। পুকুরপাড়ে সুপারি গাছ গুলো কেমন যেন দূরে সরে যাচ্ছে, আবার আমার কখনো কখনো মনে হচ্ছিল আমার দিকে ধেঁয়ে আসছে, এরইমধ্যে মা বলল চল হয়ে গেছে! আমি আর মা জোর পায়ে হাটতে লাগলাম, বাড়ি এসে মাকে অবশ্য বলেছিলাম, এই কথা কিন্তু মা আমার কথা বিশ্বাস করেননি, এই দৃশ্য দেখার পরদিন আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখনকার সময়ে ঝাড়ফুঁক মন্ত্র তন্ত্র এসবের প্রচলন ছিল, খাওয়া-দাওয়া ঘুম এসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাড়ার প্রতিবেশীরা বলেছিল আমার নাকি হাওয়া বাতাস লেগেছে, একথা শুনে অবশ্য আমি একটুও অবাক হয়নি, কারণ সেইদিনের পুকুর পাড়ে,
যেটা আমি দেখেছিলাম কিংবা অনুভব করেছিলাম,সেটা একেবারেই সত্যি হয়েছিল আমার জীবনে, প্রতিবেশীদের পরামর্শে যথারীতি ঝাড়ফুঁক মন্ত্র তন্ত্রে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম। পরবর্তীকালে এটাও জানতে পেরেছিলাম পুকুর পাড় টা ভালো নয়, কারণ ওখানে নাকি একজন ব্যক্তি জলে ডুবে মারা গিয়েছিল, এরপর থেকে আমি এবং আমার মা আর কখনো ঐ পুকুর পাড়ের ত্রিসীমানায় যায়নি।
Comments