ফেরা
দীপ্তি চ্যাটার্জি
গোটা শহর জুড়ে শীতের স্রোত বয়ে চলেছে। দুপুর শেষে এখন আর বিকাল হয়না, একবারে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এই ছোট শহরের শীতের সন্ধ্যা গুলো বড্ড নিঃশ্চুপ হয়। যেন হাড়িয়ে যাওয়া মানুষের অপেক্ষায় বসে বসে নিঃশব্দে দিন গোনে।
৪১ নং বাসের শেষ যাত্রী আমি। আমায় গন্তব্যে নামিয়ে বাসটিও চলে যায়। ফুটপাত ধরে বাড়ি ফিরি আমি। হঠাৎ রাস্তার মাঝে চেনা প্রকৃতিটা আমার যাওয়ার পথ আটকে দেয়।
-- অনুরাগ দা তুমি? এত বছর পর এখানে কি করছো?
-- অফিসের কাজে এসেছিলাম, কাজ শেষ তাই এই নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার তারা ওঠা দেখছিলাম।
তুই এখানে কি করছিস মীরা?
--এটাই তো আমার গন্তব্য অনুরাগ দা। সূর্য ডোবার শেষে অন্ধকার রাত।
__ তা তোর বর বুঝি এখানে চাকরি করে, তাই বরের সাথে এখানে থাকিস?
তোর বন্ধু প্রবীরের কাছে শেষ বার তোর খবর যখন নিয়েছিলাম তখন ও বলেছিল তোর বিয়ে হয়ে গেছে, বেশ উচ্চ বংশের ছেলের সাথে। ছেলে সরকারি চাকরি করে। শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম, জানিস তুই খুব ভালো থাক এটাই তো চেয়েছিলাম।
_আচ্ছা অনুরাগ দা তোমার কাছে ভালো থাকার শর্ত বুঝি উচ্চবংশ আর সরকারি চাকরি?
যারা ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে সংসার পাতায় তারা বুঝি ভালোবাসেনা?
--অভাবের তাড়নায় ভালোবাসা ছেড়ে চলে যায় মীরা।
--ভালোবাসার অভাবে সংসারটাও ভেঙে যায় অনুরাগ দা।
--যাক্ ওসব বাদ দে, তুই কেমন আছিস?
-- আমি! আমি ঠিক আছিল।
--না মীরা তুই ঠিক নেই। তুই ঠিক নেই, তোর চোখের নীচে কালি, তোর রুক্ষ চুলের বিনুনি জানান দিচ্ছে সে কথা।
--আমি কেমন আছি সেসব জেনেই বা কী হবে বলো? অনেক গুলো বছর কাটিয়ে দিলাম এই ভাবে আর বাকিটাও পারবো ঠিক।
--অনেক কথা জমে আছে মীরা, তোকে অনেক কিছু বলবার আছে!
--আমার আর কিছু শোনার নেই গো। সমস্ত কথা শোনার ইচ্ছা মরে গেছে আমার।
তুমি ভালো থেকো। আমি যাচ্ছি অনেক দেরি হয়ে গেল, বাড়ি গিয়ে রান্না করতে হবে।
অন্ধকার হয়ে এসেছে তখন। স্ট্রিট লাইট গুলোকে আবৃত করে দিচ্ছে কুয়াশার জাল। গোটা শহর চাদর মুড়ি দিয়ে উষ্ণতা নিতে চাইছে। সামনের রাস্তা ধরে হেঁটে চলা অভিমানী মানুষটাও ধীরে ধীরে আবছা হতে থাকলো চোখের নিমিষে।
অনিরুদ্ধ দা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে মীরার চলে যাওয়া টুকু আর মনে হচ্ছে একবার ডেকে বলি "আজ জানে কী জীদ না কারো...."
Komentarai