ভার্চুয়াল পুজো
সুমিতা নন্দী দে
ববিতাদের বাড়ি মৌরিগ্রামে। ওদের বাড়িতে মা,বাবা,দাদু, ঠাকুমা আছে। ওর বাবা প্রাইভেট স্কুল টিচার। ববিতা ক্লাস এইটে পড়ে। সারাবছরই পড়াশোনার চাপ থাকে, এছাড়াও আঁকা, নাচের ক্লাস তো আছেই। আর লম্বা ছুটি বলতে শুধু পুজোর সময়ই। ছোটো বয়েস থেকেই ওকে নিয়ে পরিবারের সবাই বেড়াতে যায়।
কিন্তু এবার আর কোথাও বেড়ানো হল না, কারণ কোভিড হবার ফলে এবছরের প্ল্যানটা বাতিল হল। ববিতা জানতে পারলো যে, "এবছর পুজোটা পাড়ার প্যান্ডেলে কাটাতে হবে"। তখন ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। কারণ জ্ঞান হবার পর প্রতিবছরই ওরা বেড়াতে চলে যায়, তাই কোনো বছরই থাকতে পারে না। এবছরই প্রথম থাকবে পুজোতে, তাও আবার ভার্চুয়াল কোনো অনুষ্ঠান বা ভিড় হবে না।
ববিতার অনেকদিনের ইচ্ছা কোনো বড় উৎসবে অংশগ্রহণ করার, কিন্তু বয়সের দিক থেকে ছোটো হওয়ায় ওকে তেমন কেউ পাত্তা দেয় না। কিন্তু এবার ভাবলো নিজে কিছু একটা দায়িত্ত্ব নেবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ , সেদিনই সন্ধাবেলায় ওর বাবা চা খেতে খেতে বলল -"এ বছর কোভিড এর জন্যে অনেক মানুষজনের কাজ চলে গেছে, কেউ হয়তো আধবেলা না খেয়েই কাটায়, আবার কেউ হয়তো পুজোয় বাচ্চাদের ভালো জামাকাপড়ই কিনে দিতে পারেনি। তাই ভাবছি, এবছরে একটু বেশি চাঁদা তুলবো যারা সমাজে ধনী লোকেদের কাছ থেকে। আর যে যা দান করবে, সেই টাকায় পুজোর চারদিন খাওয়ানো হবে,আর গরিবদের বস্ত্র বিতরণ করা হবে"।
ববিতার দাদু বলল -"বেশ তো, আমিও এবার বেশি চাঁদা দেবো। আর অনেক কাজও করতে চাই।"
বাবা -" না বাবা, তুমি সিনিয়ারদের সঙ্গে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবে। আমরা বন্ধুরা মিলে একটা গ্রুপ করেছি যারা এসব কাজ করবে।"
এসব কথা শোনার পর ববিতা ঠিক করল, সে কিছু সাহায্য করবে, কিন্তু কিভাবে করবে?
যখন পুজোর দিন কাছে চলে এলো, তখন ববিতা, বাবার সঙ্গে প্যান্ডেলে গিয়ে সাদা চুনের গোল দাগ দিল, যাতে ওর মধ্যেই সবাই দাঁড়ায়, আর একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। প্রথমে ষষ্ঠীরদিন, সেদিন গ্রামের সব মানুষদেরকে বস্ত্র বিতরণ করার পাশাপাশি মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়া হল। তারপর সপ্তমী , অষ্টমী,নবমী, দশমী এই দিন গুলোতেও পুজো হবার সময় ওর মায়ের সাথে এসে পুজোর জোগাড়ও করছিল। এছাড়াও প্রতিদিন দুপুরে ভোজ খাওয়ানোর সময় সবাইকে প্লেট ও জল দিয়ে, কিছুটা হলেও সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল।
ববিতা ভাবলো, "সত্যি ! এভাবেও তো আনন্দ করা যায়, শুধুমাত্র বেরাতে গেলেই আনন্দ তা নয়, গ্রামের এইসব মানুষদের পাশে থেকেও মনের তৃপ্তি লাভ করা যায়
コメント