বগুরান জলপাই: লাল কাঁকড়ার দেশ
শুভজিৎ তোকদার
কাঁথি স্টেশন থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে, আলদারপুট হয়ে কাঁথি এক নম্বর ব্লকে সমুদ্র তীরে ছোটো একটা গ্রাম বগুরান জলপাই। আর এই বগুরান জলপাইতেই হলো হাজার হাজার, লাখ লাখ, কোটি কোটি লাল কাঁকড়ার বাস । গুনে শেষ করা যায়না । আর ইচ্ছে করলে সমুদ্র সৈকত ধরে পূর্বদিক বরাবর হেঁটে ট্রেক করে গেলে একে একে চলে যাওয়া যায় হরিপুর, জুনপুট, গোপালপুর, ভোগপুর, বাঁকিপুট হয়ে সোজা পেটুয়াঘাট । রাস্তা কিন্তু কম নয় । গাড়ি পথেও এই গুলো যাওয়া যায় । ভারী সুন্দর এই বিচ বগুরান জলপাই ।
অবস্থান:
----------
আগেই বলেছি, কাঁথি শহর থেকে ১২ কিমি দূরে আলদারপুট থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে বগুরান জলপাই গ্রাম ।
পশ্চিমদিকে ১ কিমি দূরে ভান্ডারা খাল । এই খাল পেরোলেই শৌলা বিচ এবং কাঁথি খাল । আর এই কাঁথি খাল পেরিয়েই পিছাবনী নদী টপকে সোজা লাল কাঁকড়া বিচ মানে প্রায় মন্দারমনি সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে যাওয়া যায়। এই পথে যেহেতু দুটো খাল আর পিছাবনী নদী পেরোতে হয় তাই এই পথে ট্রেকিং একটু কষ্টকর । গাড়ী নিয়ে ঘুরে যাওয়ায় সহজ উপায় ।
আর বগুরান জলপাই বিচের পূর্বদিকে ৩ কিমি গেলেই হরিপুর বিচ । সেই হরিপুর যেখানে এককালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিলো । হরিপুর থেকে আরো ৩ কিমি গেলে জুনপুট ।
বগুরান জলপাইয়ের সমুদ্র সৈকত:
----------------------------------
নির্জনতা, নিরিবিলি হলো বগুরান জলপাই বিচের প্রধান আকর্ষণ । দীঘা, পুরীর মতো এখানে দুর্গাপূজার মতো ভিড় নেই । ভিরভাট্টা যারা পছন্দ করেন না তাদের গন্তব্য হতেই পারে বগুরান জলপাই । বিচের পাশেই জেলে দের ঘর । জায়গা খুবই নিরাপদ ।
আর নির্জনতা আছে বলেই বগুরান জলপাই বিচ থেকে তিন কিমি প্রায়ই হরিপুর বিচ পর্যন্ত কোটি কোটি লাল কাঁকড়ার দেখা মেলে । এই লাল কাঁকড়া এতো পরিমানে যে পায়ের আওয়াজে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই । কারণ সারা বিচে ভাঁটার সময় লাল ফুলের মতো লাল কাঁকড়া ছড়িয়ে আছে । পালিয়ে আর যাবে কোথায় ।
দীঘার মতো সমুদ্র এখানে অতো বিশাল ঢেউ প্রবন নয় । জোয়ারের সময় বিচ ভরে জল আসে আর ভাঁটার সময় জল পালিয়ে যায় ।
সাইট সিন:
------------
বগুরান জলপাই থেকে সমুদ্র বরাবর হেঁটে হরিপুর, জুনপট চলে যাওয়া যায় । সারা পথের সাথী হবে লাল কাঁকড়ার দল ।
আর গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসা যায় পশ্চিমদিকে শৌলা বিচ, লাল কাঁকড়া বিচ এবং মন্ডারমনি ।
আর একদিন গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসা যায় পূর্বদিকে হরিপুর বিচ, জুনপুট, গোপালপুর বিচ, ভোগপুর বিচ, বাঁকিপুট । এবং পেটুয়াঘাট বন্দর হয়ে দারিয়াপুর লাইট হাউস ( সময় বিকেল ৩ টা থেকে ৫ টা) কপালকুণ্ডলা মন্দির।
ইচ্ছে করলে পেটুয়াঘাট বন্দরে গাড়ি রেখে খেয়া পেরিয়ে (রসুলপুর নদী) চলে যাওয়া যায় হিজলী শরীফ । সমুদ্র সৈকতের সাথে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ।
এদিকে মারুতি ওমনি বেশী পাওয়া যায় , ভাড়া মোটামুটি ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা ।
কিভাবে যাবেন বগুরান জলপাই:
------------------------------
ট্রেনে কাঁথি স্টেশনে বা বাসে চাউলখোলা মোড় নেমে অটো বা গাড়ী নিয়ে আলদারপুট হয়ে ডানদিকের রাস্তা হয়ে বগুরান জলপাই । কাঁথি থেকে দূরত্ব ১২ কিমি । ৪০ মিনিট মতো সময় লাগে । অটোতে ৩০০ টাকা এবং গাড়িতে ৪০০ টাকা মতো পড়বে ।
কোথায় থাকবেন:
------------------
বগুরান জলপাই তে থাকার আস্তানা একটায় । সুভাস ভূঁইনের সাগর নিরালা রিসোর্ট । সমুদ্র থেকে ৫০০ মিটার আগে ওনার পৈতৃক ভিটে তে প্রথমে চারটে ঘর নিয়ে রিসোর্ট তৈরী করেন । এখন আরো বিল্ডিং তৈরী করেছেন । মোট ১৮ টা রুম এখন । ডাবল, ত্রিপল, চারজনের সবরকম রুমই আছে । AC আর কুলারের এর ব্যবস্থাও আছে ।
এখন নতুন করে গোটা পাঁচেক টেন্ট তৈরী করেছেন । টেন্টে কুলারের ব্যবস্থাও আছে ।
আর নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে । সুন্দর খাওয়ার ব্যবস্থা আছে । বাচ্চাদের জন্য দোলনা, খেলার সরঞ্জাম সব ব্যবস্থায় আছে । আর রিসোর্ট খুবই পরিস্কার এবং যত্ন নেওয়া হয় ।
সাগর নিরালার কন্টাক্ট নাম্বার: মালিক - সুভাস ভূঁইন ৯৪৩৪০১২২০০ ম্যানেজার : ৮০০১২৭৫৭৩৭ ।
(বিভিন্ন রকম রুম, বিভিন্ন সুবিধা যুক্তে থাকায় ঘরের ভাড়ার জন্য সরাসরি মালিক সুভাস ভূঁইনের সাথে যোগাযোগ করবেন ।)
শুধু যারা যাবেন তারা একটু খেয়াল রাখবেন, বর্ষাকালের সময় গেলে টেন্ট বা একতলার ঘর (পুরানো বিল্ডিং) থাকবেন না। প্রচুর ঝাউবন থাকায় পোকামাকড় কেন্নোর উৎপাত আছে ঘরে । নতুন বিল্ডিংএর দোতলাঘর গুলোয় এই সমস্যা তুলনামূলক কম । বর্ষার পর এই সমস্যা থাকবে না ।
Comments