বাংলার শেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো, এই উৎসব বহুবছরের প্রাচীন। ভবিষ্যপুরাণে রয়েছে যে, যে দেশে দেবীর পুজো হয় সেই দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না, কেউ কোন দুঃখ পায় না বা কারও অকালমৃত্যুও হয় না ।
পর্ব- ২
সৌভিক রাজ
অপরাজিত-কে। যা দেবীদুর্গার আরেক রূপ। এই পুজর পরেই রাজা যুদ্ধ জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হতেন।
অনেক ক্ষেত্রেই সাদা অপরাজিতা গাছকে দেবীরূপে পুজো করা হত। আবার ঘট স্থাপন করেও পুজো করা হয়। এই পুজোর উদ্দেশ্যেই আবার পুজোর দিনেই নতুন অপরাজিত গাছের চারা রোপণ করা হত। রাজ্যের মঙ্গল কামনায় যুদ্ধে বিজয় লাভের উদ্দেশ্যে দশমীতে বিসর্জনের পর সেই সময় থেকেই সূচণা হয় অপরাজিতা পুজার।
আবার পুরাণ মতে, অপরাজিতা আরাধনা দুর্গাপুজোরই একটি অন্য অঙ্গ। দুর্গার অন্য নাম অপরাজিতা। কিন্তু এই দেবীর মূর্তি সম্পূর্ণ ভিন্ন অপরাজিতা হলেন চতুর্ভূজা। হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা শোভিত, ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা সম্বলিত এই দেবী নীল বর্ণা, পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী। দেবী দুর্গার বিসর্জনের পুজোর পর পুজো মণ্ডপের ইশান কোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতা লতা রেখে পুজো করা হয়। বহু বনেদি বাড়িতে এখনও রয়েছে এই পুজোর প্রচলন রয়েছে।
কোথাও কোথাও বনেদি বাড়িতে যেমন সুকীয়া স্ট্রিটে সীমানি বাড়িতে এককালে নীলকণ্ঠ পাখি উড়ানোর রেওয়াজ ছিলো কিন্তু পরিবেশ আইনের চাপে আর নীলকণ্ঠ উড়িয়ে কৈলাশে আগমন বার্তা দেওয়া হয়না। নীলকণ্ঠ হলো শিবের আরেক নাম। সমুদ্র মন্থনে ওঠা বিষের প্রভাব থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা করতে সেই বিষ শিব নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন। বিষের জ্বালায় তাঁর গলায় নীলবর্ণ ধারণ করে। তাই শিবের আরেক নাম নীলকণ্ঠ। নীল বর্ণের জন্য নীলকণ্ঠ পাখিকে শিবের দোসর বলে মনে করা হয় হিন্দু ধর্মে। নীলকণ্ঠ পাখি আগে কৈলাসে পৌঁছে মহাদেবকে পার্বতীর আগমন বার্তা দেবে! এই বিশ্বাস থেকেই দশমীতে দুর্গা প্রতিমার ভাসানের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা চালু হয়।
আজও রীতি মেনে বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোতে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয় আদি গঙ্গার ঘাট থেকে,প্রায় তিনশো বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য আজও পালন করে আসছে রায়চৌধুরী পরিবার।
সরকারিভাবে নীলকন্ঠ পাখি ধরা ও দুর্গা ঠাকুর বিসর্জনের পর ওড়ানোর আইন বিরোধী। এনিয়ে পরিবেশ আদালতের ও একাধিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রায়চৌধুরীরা মনে করেন তাঁদের বাড়ির পুজোর প্রধান বিশেষত্বই হলো এই নীলকণ্ঠ পাখি।
এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই তাঁদের বাড়িতে শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা। এখনও সপ্তমী ও অষ্টমীতে হয় চালকুমড়ো বলি এবং নবমীতে হয় পাঠা বলি।
(ক্রমশ...)
Comments