মানবতাই আসল ধর্ম
শেখ আসমত
ঈশ্বর পৃথিবীতে দরিদ্রবেশে আমাদের চারিদিকে দয়া প্রার্থীরূপে নিত্য পরিভ্রমণরত| কাজেই, জগতের দরিদ্রদের দয়া বিতরণের মধ্যস্থতায় আমরা ঈশ্বর লাভের সক্ষম হবো | মানবতার সেবাই ঈশ্বর লাভের প্রকৃত পথ| ঈশ্বর নিরাকার এবং অনন্ত| তিনি অবাঙমনসগোচর | কিন্তু মানুষের মধ্যেই তার যথার্থ প্রকাশ| কাজেই, মানুষই আমাদের জাগ্রত দেবতা| মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মোচনই আমাদের প্রকৃত ঈশ্বর সেবা| আমাদের চারিদিকে কেঁদে ফেরে কত পীড়িত ঈশ্বর, কত ব্যথিত ভগবান| পার্থিব দুঃখ-দুর্দশার রাহুগ্রাসে নিপতিত হয়ে মানুষ বড় অসহায় ভাবে মানুষের সাহায্য প্রার্থনা করে| সেই আর্ত পীড়িতের দুঃখমোচন এর জন্য মানুষের হৃদয় দুর্গ যদি অর্গলমুক্ত না হয়, তবে এই পৃথিবীতে মানুষ সাহায্যের প্রত্যাশায় কার দ্বারে গিয়ে দাঁড়াবে? সমাজের একশ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা জগতের দুঃখী হতভাগ্য মানুষগুলিকে দূরে বিতাড়িত করে, তথাকথিত পবিত্রতা রক্ষার নামে তাদের স্পর্শকে দূরে ঠেকিয়ে মন্দিরের বা মসজিদের পাষাণ প্রাচীর এর মধ্যে খোঁজেন অনন্ত ঈশ্বরকে| কিন্তু ঈশ্বরের অধিষ্ঠান তো কেবল মন্দিরের বা মসজিদের পাষাণ-বেদী তেই নয়, তার আবির্ভাব যে মানুষের অন্তরে| জগতের লাঞ্ছিত উৎপীড়িতদের মধ্যে যে তাঁর আসন পাতা, তাঁর উপস্থিতি যে সেই সবার পিছে সবার নিচে সর্বহারাদের মাঝে| একালের মানবতাবাদী কবি ও অনুরূপভাবে বেদনার কন্ঠে বলেন-
বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদে বন্দী মোর ভগবান কাঁদে
কাঁদে কোটি মার কোলে অন্নহীন ভগবান মোর|
কাজেই জগতে দরিদ্র নারায়ণের সেবার মধ্য দিয়েই লাভ করা যাবে ঈশ্বরের অবারিত স্পর্শ| কাজেই, মানুষের দেহই জাগ্রত দেবতার পবিত্র মন্দির -মসজিদ| তার সেবাই প্রকৃত ঈশ্বর সেবা| মানবতার সাধনাই শ্রেষ্ঠ ঈশ্বর সাধনা তাই কবি যথার্থ বলেছেন-
" সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই"|
Comentarios