top of page
Search

রামধনু ।। ২৫তম সংখ্যা ।। অণুগল্প ।। অরুণিমা


ইচ্ছে-পূরণ

অরুণিমা

-মা... ও... মা... -কি হলো... ষাড়ের মতো চিল্লাছিস কেন? -আরে এসো এদিকে... -কি বলবি বল, ওদিকে আমার মেলা রান্না পড়ে আছে(শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বললো রমলা দেবী) পঞ্চাশের কাঠা পার হয় হয় রমলা দেবী ভীষণই আটপৌরে, সাধারণ গৃহবধূ। স্বামী সংসার আর ওই এক মেয়ে বিন্নি, এই নিয়েই ওনার ছোট্ট ছিমছাম সুখের সংসার! এই ছোট্ট দুনিয়ার মধ্যেই নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে রমলা। ওদের ভালোলাগা মন্দলাগা গুলোর সাথে জড়িয়ে নিয়েছে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে। তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে শুধুমাত্র ওরাই। নিজেকে আলাদা করে কখনো ভাবে নি, ভাবার অবকাশ টুকুও পায় নি। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল, কিন্তু মেয়েটা যেন কি রকম একটা! শুধু মা কে বদলানোর চেষ্টায় লেগে পড়ে আছে। ভাল্লাগে না! যেমন আছি তেমনই থাকতে দে না বাপু! এই শেষ বয়সে আবার স্বপ্ন না ছাঁই! কি করে বোঝান তিনি বিন্নি কে, ওদের সুখেই তিনি সুখী! ওদের হাসি মুখ গুলোই ওনার বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। বিন্নি এই কয়েকমাস হলো একটা ভালো চাকরি পেয়েছে। তাই যেন ওর দুটো পাখনা গজিয়েছে! -আরে, ছাড়ো তো তোমার রান্না! আজ তোমায় রান্না করতে হবে না। -এ্যা.. বলিস কিইই.. তো খাবি না? (আশ্চর্য হয়ে) -স্পেশাল ডিশ অর্ডার করেছি আজ। (মিচকে হাসি দিয়ে) -কেন? ওইসব বাইরের খাবার খেতে হয় না তোদের! আবার শরীর টরীর খারাপ হবে তখন, সেই আমাকেই দেখতে হবে। -আরে মা, মা, আমার মা, তুমি আগে একটু বসো শান্ত হয়ে। তারপর বলছি। (বিন্নি মুচ মুচ হেসেই যাচ্ছে) এই দেখো, তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনেছি আমি! শাড়িটা রমলার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে মাথায় একটা চুমু আঁকে বিন্নি। -আবার শাড়ি কেন? -তুমি চোখ টা বন্ধ করো, আরেক টা সারপ্রাইজ আছে আমার সুইইট মম এর জন্য... বন্ধ করো,বন্ধ করো! রমলার চোখ দুটো নিজের হাত দিয়ে ঢেকে দেয় বিন্নি। নিয়ে আসে বসার ঘরে। -কিইই... যে করিস বিন্নি... খুব বাজে স্বভাব তোর! আমার চোখ ছাড়! চোখ দুটো খোলে রমলা। -উফফ... তুই না... চোখে পড়ে একটি বাদ্যযন্ত্রের উপর। স্তব্ধ হয়ে যায় রমলা। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় যন্ত্র টির দিকে! মনে পড়ে যায় ছোটবেলা থেকে দেখা একটি স্বপ্নের কথা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে তার। সেতার টির গায়ে পরম স্নেহে হাত বোলায়। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনাধারা। অস্ফুট স্বরে শুধু একটা নামই বেরিয়ে আসে- বিন্নি... বিন্নির চোখেও জল। মা কে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বলে- মাতৃদিবসের একরাশ শুভেচ্ছা মা!


বিগত চৌত্রিশ বছর ধরে সংসার টাকে আগলে রেখেছে রমলা। সংসার টাকে ভালোবাসতে গিয়ে কখন যেন নিজেকেই ভালোবাসতে ভুলে গেছে! অন্যের চাহিদা পূরণ করতে করতে কখন যে তার নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছের কথা গুলোই বে-মালুম ভুলে গেছে বুঝতেই পারে নি! স্বপ্ন গুলো কে বাক্স বন্দী করে নির্বাসন দিয়েছিল একদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও। -এবার থেকে তুমি এটা নিয়ে সময় কাটাবে। আর কোনো বাহানা আমি তোমার শুনবো না, ওকে! বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায় রমলা। এক মুহুর্তে মেয়ে যেন আজ মা হয়ে গেল! রান্নাঘর থেকে একটা পোড়া গন্ধ ভাসতে লাগলো ঘরময়। ব্যালকনির তপ্ত মেঝে বেয়ে উপছে পড়লো শীতল বাতাস। শুভ হোক মাতৃদিবস। পূরণ হোক পৃথিবীর সকল মায়েদের স্বপ্ন। ভালো থাকুক তাঁরা।

10 views0 comments
bottom of page