top of page
Search

রামধনু ।। ২৫তম সংখ্যা ।। ধারাবাহিক ।। ময়ূখ হালদার

agantukpotrika

পরিপ্রেক্ষিত [পর্ব- ৮(ক)]


ম য়ূ খ  হা ল দা র


ছেলেটা চুপচাপ বসে আছে গাড়িতে। ওর নজর সামনে। তবে আমি নিশ্চিত ও কিছুই দেখছে না। ও এখন ভাবছে আর মনে মনে হিসেব মেলাচ্ছে। হয়তো অংকটা মিলছে না। বলা নেই, কওয়া নেই; হঠাৎ ক'রেই হাজির বিন বুলায়ে মেহমান! ব্যাপারটা কী! আমি রতনলালের(ড্রাইভার) পাশে বসে ওকে দেখছি। আমি যে ওকে মাপছি সেটাও সম্ভবত ওর নজরে আসেনি। যোগী যখন ধ্যান করে তখন এমনই হয়। আই লাইক হিজ অ্যাটিটিউড। সকাল থেকে আমার ডানহাতটা বড্ড চুলকাচ্ছে। আমি সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম,

-নে ধর।

ছেলেটা তাকালো। তারপর আলতো ক'রে মাথা নাড়লো। আমি পিছনে ফিরে হাসলাম।

-আরে ধর! বদ্দা দিচ্ছে, না করতে নেই সোনা...নাও, ধরাও!



আমি লাইটার এগিয়ে দিলাম। ছেলেটা ঠিক সেটাই করলো যেমনটা আমি বললাম। শুধু ওর চোখে অবিশ্বাসের দাগ লেগে আছে। ও আমার লাইটারটা ফেরত দিল।

-আরে ভাই এত হেজিটেট করার কী আছে? আমি ভালোবেসে দিলাম, তুই নিলি- এইই তো! এর মধ্যে কোনও জুমলা আছে? নেই। খুব সোজাসাপ্টা ব্যাপার। ছেলেটা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমার দিকে তাকালো। আমাদের গাড়িটা গান্ধী রোড ক্রসিংয়ে সিগনাল খেয়ে সবেমাত্র দাঁড়িয়েছে। ছেলেটা দু'পাশ দেখলো। তারপর হঠাৎই ঠোঁট নাড়লো,

-মুঝে উতার দাও সাব। আমি কিছু করিনি।

আমি হাসলাম। তোর প্রবলেম টা কি জানিস? তুই হলি চাপা অম্বল!

-স্যার ইয়েকিন মানিয়ে, আমি নতুন কোন ঝামেলা করিনি। সত্যি বলছি স্যার।

-আমি কি তোকে কিছু বলেছি ঝামেলার ব্যাপারে? না, জানতে চেয়েছি?

-আমাকে ছেড়ে দিন স্যার।

পিছনে শ্রীবাস্তব আর রুদ্রভানু আমাদের কথাবার্তা মন দিয়ে শুনছিল। আমি ওদেরকে বললাম,

-আমরা কি সজল থাপাকে অ্যারেস্ট করেছি?

-নেহি তো। হাম উনহে ঘুমানে কে লিয়ে সরকারি গাড্ডি মে বিঠায়া!

কথা শেষ করেই ওরা খ্যাক খ্যাক ক'রে হাসতে শুরু করলো। আর ওদেরকে হাসতে দেখে সজল আরও গুটিয়ে গেল। আমি ওকে আশ্বস্ত করলাম,

-আরে ভাই ঘাবড়াচ্ছিস কেন? তোকে তো জোড়া সারপ্রাইজ দেবো বলে গাড়িতে তুলেছি।

-সারপ্রাইজ!

সজলের হাঁ-মুখে আমার ছোটবেলায় দেখা গ্রামের জগু ময়রার দশটাকাওয়ালা রসগোল্লা ঢুকে যায় আর কী!

-আচ্ছা তুই আমাদের কী ভাবিস বলতো? পুলিশ ব'লে কি আমরা মানুষ নই? আমাদেরও বুকের ভেতর দিল আছে। আমরাও আড্ডা মারতে ভালোবাসি। তোর সাথে গল্প করতে ইচ্ছে হলো তাই তোকে গাড়িতে তুললাম। আর সময় নষ্ট করিস না, গল্পটা শুরু কর। হাতে একদম সময় নেই।

গাড়ি এখন গান্ধী রোড ক্রস ক'রে জে পি শর্মা রোড ধ'রে চলতে আরম্ভ করেছে। এই রাস্তাটা সামনে হিলকার্ট রোডের সাথে মিশেছে। হিলকার্ট রোড ধ'রে অটোস্ট্যান্ডের দিকে খানিকটা এগিয়েই বাঁদিকে পোস্ট অফিস বাজারের পাশ দিয়ে পুরনো কালীমন্দির, নারান দাসের মিষ্টির দোকান ছাড়িয়ে আমাদের গন্তব্য সদর থানা। হাতে সত্যিই সময় নেই। দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবো। সজল আমার কথার মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল ক'রে তাকিয়ে আছে। নিরীহ হরিণের মতো একবার আমার দিকে, আরেকবার রুদ্রভানুদের দিকে তাকাচ্ছে। অথচ এই ছেলেটাই গতবছর- ২০১৭তে জি.জে.এম-এর গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ধর্মঘটের সময় অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছিল নেটিভদের ওপর। কত ঘর জ্বালিয়েছে, কত মেয়ের শরীর ছিঁড়ে খেয়েছে!

-আবে মাদারচোদ! ভিজে বেড়ালের মতো চুপ ক'রে আছিস কেন? গল্পটা বল!

সজল আমতা আমতা ক'রে গোঁফে হাত দিতেই আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল।

-মাথা গরম করাস না! বেশি তেড়িবেড়ি করলে তোর গোঁফ উপড়ে নেবো আমি। মোচ রাখলেই নামর্দ কখনও মর্দ হয় না! শালা, হিজরা কাহি কা! কতগুলো কেস পেন্ডিং আছে জানিস? সব রি-ওপেন করবো। মনে আছে তো, তোর গুরুর পোঁদে কীরকম হুড়কো দিয়েছিলাম? নেহাৎ সুপ্রিম কোর্টের দয়ায় বেঁচে গেল... নাহলে...!

সজলের তারারন্ধ্রদুটো একঝলক চলকে উঠেই আবার আগের মত হলো।

-আমরা তো সি এম-এর সাথে বসতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া ভাইয়া নিজের তাকে খত লিখেছিল... 

-হ্যাঁ লিখেছিল। না লিখে উপায় ছিল না। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল। পুলিশ ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। যেকোনো মুহূর্তে এনকাউন্টার হয়ে যেত সারেন্ডার না করলে।

সজল আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। ওর সেইসব কালো স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে নিশ্চয়ই। পাতলেবাসে কাটানো অনিশ্চিত জীবন, মৃত্যুর কাপড় পরে ঘুরে বেড়াতে দেখা প্রতিটা দিন মনে ঝড় তুলছে ওর। ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে ওর শরীরের ভাষা।

-স্যার! আমাকে ছেড়ে দিন...

-হ্যাঁ ছেড়ে দেবো। যাওয়ার আগে কাহিনিটা শুনিয়ে যা। -মা কসম স্যার, কোনও কাহিনি নেই।

-পাক্কা?

-পাক্কা।

-ঠিক আছে চল, নাম এখন... শ্রীবাস্তব! রুদ্র! ওকে ভেতরে নিয়ে যাও।

আমি দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ওরা সজলকে বগলদাবা ক'রে থানার ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। ও চিৎকার করছে,

-স্যার প্লিজ! মুঝে ছোড় দিজিয়ে...মাইরি বলছি, আমি কিছু জানি না!

আমি ওয়ারলেস বিল্ডিংয়ের সামনে দিয়ে বাঁদিকে চলে এলাম। মাথাটা ভেটকে আছে। বাইরের ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ আরাম লাগছে। সিগারেট ধরালাম। হেলের শরীরে গোখরোর রক্ত কী ক'রে আসে! এ শালা মচকায় তবু ভাঙে না। সজল থাপা... মদন গুরুংয়ের বাঁ-হাত। সেসব দিন এখন ইতিহাস। সজল কন্ট্রাক্টরি ক'রে পেট চালায়। আগের মতো দাপট নেই। তবু ব্যাটার গোঁয়ার্তুমি এতটুকু কমেনি। আমার নামও অবিনাশ খাটুয়া! পেট থেকে কথা কী ক'রে বের করতে হয় সেটা ভালোই জানি। এমনিতেই খেদিইরা আর এডিনবার্গকে লক আপে দেখে ওর চুল খাড়া হয়ে যাবে। একটা বিদেশী চক্র বেশ কিছুদিন ধরেই অ্যাক্টিভ। এখন এদের জবানবন্দি পেলেই পজিটিভলি এগোতে পারবো। গতকালই এই দুই বিদেশির কাছ থেকে যা বর্ণনা পেয়েছিলাম তাতে ক'রে সজলকেই সন্দেহ হচ্ছিল। আজ সাতসকালে ওই মুদিখানা দোকানের মালিক যখন ফোন ক'রে বলল যে একটা লোক তার দোকানের সামনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে এবং সে যখন  লোকটার হুলিয়া ডেসক্রাইব করলো তখনই কনফার্ম হলাম। বাকিটা ওর মুখ থেকেই শুনতে চাই।



18 views0 comments

Comentários


bottom of page