নাড়ির টানে
সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
প্রাচীন,ফাটল ধরা,অন্ধকারাচ্ছন্ন দেওয়ালটাকে ধরে কোনক্রমে পার হচ্ছে সদ্য ষাটের কোঠায় পা রাখা ঋভু।আজকে যে গলিটা পেরোতে এতটা অসুবিধে হল,কুড়ি বছর আগে পেরোনোর সময় কোন অসুবিধেই নজরে পড়ে নি। তখন মনে হয়েছিল বৃদ্ধা মায়ের জন্য যেন ফাইভ স্টার হোটেলের ব্যবস্থা করা গেল। নিজেদের দুহাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটকে সেদিন স্বল্পপরিসর মনে হয়েছিল যেখানে স্ত্রীপুত্র ছাড়া দুই পোষ্য সারমেয়র জায়গা হলেও মা বিমলাদেবীর জায়গা হয় নি।যদিও সেই বিদায়ের দিনে মা মৃদু হেসে বলেছিল-"বেশ তো,ভাল ব্যবস্থাই করেছিস।" অবশ্য ঋভুর অতটা দুর্ভাগ্য হয় নি।ছেলে রিদান আমেরিকায় থাকার গ্রিন কার্ড পেয়ে
যেতে একাকীত্বের চিন্তায় ওর স্বেচ্ছায় নেওয়া এই সিদ্ধান্ত।
স্ত্রী গত হয়েছে বছর দুই হয়ে গেল। ছেলে তো আর দেশে ফিরবে না,অগত্যা এই সমাধানটা ও নিজেই নিজের জন্য বেছে নিয়েছে। সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বাস করে যাওয়া এই
বৃদ্ধাশ্রমটার কথাই প্রথম মনে আসে। নিজেই সব যোগাযোগ করে শুধু রিদানকে এই খবরটুকু জানিয়ে দিয়েছে। মায়ের ফেলে যাওয়া ঘরটা চাহিদামতো পেয়েও গেছে ঋভু। কেয়ারটেকার শম্ভু ঘরটা খুলতেই পরিস্কার শুনতে পেল-"কে ঋভু এলি?আয় বাবা,কতদিন তোর সঙ্গে দেখা হয় নি,বোস বাবা বোস।" ধপ করে খাটটায় বসতেই শম্ভু চা নিয়ে এল,ওর হাতে একটা ডাইরি। ঋভুর হাতে দিয়ে বলল-
"আপনার মায়ের হগ্গল জিনিসের সঙ্গে এটাও আসিল,তখন দিয়া হয় নাই।আমি সামলায়ে রাখসি,এই লন,আপনার মায়ের জিনিস।" ঋভু ডাইরিটা খুলে অবাক হয়ে গেল,মায়ের মৃত্যুর পনেরো বছর পর ও আবিষ্কার করছে যে ওর মা এত সুন্দর ডাইরি লিখত। ওটার প্রথম পাতায় লেখা-নাড়ির টানটা আমার জীবন খুশীতে ভরিয়ে দিল। শেষ পাতায় লেখা-নাড়ির টানের টনটনে ব্যথাটা টের পাচ্ছি। প্রথমটা ঋভুর জন্মের তারিখ আর শেষটা মায়ের মৃত্যুর আগের দিন।
Comentarios