শ্যামাপূজা সংখ্যা ।। অল্প কথার গল্প ( হাস্যকৌতুক ) ।। অরুণিমা

ভূতের রান্না
অরুণিমা
খুব সম্ভব সেদিন টা ছিল শনিবার, আবার অমাবস্যার যোগও ছিল। আমি মিন্টুদের বাড়ি গিয়েছিলাম একটা কাজে। মিন্টুদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি খুব একটা দূর না, তবুও আজ যেন একটু বেশিই তাড়া ছিল আমার। ওই যে গিন্নির চোখ রাঙানি আর গলা বাজানি কে আমি আবার বড্ড ভয় পায়। তারপর বাজার থেকে কিছু জিনিসপত্র কিনে আনতে আদেশ দিয়েছে। বাড়িতে নাকি রান্নার সামগ্রীর ঘাটতি ঘটেছে, তাই দেরি হওয়ার জো নেই।
মিন্টু দের বাড়ি থেকে ফেরার পথে বাজার টাও সেরে নিলাম।
ঘড়িতে দেখি সন্ধ্যে সাত টা বাজে, এমন কিছু সময় হয়ে যায়নি। তবে ওই যে, গিন্নির দাঁত খিচুনিকে আমি আবার বড্ড ভয় পায়।
বাজার থেকে ফেরার সময় শর্টকাট রাস্তা টাই বেছে নিলাম।
মনে মনে একটু হলেও ভয় করতে লাগলো, বুড়োশিবতলার পাশের যে নিম গাছ টা, সেখানে নাকি তেনারা থাকেন।
রাম.... রাম... মুখে নিয়ে এগিয়ে চললাম।
একে তো মফস্বল শহর, তারপর আবার শীত এমন জাঁকিয়ে বসেছে যে, সচরাচর রাস্তা ঘাটে জন মানুষ্যি থাকে না, একটু সন্ধ্যার পর।
সাহসে ভর করে আমি সামনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। হাতে আমার ব্যাগ ভর্তি বাজারের থলি।
নটেশাক, ভেটকি মাছ, ডিম কই, কুমড়ো, কয়েকটা ট্যাংরাও আছে, আর আছে ধনেপাতার মুঠি, লাল শাক, কিছু রান্নার মশালা। আসলে আমি ভীষন খেতে ভালোবাসি আর আমার রগচটা বউ টার হাতের রান্নাটা বড্ড ভালো। আহা! রান্নার কথা মনে পড়তেই জিভ দিয়ে দু - এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
নিজ মেজাজ টা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। কাল রবিবার বেশ জম্পেশ করে নুলো ডুবিয়ে খাওয়া যাবে, আহা!
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে সেই নিম গাছের তলায় এসে পৌঁছে গেছি, টেরও পায়নি। ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। দুটো খনখনে গলায় কথোপকথন শুনতে পেলাম।
– নাঁ... নাঁ আঁঁমি খাঁবো নাঁ। আঁমি ওঁই কাঁচা মাঁছ মাঁংস কিঁছুই খাঁব নাঁ।
– আঁজ তোঁর জঁনমদিন রেঁ মাঁ, তোঁর বাঁবা কঁতো কঁষ্ট কঁরে খুঁজে খুঁজে তোঁর জঁন্য ইঁলিশ মাঁছের মাঁথা এঁনে দিঁল, আঁর তুঁই বঁলছিস খাঁবি নাঁ!
– নাঁ.... বঁললাম তোঁ আঁমি খাঁব নাঁ। কাঁচা জিঁনিস খাঁব নাঁ। ঐ মাঁনুষ দেঁর মঁতন রাঁন্না কঁরে দেঁ।
– আঁ... আঁমি যেঁ ওঁ সঁব পাঁরি নাঁ, তিঁনকুলে কেঁউ এঁমন রাঁন্না কঁরে খাঁয় নিঁকো।
আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে শুনছি তাদের কথাবার্ত
পেত্নি গিন্নির গলায় বিপাকের সুর – এঁখন কিঁ যেঁ কঁরি?
হঠাৎ দেখি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে তিনি।
আমার তো প্রান যায় আর কি। সামনে দাড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলাম।
পেত্নি একটা খনখনে হাসি হেসে বললো – অঁ বাঁচা মাঁনুষের পোঁ, আঁমার এঁককান উঁপকার কঁরবে? আঁমি তোঁমার কিঁছু খেঁতি কঁরবো নিঁ।
আমি তখনো সমানে ঠকঠক করে কেঁপেই যাচ্ছি, মুখে রা শব্দ টি নেই।
– অঁ মিঁনসে বঁলি, উঁপকার কঁরবি কিঁ নাঁ, নঁইলে ঘাঁড় মঁটকাবো।
আমি কোনো রকমে বললাম – হুম...
– বঁল দিঁকিনি, তোঁরা কেঁমনে রাঁধিস?
এবার একটু সাহসে ভর করে বললাম – ও এই ব্যাপার।
আমি তখন আমার নতুন এন্ড্রয়েড ফোন থেকে ইউটিউবে রান্নার ভিডিও চালালাম।
পেত্নির তা দেখে চোখ একেবারে ছানাবড়।
ইলিশ মাছের দই অম্বল টা পেত্নির মনে ধরলো।
সে যাত্রা বেঁচে গেলাম আমি। ভাগ্যিস এনড্রয়েড ফোন টা নতুন কিনেছিলাম সেদিন। না হলে কি যে হতো... উনিই জানেন।
