top of page
Search
agantukpotrika

শ্যামাপূজা সংখ্যা ।। প্রবন্ধ ( ক্রীড়া ) ।। অরুণ


খেলার যুদ্ধ, যুদ্ধের খেলা

অরুণ





জাভেদ আখতারের " Yeh khel kya hey " শোনার পর আর সত্যজিৎ রায়ের " Shatranj Ke Khilari" সিনেমা দেখার পর খুব করে ভেবেছিলাম - সত্যই কি দাবা শুধুই কোনো একটা খেলা ? না কি একটা যুদ্ধও ? শেষে আর ভাবতে না পেরে, মুখ বেঁকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে,  জাভেদ আখতারের থেকেই চুরি করে মনকে সান্ত্বনা‌ দিতে দিতে বলেছিলাম - 'দাবা হলো যুদ্ধের খেলা'। কী অদ্ভুত প্যারাডক্স তাই না !

         অনেকেই হয়তো স্বীকার করবেন যে দাবা আসলেই একপ্রকার যুদ্ধ, খেলার যুদ্ধ। এখানে কোনো রক্তপাত নেই, তবু কাটাকাটি আছে। কিন্তু ক্রিকেট কি যুদ্ধের খেলা, দাবার মতোই ? না! তা তো নয়। অনেকে বলবেন প্রত্যেক খেলাই তো এক ধরনের লড়াই। তবে যদি প্রত্যেক খেলাকে লড়াই- ই বলি, তাহলে ক্রিকেটও এক প্রকার যুদ্ধই বইকি।



          অক্টোবরের ১৭ তারিখ আরবে শুরু হয়েছে T20 ওয়ার্ল্ড কাপ, যাতে অংশ নিয়েছে ভারত সহ মোট ১৬ টি দেশ। কিছুদিন আগেই ঘটে গেল ভারত ও পাকিস্তানের খেলাটি, বেশ আনন্দ এবং উত্তেজনার সাথে। যে উত্তেজনায় শুরু হয়েছিল খেলা, সেই এক উত্তেজনাই খেলার পরও আছে, তবে হাওয়া বদলেছে সামান্য। যেমনটা হামেশাই হয়ে থাকে এই দুই প্রতিবেশীর লড়াইকে ঘিরে।

যে কোনো খেলাতে লড়াই আছে, টক্কর আছে, আছে হার - জিত এবং আছে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট - যা খেলা কে খেলা হিসাবেই নিতে শেখায় এবং শেখায় মেনে নেওয়া। যখন ছোটো ছিলাম, স্কুলের শিক্ষকরা শিখিয়েছিলেন, খেলা কে কিভাবে খেলা হিসাবেই নিতে হয় এবং হারে কষ্ট হলেও তা আসলেই খেলার ও শিক্ষার অঙ্গ।

         কিন্তু কোনোদিনই দেখলাম না ভারত পাকিস্তানের খেলা দর্শকদের মধ্যে কেবল দুই দলের খেলা হিসাবেই রয়ে গেল। শেষমেশ যেন খেলা সত্যই এক যুদ্ধে পরিণত হয় তাদের মনে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনলাইন মিডিয়া গুলোতে শুরু হয় একে অপরের দেশকে গালাগাল দেওয়া। দুই দেশের মধ্যে রজনৈতিক বিরোধ যতই থাক, খেলোয়াড়দের একে অপরের সাথে তো কোনো বিরোধ থাকে না এবং সেই মুহূর্তে মাঠে তো কোনো রাজনৈতিক নেতার অঙ্গুলি চালনায় কিছু হয় না, তাহলে এত কুৎসা কেন ছড়ায় ?



         কেবল রাজনৈতিক দিক দিয়ে পার্থক্যের কারণে নয়, আরো বিভিন্ন কারণে এই ধরনের খেলার সময় ভারত পাকিস্থানের ভক্তদের বিরোধ বাঁধে সবসময়। তারা ভুলে যান এটা কেবলই একটা খেলা, যেখানে একজন জেতে আর একজন হারে। কাউকে না কাউকে তো হারতেই হবে তাই না, সে খেলাতেই হোক বা অন্য যে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতায়।

 যে কোনো খেলা সবসময় আনন্দের। আনন্দ পেলে হারার আর কষ্ট থাকে না।

হারলে কষ্ট থাকবে না তা বলছি না, কষ্ট থাকলে তবেই তো পরেরটা জেতার প্রস্তুতি শুরু হবে। আমি বলছি হার হার থাকে না, যদি আমরা কোনো দেশের সমর্থক না হয়ে খেলার সমর্থক হই। আমরা প্রত্যেকেই অবশ্যই আমাদের দেশের সমর্থক। কিন্তু আমাদের প্রত্যেককেই মনে অবশ্যই একটা ঘর বানাতে হবে শুধু খেলার জন্য, সেখানে কোনো দেশের নাম থাকবে না।

মনে রাখতে হবে খেলা লড়াই হলেও যুদ্ধ নয় মোটেই।




          আসলে ভক্তির এবং অন্ধ ভক্তিরও একটা সীমা থাকে সবসময়, যা চোখে এবং অন্ধ মনে দেখা মেলে না। দুই দেশেরই কিছু কিছু মানুষ ভুলে যান অপর দেশেও তাদেরই মত কিছু মানুষ বাস করেন। সবাই তো আর মৌলবাদী নয়।

ভালো করে ভেবে দেখুন তো, একবার নিজেকে কেবল ভারতের বাসিন্দা বা ভারতের ক্রিকেট দলের সাপোর্টার না ভেবে, নিজেকে  সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দূরে দাঁড়ান আর ভেবে দেখুন ম্যাচটা সম্পর্কে। দেখবেন পাকিস্তানের ক্রিকেট টিম কি ম্যাজিকের মতো খেললো সেদিন। আপনিও মুগ্ধ হয়ে গেছেন নিশ্চই। 

আমি নিজে তো ভারতেরই বাসিন্দা তাই ভারতকে সাপোর্ট করা আমার খুবই স্বাভাবিক আর সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু আমি নিজের থেকে সবসময় বেরোবার চেষ্টা করি, দেখার চেষ্টা করি যা যা অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সবসময় যে সবকিছুর ওপর আলো জ্বলে উঠবে তাও নয় কিন্তু চেষ্টাটাই প্রধান আর চেষ্টা করলে অবশ্যই আলো জ্বলবে।


          "আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া,


          বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া "





             আচ্ছা একনায়কতন্ত্র কি ভালো ? অবশ্যই ভালো নয়। একঘেয়ে জীবন অনেকসময়  বিরক্তির হয়, রোজ যদি একই খাবার খান ভালো লাগবে ? ( হোক না তা যতই পছন্দের)। তাই মাঝে মাঝে এই ধরনের একঘেয়েমি কাটানোর প্রয়োজন। ভারত এতদিন জিতে এসেছে পাকিস্তানের সামনে। তাই এবারেও আমার মনে হয় ভারতের প্রত্যেক মানুষ, প্রত্যেক সমর্থক ভেবেছে ভারত জিতবেই। ভারতের জেতাটা খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছিল। আমরা ভেবেছিলাম ভারতের জেতা স্বাভাবিক, যেমন স্বাভাবিক বিকাল হওয়া, যেমন স্বাভাবিক সকাল হওয়া। তাই মাঝে মাঝে এই ধরনের অস্বাভাবিক স্বাভাবিকতা কে ভেঙে ফেলা খুবই প্রয়োজন। এই ভাঙায় একজন বিজেতা হলেও, লাভ হয় কিন্তু দুজনেরই।


            সব শেষে বলি, যে সকল ভক্ত  অন্য দেশের ভক্তদের বা খেলোয়াড়দের কুরুচিকর মন্তব্য করেন, তারা আর যাই হোক খেলার দর্শক নয়, তারা খেলা দেখলেও খেলোয়াড়দের দেখেননা, কিছুই শেখেন না তাদের দেখে। 

আর আমি খুবই আশাবাদী যে আমরা প্রত্যেকে একদিন নিজের থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো, অন্ধকার দূর করে।


असतो मा सद्गमय ।

तमसो मा ज्योतिर्गमय ।

मृत्योर्मा अमृतं गमय ।

ॐ शान्तिः शान्तिः शान्तिः 


    (Asato Ma Sad Gamaya

Tamasoma Jyotir Gamaya

Mrityor Ma Amritam Gamaya)

14 views0 comments

Comments


bottom of page