top of page
Search

২৩শে এপ্রিল সংখ্যা ।। অক্ষয় তৃতীয়া বিষয়ক প্রবন্ধ ।। সৌভিক রাজ

agantukpotrika

অক্ষয় তৃতীয়া, বহু পৌরাণিক ঘটনার সাক্ষী এক তিথি


সৌভিক রাজ


বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন কথাটা, প্রবাদ হিসেবে বলি বটে কিন্তু তেরো না হয়ে তেরো হাজার হলে বোধহয় ঠিক হত। উৎসব প্রিয় বাঙালির কাছে অক্ষয় তৃতীয়াও এক পার্বন। যেভাবে পয়লা বৈশাখ পালন করেন বাঙালি ব্যবসায়ীরা, সেইভাবে বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথিটিও উদযাপিত হয়।

হালখাতার আয়োজন করেন ব্যবসায়ীরা। লক্ষ্মী, গণেশের পুজো করা হয়। মিষ্টি মুখ চলে। বিভিন্ন শুভ কাজ করা হয়। দেবদেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা, গৃহপ্রবেশ, সম্পত্তি ক্রয়, গৃহনির্মাণ, পিতৃপুরুষের স্মৃতিতে তর্পণ প্রভৃতি নানা ধরনের শুভ কাজের ক্ষেত্রে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটির কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু এদিনের পৌরাণিক মাহাত্ম অপরিসীম। মনে করা হয়, এই তিথিতেই ত্রেতা যুগ শেষ হয়ে, দ্বাপর যুগ শুরু হয়েছিল। আবার এও মনে করা হয় যে, সত্যযুগের সূচনা হয়েছিল অক্ষয় তৃতীয়ায়।




এই দিনেই তপস্যার করে গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন ভগীরথ। ভারত কৃষিপ্রধান দেশ, অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষ্যে ধরিত্রীদেবীর পুজোও করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া তিথিটিকে পরশুরাম জয়ন্তী হিসেবেও পালন করা হয়। মনে করা হয়, বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম এদিনেই জন্মেছিলেন। ঋষি জমদগ্নি ও রেণুকার পুত্র পরশুরাম ব্রাহ্মণ হলেও, আচরণে ছিলেন ক্ষত্রিয় বীর। ব্রহ্মক্ষত্রিয় পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে পৃথিবীকে ২১বার ক্ষত্রিশূন্য করেছিলেন।


অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই মহর্ষি কৃষ্ণদৈপায়ণ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী মহাভারত আকারে লিপিবদ্ধ করতে আরম্ভ করেন গণেশ। মহাভারত হল মহাকাব্য, যা পঞ্চম বেদ হিসেবে স্বীকৃত। আদপে মহাভারতের দ্বৈরথের শুরু এদিন থেকেই, ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ বহুদিন ধরেই ছিল। শেষ আগুন জ্বলেছিল এদিন। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন হস্তিনাপুরের রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। দ্রৌপদীর প্রার্থনায় শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বস্ত্র দান করেছিলেন। আবার তিথিটির নামকরণের সঙ্গেও জুড়ে রয়েছে মহাভারত। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, মহাভারতে পাণ্ডবরা যখন অজ্ঞাতবাস এবং নির্বাসন মিলিয়ে ১৩ বছর কাটিয়ে ফেলেন, তারপর একদিন ঋষি দুর্বাসা, তাঁদের সন্ধানে তাঁদের অস্থায়ী বাসস্থানে প্রবেশ করেন। দ্রৌপদী তাঁকে অক্ষয় পাত্রে আহারাদি খেতে দেন। এই আপ্যায়নে এবং আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে দুর্বাসা বলেন, ‘আজ অক্ষয় তৃতীয়া। আজ যে ছোলার ছাতু, গুড়, ফল, বস্ত্র, জল ও দক্ষিণা দিয়ে বিষ্ণুর পুজো করবে, সে সম্পদশালী হয়ে উঠবে।’ মনে করা হয়, এরপর থেকেই অক্ষয় তৃতীয়া জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এই দিন পুজো করার রীতি সেই থেকেই চলে আসছে। আজও এইদিনটিতে শুভ কাজ সারেন সকলে।




অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বৈভবলক্ষ্মীর পুজো হয়। কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব এই তিথিতেই তাঁকে অসীম ধন ও ঐশ্বর্য প্রদান করেন। তাই মনে করা হয়, এই দিন কিছু প্রার্থনা করলে তা অক্ষয় হয়। তিথিটি যেহেতু তৃতীয়, তাই দুয়ে মিলে অক্ষয় তৃতীয়া। অক্ষয় শব্দের অর্থ যার কোনও ক্ষয় নেই। এই তৃতীয়া তিথি ক্ষয়হীন। অর্থাৎ যার ফল কখনও নষ্ট হয় না।


অক্ষয় তৃতীয়ায় কৃষ্ণর বাল্যসখা সুদামা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে বৃন্দাবন থেকে দ্বারকায় এসেছিলেন। প্রিয়তম বন্ধুর জন্য সে কাপড়ের পুটুলিতে তিনমুঠো তণ্ডুল বেঁধে এনেছিল। তা পরম তৃপ্তিতে গ্রহণ করেন কৃষ্ণ। সুদামা নিজের দারিদ্রের কথা বলতে পারলেন না। কৃষ্ণের অজানা কিছুই নয়। সুদামা ফিরে এলেন বৃন্দাবনে। তাঁর পর্ণকুটির হয়ে উঠল এক সুরম্য বাসগৃহ। সেখানে রয়েছেন স্ত্রী বসুন্ধরা ও সন্তানরা। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিতেই সুদামার দারিদ্র‌ দুঃখ মোচন করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।


পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের কাছে অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য জানতে চেয়েছিলেন রাজা যুধিষ্ঠির। উত্তরে কৃষ্ণ বলেছিলেন, অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য অনন্ত। সূর্য বনবাসের সময় যুধিষ্ঠিরকে অক্ষয় পাত্র দান করেছিলেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, এদিন ভগবান নরনারায়ণ, শ্রীশ্রী হয়গ্রীব মাধব, শ্রীশ্রীধূমাবতীদেবী এবং শ্রীশ্রীপরশুরামের আবির্ভাব হয়েছিল। এদিন শ্রীশ্রীপরশুরাম ও দশমহাবিদ্যার অন্যতম শ্রীশ্রীধূমাবতীদেবীর পুজো অনেকেই করেন। এদিন শিব, গঙ্গা, কৈলাস, হিমালয় ও ভগীরথের পুজোও হয়। অক্ষয় তৃতীয়ায় পুরীধামে জগন্নাথদেবের ২১ দিনব্যাপী চন্দনযাত্রার শুরু হয়। এই তিথি থেকেই জগন্নাথদেবের রথনির্মাণ শুরু হয়। যা আষাঢ়ের শুক্ল দ্বিতীয়ার আগে অর্থাৎ রথযাত্রার একদিন আগে শেষ হয়।


কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী; এই চারধামের যাত্রা শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ায়। গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ মন্দিরের দরজা খোলা হয় এই দিন। দরজা খুলে দেখা যায়, ছ-মাস আগে যে অক্ষয়দ্বীপ জ্বালিয়ে রেখে আসা হয়েছিল তা তখনও জ্বলছে। মনে করা হয়, এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব হয়েছিল।



19 views0 comments

Commenti


Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page