চিরাগনামা
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
মুর্শিদাবাদের নবাবী মসনদ। এই প্রাসাদের কর্তৃত্ব নিয়েই একদিন ১৭৫৭-র ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তখন কেউ বুঝতে পারেনি যে সুবাহ্ বাংলার সাথে সাথে তামাম শাহী হিন্দুস্তানের আকাশেও ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে ফিরিঙ্গিয়ানার কালো মেঘ। আর সেই অমঙ্গলের আবহে রাজ কুঁয়ার নামে অখ্যাত এক হতভাগিনী হিন্দু পরিচারিকাই হয়ে উঠেছিল মসনদের শেষ মঙ্গলাকাঙ্খী।
নবাবের আম্মাজান আমিনা বেগম-এর জীবন তো তেমন সুখের ছিল না; আমিনা বেগমের স্বামীর নাম জৈনুদ্দীন। তিনি পাটনার (বিহার) নায়েব সুবাহ্দার ছিলেন। বিদ্রোহী আফগান নেতারা জৈনুদ্দীন কে হত্যা করে দু ছেলেসহ আমিনা বেগমকে বন্দি করে। আলীবর্দী খাঁ বিদ্রোহী আফগান নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদের মুক্ত করেন। এই আমিনা বেগমের এক ছেলের নাম মির্জা মেহেদী। আর তাকেই একদিন মসনদে বসতে হল দাদাজী খোদ আলীবর্দী খাঁ এর উত্তরাধিকার হয়ে। অবশ্য সেদিন থেকেই তা হয়ে উঠল এক শেষের আনজানের শুরুয়াৎ।
অবশ্য সেই রাজ কুঁয়ার কি করে যেন বাঁদীমহল থেকে একদিন খোদ মির্জার নেকনজরে পরে তামাম জেনানামহলের মালকিন হয়ে উঠল খুব তাড়াতাড়ি সেটাও কম রূপকথার কিসসা নয়! তবে সর্বস্ব হারানোটাই যার নিয়তি সে তার সমস্তটাই এরপর থেকে হারাতে বসল আরো দ্রুততার সাথে। সেদিনের চিত্রনাট্যে অবশ্য 'রাজ কুঁয়ার' বলে আর কেউ রইল না। ঝাঁ চকচকে শাহী প্রাসাদে ক'দিন আগেও যার বাহারি মল ঝমঝম করে বাজত সে হল বেগম "লুৎফাউন্নিসা" বা তার মির্জার অনেকগুলি বেগমদের মধ্যে একান্ত আদরের বেগম!
আজ সেসব যেন এক অন্য জন্মান্তরের যাদু কিসসা!
....
কমলিকার আবার একটা নতুন উপসর্গ শুরু হয়েছে। কোথাও একটুকরো আগুন বা মোমবাতির আলো দেখলেও ও কেমন যেন করে ওঠে। সারা শরীর জুড়ে একটা অস্থিরতা চেপে ধরে ওই নিষ্কম্প অগ্নিশিখাটিকে দেখলে। সেদিন প্রেয়ারে সময় সবাই মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেছে ঠিক তখনই সে অস্থির হয়ে উঠল। চ্যাপেলে রাখা প্রভু যীশু ও মাতা মেরীর ছবির সামনে জ্বালানো বাতির শিখাটি যেন ওর সারাটা গায়ে কেউ যেন ধরে ক্রমশ জ্বালিয়ে দিতে চাইছে সমস্ত শরীর। ওকে ধরে রাখাটাই সেদিন কঠিন হয়ে পড়েছিল।
....
( ক্রমশ..)
Comments