চিরাগনামা
পূর্ববর্তী পর্বের পর...
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
১৭৫৭ সালে পলাশীর বিপর্যয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদ নগর থেকে একাকী পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেদিন বেগমসাহেবাও সেই বিপর্যয়ে খুব ভেঙে পড়েন, তাঁকে সঙ্গে নেয়ার আকুল আবেদন করেন।
তারপর এল ১৭৫৭ সনের ২৪ জুন। একটি অভিশপ্ত রাত। খাজা দিলীল খাঁ ইশারা করতে সেই রাতে নবাব নিজে তাঁর একমাত্র শিশুকন্যা জোহরা, বেগমসাহেবা স্বয়ং এবং একজন অনুগত খোজা ভৃত্য সহ মুর্শিদাবাদ শহর ত্যাগ করলেন। তবে তাঁদের সেদিন ধরা পড়ে যেতেও দেরি হয়নি। দানা শাহ্ ফকির ঘাটের পথে সপরিবারে নবাবকে চিনতে পেরে মীরজাফরের কানে খবর পৌঁছে দিয়ে মোটা ইনাম বখশিস্ পায়। তারপর কতকালের পুরনো নেমকহারাম দেউড়ির আকাশ বাতাসে মীরজাফরের দেওয়া নবাবকে হত্যার আদেশ শেষমেশ যবনিকা পতনের করুণ অথচ পরাজিত হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটির নির্মম অবতারণা করে জ্যান্ত ওঠে।
....
আজ আসরফী এইসব বৃত্তান্তটা যখন বিবিজানের কাছে শুনছিল তখন ওর চোখদুটো যেন আপনা থেকেই অশ্রুবাষ্পে ভিজে যাচ্ছিল। কি আশ্চর্য! ইবলিশের বাচ্চারা ওই দুধের শিশুটাকেও সেদিন ছাড়েনি!
মসনদের আনাচে কানাচে যে এরকম কত ঘটনা আছে, কে তার খবর রাখে? কিন্তু সে বোঝেনা যে এই বিবিজান সবটা হুবহু কি করে জানতে পারলো! তাহলে এখানে এই বিবিজান তাহলে কি......?
কমলিকাকে সিস্টার নিজে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলেন । তখন খুব ঠকঠক্ করে কাঁপছিল সে। দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার আওয়াজটা ক্রমশ মিলিয়ে আসতে আসতে তার দুটো চোখে গভীর ঘুম নেমে আসছিল। বড় প্রশান্ত মুখশ্রীর কমলিকাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে বোঝা যায়না যে অন্য সময় ওর মধ্যে এরকম ঝড়ের তাণ্ডব চলতে থাকে।
কিন্তু আজ যেটা আর কেউ দেখতে পেলনা সেটা হল ওর ঢলা কামিজের একটা পকেটে ওখানে জ্বলন্ত একটা মোমবাতির টুকরো সন্তর্পণে ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে লুকিয়ে নিজের কাছে নিয়ে রেখেছে।
( চলবে...)
Comments