top of page
Search

৬ই আগস্ট সংখ্যা ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সমীরণ সরকার


ree

যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডার

সমীরণ সরকার


( সপ্তম পর্ব )


মাধব আবার তিস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে।নাঃ! সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না যে, মন্দিরের অভ্যন্তরে বসে থাকা ঐ সুন্দরী তরুণী ছোটবেলায় দেখা সেই রোগা কালো মেয়েটা। নেহাত ঠাকুর মশাই বলেছেন তাই। অন্য কেউ বললে তো-----!

তিস্তা ও অবাক হয়ে যায় দাদুর ব্যবহারে। দাদুর সামনে দাঁড়িয়ে কে ওই যুবক ?

সদ্য স্নান করে আসা ওই যুবকটি বারবার তাকিয়ে তাকে দেখছে কেন? ও কী তাকে চেনে?

হঠাৎ সে শুনতে পায়, যুবকটি তার দাদুকে বলছে, হঠাৎ করে রাস্তায় কোথাও দেখলে তো ওকে আমি চিনতেই পারতাম না যে, ও আপনার নাতনি ,সেই তিস্তা। কি সুন্দর হয়েছে ও।

দাদুকে বলা যুবকটির কথা কানে আসায় তিস্তা মনে মনে বেশ খুশি হয় । কিন্তু এতক্ষণ যাকে সে অপরিচিত ভাবছিল , ওর কথা শুনে এখন তো মনে হচ্ছে যে সে তার চেনা । কিন্তু কিভাবে?

তবে কী.....?

পুরোহিত চক্রবর্তী মশাই বলেন, মাধব ,আরো একটা চমক আছে তোমার জন্য।

-----কী?



পুরোহিত মশাই তিস্তাকে বললেন, শুরু কর দিদিভাই।

----- এখন থাকনা দাদু, পরে না হয়.....

------- তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস দিদিভাই ?

------ না, তা নয়। আমার এখন ইচ্ছে করছে না।

------ আমার মনে হয় তুই এখনো ওকে চিনতে পারিস নি। ----তাইতো?

তিস্তা কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নামায় ।

ঠাকুর মশাই বলেন, বেশ আমি তোকে মনে করিয়ে দিচ্ছি। অনেক বছর আগে একবার ছোটবেলায় তুই তোর বন্ধুদের নিয়ে কালিসায়রে স্নান করতে গিয়ে ডুবে গেছিলি। তোর বন্ধুরা ভয়ে চিৎকার করছিল।আর সেই সময় একটা ছেলে জলে ঝাঁপিয়ে তোকে বাঁচিয়েছিল । কিরে মনে পড়ছে?

----- মনে আছে দাদু।

------ তাহলে তুই ওকে চিনতে পারছিস না কেন?

----মানে?

----- ওই তো সেই মাধব, যে বাঁচিয়েছিল তোকে।



তিস্তা অবাক হয়ে তাকায় মাধবের দিকে। সেদিনের সেই ছোট্ট গোলগাল নাড়ু গোপাল চেহারার ছেলেটা আজকে এমন লম্বা, বলিষ্ঠ চেহারার যুবক? কি সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত দুটো চোখ। ওদিকে তাকালেই তো বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে। এটা সেই ছেলে? তিস্তা আজকের মাধবের মধ্যে সেদিনের মাধবের চেহারার মিল খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । কিন্তু না মেলাতে পারে না কিছুতেই ।দাদু বলে না দিলে তো সে কল্পনা করতে পারতো না।

চক্রবর্তী ঠাকুর বললেন, কি এবার চিনতে পারলি?

তিস্তা নিরুত্তর । চক্রবর্তী ঠাকুর বলেন, এবার শুরু কর দিদিভাই। মাধব একটু বসো আমার কাছে। দেখো তোমার জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে। মাধব অবাক হয়ে চক্রবর্তী ঠাকুরের পাশে এসে বসে।

একটু সময় কেটে যায়। হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে গান ভেসে আসে। তিস্তা গাইছে। শিবের ভজন। কিন্তু এই গান ও শিখলো কার কাছে?

এ গান তো....

তিস্তা গাইছে,

জাগো শিব শংকর, ভোলা মহেশ্বর

জেগে ওঠো ওহে নটনাথ,

জাগো মহাযোগী ,জাগো হে বৈরাগী

জাগো জাগো হে ভোলানাথ।


ধুর্জটি চেয়ে দেখো চারিধারে হলাহল,

বাতাসে মিশিছে বিষ ,নাচিছে নাগিনীদল।

বাঁচাও এ বিশ্বে ওগো সিতিকণ্ঠ,

আখি মেলো ওহে ভুতনাথ।


ডমরু গুরু গুরু বাজাও হে মহাকাল,

নাচো নটরাজ নাচো,খুলে যাক জটাজাল।

বিষাণের ধ্বনিতে ওগো নীলকন্ঠ,

অশুভ ঘোচাও দীননাথ।


মৃত্যুঞ্জয় ওগো কর প্রভু বিলোকন,

করুনা মাগিছে ধরা, ত্র্যম্বক ত্রিলোচন।

মাধবের প্রণতি লহ বিরূপাক্ষ,

করুণা কর উমানাথ।


গান থেমে গেল। কিন্তু সুরের রেশ রয়ে গেল আকাশে, বাতাসে। মাধব বিস্মিত হয়। এত সুন্দর গান গায় মেয়েটা। তাছাড়া এই গানটা ও ও জানলো কি করে? চক্রবর্তী ঠাকুর মুচকি মুচকি হাসছেন কেন?

----- কি মাধব ,খুব অবাক হলে তো।

------- হ্যাঁ, ঠাকুরমশাই ,না ,আসলে,....

----- বলেছিলাম না একটা চমক আছে তোমার জন্য?

----- কিন্তু ও কি করে ? এটাতো--

------ হ্যাঁ ,এটা তোমার লেখা তোমার সুর দেওয়া গান । তোমার মুখে গানটা শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আমি কাল রাতে শিখিয়েছি দিদিভাইকে।

মাধব অবাক হয়। মাত্র এক রাতের মধ্যে গানটা শিখে এত নিখুঁতভাবে মেয়েটা গাইলো কি করে?




(চার)

বাঁকুড়া শহর ছাড়িয়ে যে রাস্তাটা ছাতনা হয়ে পুরুলিয়ার দিকে গেছে, সেই রাস্তার উপরেই বাঁকুড়া থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রায় দশ বিঘা জায়গার উপরে মস্ত বাড়ি 'চৌধুরী ভিলা'। চৌধুরী ভিলার চারিদিক প্রায় দু মানুষ উঁচু পাকা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। পুরো বাড়িটা তিনটি অংশে বিভক্ত। 'কাছারিবাড়ি', অন্দরমহল' আর ' উদ্যান'। চৌধুরী ভিলার এই উদ্যান অংশটি সবচেয়ে বড়। এখানে ফুলের বাগান আছে, নানারকম ফলের বাগান আছে, সবজি খেত আছে ,গোশালা আছে আর আছে

একটা বিশাল পুকুর। সারা বছর টলটলে জলে ভর্তি থাকে পুকর।


(চলবে)



 
 
 

Comments

Couldn’t Load Comments
It looks like there was a technical problem. Try reconnecting or refreshing the page.

Subscribe Form

Thanks for submitting!

©2021 by Agantuk Potrika.

bottom of page