top of page
Search

বিশেষ সংখ্যা ।। ভয় ভৌতিকে ।। গৌর সামন্ত


রাতের অতিথি


গৌর সামন্ত

                                             

   তিন বন্ধু কলকাতা থেকে পাহাড়ে বেড়াতে এসে উঠেছে  একটা পুরনো বাড়িতে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তিন বন্ধু অনেক অভিজাত বিলাস বহুল হোটেল ছেড়ে এখানে উঠেছে কেবল হাড়হিম করা পরিবেশের রোমাঞ্চ অনুভব করার জন্য । পাহাড়ী পথের  থেকে বেশ একটু দূরেই ছিল তাদের এই বাড়িটা । বাড়িটার আশেপাশে এক - দু কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়ি ছিল না । চারিদিকে তাকালে শুধু গাছ আর গাছ ।  সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হলো বৃষ্টি কেমন যেনো গা ছমছমে অবহাওয়া । তিন বন্ধুর মধ্যে সবচেয়ে সাহসী নীলু । বাকি দুজন অর্থাৎ বিলু ও অমল যে কম সাহসী তা বলা যায় না । বাড়িতে তারা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই । বাড়ির মালিক বিকেলেই চাবি দিয়ে বিদায় নিয়েছে ।  সন্ধ্যার টিফিন সেরে তারা একটু তাস নিয়ে বসে ।কিন্তু লোকে তিনজন আর একজন না হলে ঠিক জমবে না ভেবে নিরাশ হয় সকলে ।তার পর তিনজনে নিজেদের গল্পে ব্যস্ত হয়ে যায় ।রাত একটু গভীর হলে বিলু বলে ওঠে "আর একজনকে পাওয়া গেলে দারুণ হতো । তাস খেলাটা জমে যেত "। কথাটা শেষ হতে না হতেই দরজায় একটা টোকার শব্দ শোনা যায় । প্রথমটা তারা এমনি কোনো শব্দ ভেবে আবার নিজেদের কথায় ব্যস্ত হয়ে যায় । কিন্তু দ্বিতীয়বার টোকার শব্দ শুনে তিনজনই ভয়ে জড়ো হয়ে যায় । বৃষ্টিবহুল রাতে পাহাড়ী এই সংকীর্ণ পথে এত রাতে কে আসতে পারে ।  শব্দটা এবার বারবার হতে থাকে । নীলু সকলকে সাহস দেয়ার জন্যে বলে "হয়তো কেউ বিপদে পরে সাহায্যের জন্যে এসেছে" । নীলু উঠে দরজাটা খুলে দেয় ।  দরজা খুলতেই ঘরে ঢোকে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছরের এক যুবক । একরাশ হাসি মুখে যুবকটি বলে ওঠে "গাড়িটা কাছেই খারাপ হলো  কোনো উপায় না দেখে সাহায্যের জন্যে এলাম" । নীলু ভদ্রলোককে একটা ওয়ার্ম ওয়েলকাম জানালো । সকলে মিলে বৈঠকখানায় বসে । অমল কেমন যেনো ভয়ে জড়সড় । অমল লক্ষ্য করে  লোকটি এত বৃষ্টিতে এলো হাতে ছাতাও নেই অথচ একটুও ভেজে নি  । বিলুও ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিল না । এই সময়ে কি করে কেউ আসতে পারে । যাই হোক চার জন তাস খেলতে বসে । রাত তখন আনুমানিক ১১ টা হবে । বেশ অনেকক্ষণ খেলা চলেছিল.  নীলু ভদ্রলোককে সিগারেট অফার করলে লোকটি  বলে "no thanks" । তার পর গল্প ও তাস খেলে বেশ সময় কাটছিল । আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটার দিকে খেলা শেষ হয়।  সারাটা খেলায় ভদ্রলোক একাই যেনো খেলে গেলো । ভদ্রলোক যেন অপর দিকের পার্টনারের হাত  দেখতে পাচ্ছে । নীলু পর পর হেরে  তো শেষে রেগে তাস গুলো ছুঁড়ে ফেলে দেয় ।  রাতের ডিনার সারতে প্রায় একটা বেজে যায় । ভদ্রলোক ওদের সাথে ঘুমতে যায় । বলে "সকালে উঠে দিনের আলোয় তার গাড়ি সারিয়ে ঐ গাড়িতে সকলে একসাথে কলকাতা  ফিরবে" । সকলে প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় কারণ যাই হোক একটা খরচ বেচেঁ যাবে । সকলে আর পর ঘুমোতে যায় ।  সকালে ঘুম থেকে উঠে নীলু দেখে সেই ভদ্রলোকটি কখন চলে গেছে ।বাড়ির সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভদ্র লোককে পাওয়া গেলো না । আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভদ্রলোক গেলো কী ভাবে ঘর তো ভিতর থেকে বন্ধ । তারা বেশ বিস্মিত ও হয় । তিনজনই বিষয়টা ঠিক মেনে নিতে পারছিল না ।                    যাই হোক সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে তারা কলকাতা ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয় । কিছু টা নেমে তারা দেখে একজায়গায় বেশ কিছু লোক দাড়িয়ে আছে । আর একটা ক্রেন একটা প্রাইভেট গাড়িকে  খাদ থেকে টেনে তুলছে ।  পাশে দাঁড়ানো পুলিশকে অমল জিজ্ঞাসা করে স্যার কি হয়েছে । তিনি জানান "কাল সন্ধায় একটা দুর্ঘটনায় গাড়িটি খাদে পড়েছিল । আলোর অভাবের জন্যে কাল গাড়িটিকে উদ্ধার করা যায় নি  তাই আজ সকালে উদ্ধার করা হচ্ছে" । তিন বন্ধু একমনে শুনছিল। তারা হেঁটে সামনে এগিয়ে যাবে এমন সময় ক্রেনটি গাড়িটিকে তুলে রাস্তার মাঝখানে রাখে । গাড়ির ভিতর থেকে বের করা হয় চালকের মৃতদেহ । মৃতদেহের  মুখ দেখে তিন বন্ধুর পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ার জোগাড় । বিলু বিস্ময় মেশানো স্বরে বলে ওঠে "এ তো কাল রাতের ভদ্রলোক, যার সাথে তাস খেললাম, ডিনার করলাম, একসাথে ঘুমোতে ঘুমোলাম"। নীলু  পুলিশকে দুর্ঘটনার সময় জিজ্ঞাসা করে । পুলিশ অফিসার রাগের সঙ্গে বলে "আরে মশাই বললাম তো কাল সন্ধ্যায়  অ্যাকসিডেন্টটা ঘটেছিল । আর আপনারা এত খোঁজ নিচ্ছেন কেন"। তিন বন্ধু আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পা চালায় কলকাতা ফেরার উদ্দেশ্যে । বিলু  ঘামতে ঘামতে বলে  "কালকে কার সাথে নীলু তাস খেললাম ?" নীলু ততক্ষণে প্রায় দৌড় শুরু করে দিয়েছে বাস স্ট্যান্ড পৌঁছানোর জন্য। তিনজনই কলকাতাগামী বাসের জন্য মরি-বাঁচি করে দৌড়াতে থাকে । নীলু একবার পিছন দিকে তাকিয়ে শুধু বললো    " রাতের অতিথি আসলে একটা ভুত ছিল "। বাসে বসে তারা বারবার পিছনের দিকে তাকাচ্ছিল । কালরাতের কথা ভেবে তাদের গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল । বাসটি পাহাড়ী অঞ্চল ছেড়ে শহরের পথ ধরলে তারা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

9 views0 comments
bottom of page