top of page
Search

রবি স্মরণে সৌভিক রাজ - ২


ভোজনবিলাসী, রবি ঠাকুর


সৌভিক রাজ



কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নানা ধরনের খাবার ভালোবাসতেন এবং কখনো কখনো নিজ হাতে রান্নাও করতেন। আমরা অনেকেই জানি না তাঁর রন্ধনপ্রীতি সম্পর্কে। 


 পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সময় সেসব জায়গার নিজস্ব খাবারের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্ম নেয়, তার থেকে  কোনো কোনোটি আবার  পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায়  পেয়েছে। যেমন: প্যাটিস, স্যুপ, পাই, কাটলেট, রোস্ট, কাবাব ইত্যাদি। ঠাকুরবাড়ির পাকঘরের ঠাকুরদের দিয়ে দেশি এবং বিদেশি রান্নার ফিউশন করিয়েছেন, যা থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন স্বাদের খাবার। এরই মধ্যে সেগুলো নিয়ে রন্ধনশিল্পীরা বেশ কিছু বইও প্রকাশ করেছেন।


 ঠাকুরবাড়িতে সবাইকে নিয়ে কবি একসঙ্গে চা চক্রে চা, খেতে বসতেন। কবি জাপানি চা পছন্দ করতেন কেবল তা-ই নয়, সঙ্গে তাদের চা খাওয়ার রেওয়াজটিও ছিল তাঁর পছন্দের। তিনি জাপানে গেলে প্রায় প্রতিদিনই তার জন্য ‘টি সেরিমনি’ আয়োজন করতেন গুণমুগ্ধরা।



১৯১৩ তিনি নোবেল পুরস্কার  পান । ঠিক তার, আগের বছর ১৯১২ সালে লন্ডনে ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ওই দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ইন্ডিয়ান সোসাইটি, লন্ডন। সেদিনের খাদ্য তালিকা হয়েছিল কবির পছন্দে।ওই দিন খাবারের তালিকায় ছিল গ্রিন ভেজিটেবল স্যুপ, ক্রিম অব টমেটো স্যুপ, স্যামন ইন হল্যান্ডেন সস এ্যান্ড কিউকামবার, প্রি সলটেড ল্যাম্ব উইথ গ্রিন ভেজিটেবল, রোস্ট চিকেন, ফেঞ্চ ফ্রাই, গ্রিন স্যালাড ও আইসক্রিম।



কবির স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর রান্না ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে খুব জনপ্রিয় ছিল। তার হাতের রান্না খেতে সবাই খুব পছন্দ করতেন, বিশেষত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি নাকি টকের সঙ্গে ঝাল মিশিয়ে বেশ নতুন নতুন পদ তৈরি করতেন। বাইরের খাবার খেলেও বাড়িতে কবি কম তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেতেন, তিনি রাত দুটোর সময়ও মৃণালিনী দেবীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কিছু রান্না করে খাওয়াতে বলতেন এবং  শোনা যায় এই ঘটনা নিয়মিত  ঘটত আর মাঝরাতে মৃণালিনী দেবী রান্না করে রবীন্দ্রনাথকে খাওয়াতেন।



 মৃণালিনী দেবীর হাতে তৈরী  দেশি খাবারের মধ্যে, তিনি পছন্দ করতেন কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছ আর চালতা দিয়ে মুগের ডাল এবং নারকেল চিংড়ি। তিনি কাবাব খেতে খুব পছন্দ করতেন। এর মধ্যে ছিল শ্রুতি মিঠা কাবাব, হিন্দুস্তানি তুর্কি কাবাব, চিকেন কাবাব নোসি।জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এখনও সযত্নে রক্ষিত আছে মৃণালিনী দেবীর রান্নাঘর। সেখানে রয়েছে তার ব্যবহৃত একটি উনুন, আর বেশ কিছু চিনামাটির বাসন। ঠাকুরবাড়ির রান্নায় বেশি করে মিষ্টি দেওয়ার প্রচলন ছিল। গরম মশলা, লবঙ্গ, দারুচিনি বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। রান্নার তালিকায় প্রতিদিনই প্রচুর পদ থাকত। নিয়মিত অবশ্যই থাকত সুক্তো আর দইমাছ।ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব কিছু মৌলিক পদ ছিলো,যার অধিকাংশ হারিয়ে গেলেও বেশ কিছু সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে l সেগুলি আজও,রয়েগেছে;  কলকাতার কিছু নামি রেস্তোরায় দেখা মেলে ঠাকুর বাড়ির বিভিন্ন পদের l 


কবির খাদ্যপ্রীতিও ধরা দিয়েছে,তাঁর বিভিন্ন রচনায় ! হিমানীশ গোস্বামী তার মজার অভিধান ‘অভিধানাইপানাই’-তে ‘Solar cooker’ এর বাংলা করেছিলেন রবি ঠাকুর! 



রবীন্দ্রনাথ,তাঁর আইসক্রিম  প্রীতির জন্যেও পরিচিত ছিলেন,তাঁর রসবোধ ছিলো মারাত্মক l   কবিগুরুর,আইসক্রিম প্রেম আর রসবোধের মিশেলে এক কিংবদন্তি রয়েছে, একবার কবি ভক্ত আর ছাত্রছাত্রীদের সামনে গাইছেন, “হে মাধবী, দ্বিধা কেন” তখন ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে  ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বনমালী ভাবছে ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। কারণ রবীন্দ্রনাথ গান গাইছেন, এ সময় বিরক্ত হবেন কি না কে জানে। গুরুদেব বনমালীর দিকে তাকিয়ে গাইলেন, “হে মাধবী, দ্বিধা কেন”


বনমালী আইসক্রিমের প্লেট গুরুদেবের সামনে রেখে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ পরক্ষণেই বললেন, “বনমালীকে যদিও মাধবী বলা চলে না। তবে তার দ্বিধা মাধবীর মতোই ছিল। আর আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে দ্বিধা করা মোটেই ভালো নয়।“



শেষ করি, বাঙালির সনাতনী আবহমানকাল ধরে চলে আসা খাদ্য তালিকার সর্বশেষ সদস্য পান দিয়ে, কবিগুরু ছিলেন পানের ভক্ত। মশলাদার মিষ্টি পান ছিলো তাঁর পছন্দের,দুপুরের খাবার পর তিনি  প্রায়শই পান খেতেন, তাঁর নাতজামাই তাঁকে একটি  পানদানি উপহার দিয়েছিলেন, যা আজও ঠকুরবাড়িতে রাখা রয়েছে আছে।


( সমাপ্ত )

19 views0 comments
bottom of page