top of page
Search

বিশেষ সংখ্যা ।। ভয় ভৌতিকে ।। চুনীলাল দেবনাথ


ভূতের ওঝা

চুনীলাল দেবনাথ



গ্রামের যেই মেয়েটা মুখ ফুটে কারও সাথে কথা বলে না , সেই মেয়েটা এখন যাকে তাকে দেখলেই থুথু দিচ্ছে, নখ দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে, দাঁত বের করে ভেঙচি দিচ্ছে।আবার রাতবেরাতে রাস্তা ঘাটে , বনে জঙ্গলে যেখানে সেখানে চলে যাচ্ছে। শিপ্রাকে নিয়ে তার বাবা-মা ভীষন চিন্তায় পড়েছে । মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে । এছাড়া দেখতেও বেশ ভালো । একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শিপ্রার বাবা-মা আমার বাড়িতে হাজির। ওর বাবা-মা সম্পর্কে আমার দাদা-বৌদি হয়। আমাকে দেখা মাত্রই বৌদি বললো, " ঠাকুরপো কি করমু কউতো?রাত নাই দিন নাই শিপ্রাডা এনো হেনো যায়গা। মাইনসে উল্টাপাল্ডা কই।" "লোকে কি বলে?" আমি জানতে চাইলাম।

" হেরে নাকি ভূতে ধরছে।" বৌদি বললো।আমি দাদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম," তুমি কি চিন্তা করেছো।" দাদা সঙ্গে সঙ্গে বললো," আমি একটা ভূতের ওঝা ঠিক করছি।" " সে কি!ভূতের ওঝা কেন?" আমি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।দাদা- বৌদির কথা শুনে যা বুঝলাম তাদের বিশ্বাস ওঝা এসে ঝাড়- ফুঁক করলে শিপ্রা ভালো হয়ে যাবে। তাদের ভূতের প্রতি বিশ্বাস দেখে আমি নিরুপায় হয়ে চুপ করে রইলাম । যাই হোক একদিন পরে দেখলাম এক দাড়িওয়ালা ভূতের ওঝা এসে শিপ্রাদের বাড়িতে হাজির।এসবে বিশ্বাস না করলেও এক কৌতূহলী মন নিয়ে আমিও সেখানে হাজির হলাম। পাড়ার অনেকেই তখন সেখানে উপস্থিত। আমি দেখলাম ওঝা বড়ো বড়ো চোখ করে বলছে, "এই বাড়িতে ভূত আছে।" এই কথা শুনে গ্রামের মানুষ ভাবলো- তিনি নিশ্চয়ই ভূতকে চেনেন।নিশ্চয়ই ভূতকে তাড়াতে পারবে।

তার মানে সিনেমা শুরু হওয়ার আগেই ফাটাফাটি ট্রেইলার। এর মধ্যে শিপ্রাকে ধরাধরি করে উঠোনের মাঝখানে একটা চেয়ারে বসানো হলো।চারিদিকে লোকজন উৎসুক মন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওঝার হাতে একটা মুড়ো ঝাঁটা। শিপ্রাকে ভূত মনে করে সে তার দিকে ঝাঁটা উচিয়ে বলছে," এই ভূত আমাক চিনিস? এই দেখেছিস মুড়ো ঝাঁটা? না গেলে এখনই এটা দিয়ে শুরু করে দেবো।" এই বলেই ঝাঁটা দিয়ে শিপ্রার পিঠে কয়েক ঘা বসিয়ে দিলো।বেচারি ভয়ে কিনা জানি না তবে ভূতের স্বরে বললো," হেঁরে আঁমাকে মাঁরবি না।আঁমি ভঁয় পাঁই না। তোঁর মঁন্ডু খাঁবো। " সবাই তখন ভয়ে শিহরিত। টানটান উত্তেজনা।ওঝা তখন চোখ গোল গোল করে বললো, " তুই যাবি কিনা বল ? না কি আবার দেবো।" তখনই শিপ্রার ভূতের কন্ঠ বলতে শুরু করলো , " আঁমাকে মাঁরবি না। আঁমার ব্যঁথা লাঁগে।"


" তুই যাবি?"


"যাঁবো যাঁবো।"


" যাবার আগে বল , তুই কোথা থেকে এসেছিস?"


" ঐ বঁড়ো নিঁম গাঁছটাই থাঁকি।"


রাস্তার পাশে একটা বাগান আছে।সেখানে একটা নিম গাছ আছে। সেই দিকে ইঙ্গিত করে বললো।

"তুই কেন এখানে এসেছিস?"


" আঁমি এঁকে ভাঁলো বাঁসি। এঁকে চাঁই।"


" তুই যাবি কিনা বল?"


" যাঁবো যাঁবো, মাঁরবি না।"


" তুই গেলে কি করে বুঝবো?"


" এঁকটা জুঁতো কাঁমড় দিঁয়ে যাঁবো।"


ভুত গেছে কিনা জানি না। তবে একটা জুতো নিম গাছের গোড়ায় পরের দিন পাওয়া গিয়েছিল। ওঝা ঝাড়- ফুঁকে শিপ্রা কতোটা ভালো হলো জানি না , তবে মুড়ো ঝাঁটার আঘাতে শিপ্রার পিঠে অনেক ক্ষতো চিহ্ন হয়েছিল। দুই দিন পর শিপ্রাকে এক নার্ভের ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার বাবু তাকে কিছু ওষুধ প্রেশক্রাইব করেছিল। পরে শিপ্রা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছিল।

37 views0 comments
bottom of page