top of page
Search

বিশেষ সংখ্যা ।। ভয় ভৌতিকে ।। তনুশ্রী গিরি


অদ্ভুত শব্দ


তনুশ্রী গিরি






              টানা পাঁচ ঘণ্টা PPE পরে ডিউটি করার পর, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে দুচোখ ঘুমে প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল। এমন সময় ট্রেনের সাইরেন বেজে উঠলো। ছুট্টে গিয়ে লেডিস কামরায় বসলাম। তারপরই শুরু হল প্রকৃতির তাণ্ডব। ঝড়, বৃষ্টি সব যেন আজই হতে হল। ট্রেনে উঠেই দেখি দুজন মহিলা ছাতা খুলে বসে আছে।আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। মণে মনে ভাবলাম,,,, ট্রেনের ভেতরে বসে আছে নাকি বাইরে!!  দুজন আরপিএফ কর্মীর মধ্যে একজন একটা মরচে পড়া  জানালার শাটার অনেক কষ্টে নামালো। দেখছি, উনি এদিক ওদিক ইতস্তত করছেন। ভাবলাম, ওনার কাছে হয়তো স্যানিটাইজার নেই, তাই ওরকম করছেন। একবার মনে হল আমারটা দিই,,, না থাক বাবা, যেচে দেবো না, চাইলে দিতাম এই ভেবে যেই সোজা হয়ে বসলাম,,,, ওমা, দেখি ট্রেনের উপর থেকে জল এসে পড়ছে আমার মাথায়। এবার বুঝলাম, কেন ঐ দুজন মহিলা ছাতা খুলেছিল। অগত্যা আমিও ওদের অনুসরণ করলাম।



              যাইহোক, কোনরকমে ট্রেন গন্তব্যস্থানে আসতে তাড়াহুড়ো করে নামলাম। সামনে একটা রিক্সা দেখে উঠে পড়লাম। রাস্তা শুনশান, বৃষ্টি হয়ে আরও ফাঁকা হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরলাম যখন, রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। ফ্রেশ হয়ে ডিনার নিয়ে বসেছি আর সামনে ফোনে চলছে আমার প্রিয় সিরিয়াল 'ওগো নিরুপমা'। এমন সময় খেয়াল হল আর খানিকটা বিরক্তি চোখে মুখে ফুটে উঠল।


                বিষয়টি নিয়ে ভাবতে ভাবতে একবার বাইরের দিকে তাকাই, একবার পাশের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে তাকাই, আবার পাশের গাছের দিকে তাকাই, আর নিচে রাস্তার দিকে তাকাই। কিন্তু কিছুতেই কিছু আর দেখতে পাই না। এ জিনিস না দেখারই কথা মনে মনে ভাবলাম। কারণ এটা দেখার মত কিছু নয়। এ হল শব্দ। কেউ যেন দুটো তারকে একসাথে জড়িয়ে দিয়েছে,,, আর তারা প্রচণ্ড অস্থিরতার সাথে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।



               শব্দটি বেশ কয়েকদিন হল শুনতে পাই। কিন্ত এর কারণ , অকারন কিছুই ধরতে পারি না। ঠিকমত খাওয়া হল না শব্দের কথা ভেবে। আগের দিনই বোন মৃত্তিকাকে সঙ্গে এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তদন্ত করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহের তালিকায় যেগুলো ছিলো যেমন ফ্যানের থেকে হতে পারে, পাশের ফ্ল্যাটের কোন ছেলে শিস দিতে পারে, আবার গাছে বসা নতুন পাখির থেকেও হতে পারে। আমিও বেশ মন দিয়ে তালিকাগুলি ফলো করছিলাম। নাহ্ তাও না। নতুন মিস্ত্রি ডেকে ফ্যান সারালাম। পাশের ফ্ল্যাটের দিকে নিয়মিত তাকিয়ে থাকতাম, আর গাছ তো দেখাই যেত। কোন নতুন পাখি তো আসে নি। তাহলে??



            ঐ বিদঘুটে শব্দের জন্য আগের দুদিন ঘুম হয় নি ভালো করে।  আজ যদি শব্দটা হয় না! এর শেষ দেখে ছাড়বো,,, এই ভেবে কোনরকমে খাওয়া শেষ করে ঘুমানোর জন্য রেডি হচ্ছি, কারণ পরের দিনই আবার মর্নিং ডিউটি, অতএব তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। ঘড়িতে তখন রাত ১১.৩০ বাজে। সবে চোখ বন্ধ করেছি, অমনি শুরু হয়ে গেল চিং.…........................, চি.................ঙ। ধুর, ভাল লাগে না। মাথাকে এক মুহূর্তের জন্য রেস্ট নিতে দিচ্ছে না। খানিক পরে  শব্দটি হাওয়া। ওহ্, বাবা, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এখন একটু ঘুমোতে পারবো,, যেই ভাবা সেই কাজ। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। একটু পরেই ঐ শব্দ চি,,,,,,,,,ঙ। এবারে এতটাই রাগ হয়ে গেল আমার সটাং উঠে রীতিমত দৌড়তে লাগলাম কোথা থেকে আসছে ওটা জানার জন্য। কিন্ত হায়! বৃথাই ছোটাছুটি। এসে বিছানায় এক লাফে শুয়ে পড়লাম। এবার মনস্থির করলাম যে আর যাই শব্দ আসুক না কেন কিছুতেই মণ দেওয়া যাবে না। আমি আমার মত থাকবো। মনকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে দুকান চেপে পড়ে রইলাম। এমনি ভাবে যখন ঘুম ধরেছিল, ততক্ষনে ৩ ঘণ্টা পার ।



          ঠিক সকাল ৫ টায় অ্যালার্ম বেজে উঠলো। চোখ আর খুলতে পারি না। কিন্তু বেরোতে হবে ভেবে কোনরকমে উঠলাম। ডিউটি চলাকালীন বার কয়েক মনে হল রাতের ঘটনা। ঘুম ভালো না হওয়ার দরুন ঝিমুনি আসছিল। যাইহোক, এইভাবে চললে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে ভেবে মণ খারাপ হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে রুমে ঢোকার সিড়িতে উঠতে যাবো,,,, এমন সময় জেঠিমা বলল ''তনুশ্রী,,, তুমি কি সিড়ির বাল্বে হাত দিয়েছিলে?"


আমি বললাম 'কই না তো', 'ওটার সুইচ নেই ভেবে জ্বালানোর চেষ্টা করিনি'। জেঠিমা বলল "না, মানে ঘরের সবাইকেই জিজ্ঞেস করলাম কেউ হাত দেয় নি বলছে, অথচ ওটা সিড়িতে পড়ে আছে কিন্তু ভাঙ্গে নি'!! আমি অবাক হয়ে বললাম এত উপর থেকে পড়েও কিছু হল না!! মনে মনে ভাবলাম ভৌতিক ব্যাপার নাকি! আর আশ্চর্যের বিষয় হল সেই রাতে আর শব্দ শোনা যায় নি। তারপর থেকে একবারে নিঃশব্দ রাত। বেশ ঘুমোতে পারি।

40 views0 comments
bottom of page