top of page
Search

রবি স্মরণে সৌভিক রাজ


ভোজনবিলাসী, রবি ঠাকুর

সৌভিক রাজ


(পর্ব - ১)


রবীন্দ্রনাথ আমদের প্রিয় কবিগুরু, তাঁকে নিয়ে আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। লেখক রবীন্দ্রনাথ আমাদের পরিচিত হলেও তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক আজও অনেকের কাছেই অজানা। রবীন্দ্রনাথের এমনই এক দিক হল তাঁর খাদ্যপ্রীতি !


রবীন্দ্রনাথ খেতে খুব ভালবাসতেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত খাবারের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। এই প্রসঙ্গে কবির, জনপ্রিয় কয়েকটি পঙতি ঊল্লেখ করা যেতে পারে; যেখানে তিনি প্রাতরাশের বিভিন্ন খাদ্য সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।


‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতেই কদলী দলি।


সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতেই হাপুস-হুপুস শব্দ।


চারিদিক নিঃশব্দ। পিঁপড়ে কান্দিয়া যায় পাতে’।



কবিগুরু সারাদিনে বেশ কয়েকবার খেতেন। তিনি ভোরবেলায় খুব তাড়াতাড়ি উঠে পরতেন, এক কাপ চা অথবা কফি খেতেন আর তার নিমের শরবত খাওয়াতো লোকের মুখে মুখে ঘোরে l দিনের শুরু হতো ওই নিমের শরবত দিয়েই!


তিনি প্রাতঃরাশে ভেজা বাদাম,মধু সহযোগে টোস্ট এবং এক কাপ দুধ। আবার মাঝে মাঝে তার ছোটবেলার প্রিয় খাবার সন্দেস,কলা,দুধে ফেলে মেখে খেতেন। সকাল দশটা নাগাদ তিনি লেবুর রস খেতেন, এবং মধ্যাহ্ন ভোজনে রবীন্দ্রনাথ ভাত খেতেন,  খুব অল্প পরিমাণে l বিকেলে কবির জন্য বরাদ্দ ছিল মুড়ি ও চা। কবির রাতের খাবারে থাকত সব্জির স্যুপ, লুচি ও তরকারী। রবীন্দ্রনাথ দুপুরের খাবার পরিবারের সকলের সঙ্গে ঘরের মেঝেতে বসে খেতেন কিন্তু রাতের বেলায় তিনি খেতেন ডায়নিং টেবিলে বসে।আমিষ ও নিরামিষ সব ধরনের খাবারই রবীন্দ্রনাথের পছন্দের খাবারের তালিকায় ছিল। দেশী বিদেশী সব খাবারই ছিল তার কাছে সমাদৃত, তার প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল ব্রিটিশ পদ, আপেল দিয়ে রান্না খাসীর মাংস, তুর্কী কাবাব l


 তিনি বিদেশে গিয়ে যে  খাবার খেতেন,সেগুলির রান্না পদ্ধতি জেনে এসে ঠাকুর বাড়ির রান্না ঘরে সেগুলি রান্না  করার অনুরোধ করতেন। বাড়ির মেয়েরা রান্না নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালাতেন, নতুন নতুন খাবারের পদ তৈরিতে তারা সব সময় ব্যস্ত থাকতেন।রবীন্দ্র নাথের স্ত্রীর মৃণালিনীদেবীর একটি আলাদা রান্নাঘর ছিলো,তাঁর রান্না খাতার কথাও বেশ জনপ্রিয় ! অতি সাধারণ উপাদান যেমন পটল ও আলুর খোসা দিয়েও সুস্বাদু পদ তৈরি করতেন। 


মাত্র ১২ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার তার বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। তারপর বহু দেশ ঘুরেছেন। আর প্রতিটি দেশের ভালো লাগা খাবারগুলো সময়-সুযোগমতো ঠাকুরবাড়ির হেঁসেলে চালু করে দিতেন কবি। যেমন ইউরোপের কন্টিনেন্টাল ডিশের একটি ফ্রুট স্যালাড ঠাকুরবাড়িতে চালু করেছিলেন তিনি।রবীন্দ্রনাথের একটি স্বাভাব ছিল তিনি দেশে বিদেশে যেখানেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতেন সেখানকার মেনুকার্ড তিনি সংগ্রহ করতেন এবং এই ঘটনা থেকেই রবীন্দ্রনাথের খাদ্যপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়।



বাঙালি খাবারের মধ্যে, কৈ মাছের পদ,চিতল মাছের পেটি ভাজা,  ভাপা ইলিশ, ফুলকপি দিয়ে তৈরি নানান পদ ছিল রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয়।  মিষ্টির মধ্যে পায়েস, চন্দ্রপুলি, ক্ষীর, নারকেল দিয়ে তৈরি মিষ্টি, দই এর মালপোয়া, চিঁড়ের পুলি,মানকচুর জিলিপি,রাঙা আলুরপান্তুয়া, আমসত্ত্ব ইত্যাদি খেতে খুব ভালবাসতেন তিনি। তবে পায়েস ও পিঠে পুলির প্রতি কবির বিশেষ আকর্ষণ ছিল l


রবীন্দ্রনাথের ফলের প্রতিও তীব্র অনুরাগ ছিল।  দুপুরের খাওয়ার আগে তিনি নিয়মিত ফল খেতেন যেমন পাকা পেপে, কলা, বাতাবি লেবু ,আম l   আম ছিল রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয় ফল। কবি আম কেটে খেতে পছন্দ করতেন না তিনি আম চুষে খেতেন l কবি কাঁচা আম খেতেও খুব ভালবাসতেন। আচারও ছিলো  তাঁর পছন্দের তালিকায়, কাদম্বরী দেবী কবিকে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁচা আম এনে দিতেন।আম আর রবিঠাকুরের  অনুরাগ নিয়ে একটি কিংবদন্তি কাহিনী রয়েছে, টমি ওয়াডা নামে  এক জাপানী ভদ্র মহিলার আমন্ত্রণে দ্বিতীয়বার কবি জাপানে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকেন, কিন্তু সেটি আমের সময় ছিল  l   রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমের ভক্ত ফলে পাকা আমেরপ্রীতি তার জাপান যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়। অবশেষে ঠিক হয়  বরফ বাক্সে করে আমও কবির সাথে জাপান  পাড়ি দেবে l


(ক্রমশ...)

11 views0 comments
bottom of page