top of page
Search

২৩শে এপ্রিল সংখ্যা ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সমীরণ সরকার


যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডার

সমীরণ সরকার

(৯ ম পর্ব )

বেনিয়া ইংরেজদের সহায়তায় প্রতাপ নারায়ণ ব্যবসা করে শুধু প্রভূত ধনীই হলেন না, জমিদার হয়ে বসলেন। ধীরে তার ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ বাড়তে লাগল। সুষ্ঠুভাবে এই জমিদারি চালানোর জন্য প্রচুর লোকজনের প্রয়োজন হল তাঁর।

একদা ফাঁকায় নিরিবিলিতে বসবাস করবেন বলে প্রতাপ নারায়ণ বাঁকুড়া থেকে দূরে বসতবাড়ি বানালেও খুব শিগগিরই তাকে মত বদলাতে হয়েছিল ।।



বাড়ির গৃহস্থালী কাজের প্রয়োজনে এবং জমিদারি চালানোর কাজে যেসব লোকজনকে তিনি কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন ,সেই সমস্ত কর্মচারীদের বাড়ি দূরবর্তী গ্রামে হওয়ার জন্য এবং তখনকার দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে তাদের যাতায়াতে মাঝে মাঝে নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে লাগলো । আর সেই কারণে প্রতাপ নারায়ণ একটা গ্রামের পতন করলেন। গ্রামের নাম দিলেন কমলাপুর ।

এই কমলাপুর গ্রামের গ্রামবাসীদের তথা নিজের কর্মচারীদের সুবিধার্থে একটা বিরাট দিঘী খনন করালেন প্রতাপ নারায়ণ । কমলাপুর গ্রাম আর প্রতাপ নারায়ণের বাড়ির মধ্যে থাকল ওই বৃহৎ জলাশয়।বাইশ বিঘার ওই জলাশয় টির নাম দিলেন কমলা সাগর । কমলা ছিল প্রতাপ নারায়ণের মায়ের নাম।

এরপর কয়েক পুরুষ কেটে গেছে।

চৌধুরী পরিবার অনেক উত্থান পতনের সম্মুখীন হয়েছে। ওই পরিবারের বর্তমান পুরুষ মানবেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাবা কনক নারায়ণ চৌধুরী রাজনীতি করতেন।

১৯২৫ সালের জুলাই মাসে মহাত্মা গান্ধী একবার বাঁকুড়ায় এসেছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য। কনক নারায়ন তখন অনেক অর্থ দান করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। এর পিছনে যিনি ছিলেন যিনি 'বাঁকুড়ার গান্ধী' নামে পরিচিত

গোবিন্দ প্রসাদ সিংহ।

বাঁকুড়া জেলার জঙ্গল ঘেরা ব্লক গঙ্গাজলঘাটি। অথচ এই এলাকা থেকে এক সময় সারা বাঁকুড়া জেলার স্বদেশী আন্দোলন পরিচালিত হত। রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-- সবাই এসেছেন এখানে। আর যার জন্য এসেছিলেন, তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ অনুপ্রাণিত এবং সারদা মায়ের কাছে দীক্ষিত গোবিন্দ প্রসাদ সিংহ। গোবিন্দপ্রসাদ সিংহ যেমন আধ্যাত্মিক চরিত্র ছিলেন অন্যদিকে ছিলেন দেশপ্রেমী মুখ।

গান্ধীজীর জাতীয় শিক্ষা পরিকল্পনায দেশে সরকারি সাহায্য বর্জন করে একের পর এক জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে সে সময়। গোবিন্দপ্রসাদ বাবু তখন গঙ্গাজলঘাটি এম ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি তার স্কুলটিকে জাতীয় বিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সমস্ত সরকারি সাহায্য বন্ধ হয় গেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন স্কুলের দিকে। সেই সময় গঙ্গাপ্রসাদ বাবুর জাতীয় স্কুলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কনক নারায়ণ। গোবিন্দপ্রসাদ বাবুর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি । গোবিন্দপ্রসাদ বাবুর মতোই কনক নারায়ণ ও জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন।

দেশ স্বাধীনতা লাভ করার পরে দেশে কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হল। গোবিন্দপ্রসাদ বাবুর মত আদর্শবাদী লোকেরা ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা না নিলেও কনক নারায়ন সেই রাস্তায় হাঁটলেন না। তিনি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে পা রাখলেন। প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ডিস্ট্রিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন তিনি, পরবর্তীকালে রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কনক নারায়ণের রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের লালসা ছিল ঠিকই, কিন্তু কোন রকম অর্থনৈতিক লাভের বাসনা তাঁ,র ছিল না। বরঞ্চ তিনি সারা জীবন অনেক দান ধ্যান করেছেন। সেই হিসেবে কনক নারায়ণের সুখ্যাতি ছিল এবং বাঁকুড়া জেলার মানুষ তাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করত।

মানবেন্দ্র নারায়ণ তার বাবা কনক নারায়ণের মত আদর্শবাদী ছিলেন না। তিনিও লেখাপড়া শেষ করে বাবার দলের রাজনীতিতে যোগদান করেছিলেন । তবে তা কখনোই স্থানীয় রাজনীতির গণ্ডির বাইরে যায়নি। বরঞ্চ তিনি বাবার পরিচিতি কাজে লাগিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে লাইসেন্স বের করে একের পর এক ছোট থেকে মাঝারি শিল্প গড়ে তোলেন এবং নানা রকম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।

কনক নারায়ণ পুত্রের এই সমস্ত কাজে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য তো করেননি, উপরন্ত পুত্রের উপরে খুব বিরক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে ধুর্ত ও কৌশলী মানবেন্দ্র নারায়ণ কে থামানো যায়নি। এই সমস্ত কারণে কনক নারায়ণ খুব মনকষ্টে ভুগতেন। মাত্র ৬২ বছর বয়সে মারা যান কনক নারায়ণ। পিতার বিশাল সম্পত্তির মালিক হন মানবেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী।

চৌধুরী ভিলার সংস্কার করান তিনি।

কমলাপুর গ্রাম এতদিনে আকার এবং জনবসতি দুই দিক দিয়েই বেশ বড় হয়ে উঠেছে।


(চলবে)



8 views0 comments
bottom of page